বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে নজিরবিহীন বন্যা মোকাবিলা এবং ত্রাণ তৎপরতায় সহায়তা করতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছে প্রতিবেশী দেশ ভারত।
রোববার (১৯ জুন) নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ পরামর্শক কমিশনের সপ্তম বৈঠকে এ কথা জানান ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস. জয়শঙ্কর।
বৈঠকে জয়শঙ্কর বলেন, বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে যে নজিরবিহীন বন্যা হয়েছে, তাতে বন্যার্তদের প্রতি আমাদের সমর্থন ও সংহতি জানাই। আমরা উত্তর-পূর্বেও বন্যা হচ্ছে। আমরা এখন একটি পরবর্তী সময়ের জন্য বন্যা ব্যবস্থাপনা তথ্য শেয়ার করছি। বন্যা মোকাবিলা ও ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনায় আমরা কোনো সুনির্দিষ্ট উপায়ে আপনাদের সহায়তা করতে পারলে খুব খুশি হব।
জয়শঙ্কর ও মোমেন শেষবার গুয়াহাটির রেডিসন ব্লুতে চলতি বছর ‘এশিয়ান কোনফ্লুয়েন্স রিভার কনক্লেভ-২০২২’ শিরোনামে নদী সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে সাক্ষাৎ করেছিলেন।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের মধ্যে ঘন ঘন বৈঠক হচ্ছে, যা আমাদের দুই দেশের অনন্য বন্ধুত্বকে নির্দেশ করে। অবশ্যই আমাদের সম্পর্কের ৫০তম বছর উদযাপন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
তিনি বলেন, আপনাদের ৫০তম বিজয় দিবস এবং ৫০তম জাতীয় দিবসে আমাদের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী উভয়েই বাংলাদেশ সফর করছেন। আমরা বিশ্বব্যাপী ১৮টি শহরে ‘মৈত্রী দিবস’ উদযাপন করেছি, যা নয়াদিল্লি ও ঢাকার বাইরে খুবই অনন্য ছিল।
জয়শঙ্কর বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে।
উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্কের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে জয়শঙ্কর বলেন, আজ বাংলাদেশ আমাদের বৃহত্তম উন্নয়ন অংশীদার। দেশটি এই অঞ্চলে আমাদের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। এ ছাড়া বিদেশে আমাদের সবচেয়ে বড় ভিসা অপারেশন বাংলাদেশে। এটি সত্যিই আমাদের সহযোগিতার প্রতিটি ক্ষেত্রকে তুলে ধরে। আমরা পর্যায়ক্রমে এশিয়ায় আপনাদের বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য। এই বছর আপনাদের রপ্তানি দ্বিগুণ হয়ে ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হওয়ায় আমি আনন্দিত।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও উল্লেখ করেন, কীভাবে উভয় দেশ মহামারির বিরুদ্ধে একত্রে লড়াই করছে। তিনি বলেন, আমরা সম্মিলিতভাবে মহামারি কাটিয়ে উঠি। আমরা একে অন্যকে ভ্যাকসিন সহযোগিতা, অক্সিজেন সরবরাহ, মেডিকেল অক্সিজেন প্ল্যান্ট কিংবা জীবন রক্ষাকারী ওষুধ সরবরাহ করেছি। কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে আমাদের যৌথ লড়াই ছিল অনুকরণীয়।
উভয় দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ৫৪টি নদী এবং যৌথ পরিবেশগত দায়িত্বের ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
জয়শঙ্কর বলেন, আমদের ৫৪টি নদী অভিন্ন। এই নদীগুলোর ব্যাপক ব্যবস্থাপনা এবং তাদের সংরক্ষণ এবং আমাদের বিশেষ করে সুন্দরবনে যৌথ পরিবেশগত দায়িত্ব রয়েছে। এগুলো সত্যিই এমন ক্ষেত্র যেগুলোতে জলবায়ু প্রতি আমাদের অঙ্গীকারের অংশ হিসেবে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
এদিকে, ভারত-বাংলাদেশ জেসিসি বৈঠকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেন, উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্ক পারস্পরিক বিশ্বাসের ভিত্তিতে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন ভারতকে ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী’ বলে অভিহিত করেন।
মোমেন বলেন, ভারত বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী। উভয় দেশের উদ্যোগ আমাদের সমগ্র অঞ্চলে স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন অর্জনে সহায়তা করেছে। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক পারস্পরিক বিশ্বাস ও সম্মানের ভিত্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে।