বাংলাদেশে বড় এলাকাজুড়ে পূর্ণ লকডাউন আরোপ করা প্রয়োজন বলে মনে করছে সরকারের কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটি। এই পরামর্শ এমন সময় দেয়া হলো যখন করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়ানো ঠেকাতে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন মাত্রায় ‘লকডাউন’ আরোপ করার মতো পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণরে উদ্দেশ্যে ২৬শে মার্চ থেকে ৩০শে মে পর্যন্ত ৬৬ দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। কিন্তু তারপরও জুন মাসে সংক্রমণ ক্রমাগত উর্ধ্বমুখী হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ঝুঁকির মাত্রার হিসেবে এলাকাভিত্তিক লকডাউনের পরিকল্পনার কথা জানানো হয়।
ঐ পরিকল্পনা অনুযায়ী পরীক্ষামূলকভাবে মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে ঢাকার পূর্ব রাজাবাজার এলাকাকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করে পূর্ণ লকডাউন আরোপ করা হয়।
তবে পরামর্শক কমিটির বক্তব্য, সংক্রমণ বাড়তে থাকায় এলাকাভিত্তিক লকডাউন এখন আর কার্যকর হবে না, বরং পুরো শহর অথবা বড় এলাকাজুড়ে লকডাউন করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও পরামর্শক কমিটির সদস্য এএসএম আলমগীর বিবিসি বাংলাকে বলেন, পূর্ব রাজাবাজারে ঢোকা বের হওয়ার ৮টা রাস্তা আছে, তাই এই এলাকাকে লকডাউন করা সম্ভব হয়েছে।
“কিন্তু বড় এলাকাগুলোতে এ ধরণের এলাকাভিত্তিক লকডাউন কার্যকর করা কঠিন। তাই বড় এলাকাজুড়ে পূর্ণ লকডাউনের সুপারিশ করেছি আমরা।”
কী সুবিধা হবে লকডাউন দেয়া হলে?
এএসএম আলমগীর জানান, পূর্ণমাত্রায় লকডাউন দেয়া হলে বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সুবিধা পাওয়া সম্ভব।
মার্চের মাঝামাঝি মাদারীপুর জেলার শিবচরের লকডাউনের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, “শিবচর লকডাউনকে বাংলাদেশের জন্য লকডাউনের আদর্শ উদাহরণ হিসেবে বিবেচনা করা যায়। পূর্ণ লকডাউন দিলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে শিবচরের মত সাফল্য পাওয়া সম্ভব।”
শিবচরে লকডাউন দেয়ার পর সেখানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ শতভাগ সফল ছিল বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এছাড়া লকডাউন দেয়া হলে কন্ট্যাক্ট ট্রেসিংয়ের কাজটি অনেক সহজ হয়ে যাবে বলেও মনে করেন এএসএম আলমগীর।
“পূর্ণ লকডাউন কার্যকর হলে যেহেতু গণপরিবহন চলবে না, দোকানপাট বন্ধ থাকবে এবং মানুষজন ঘরে থাকবে – তাই মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রিত হয়ে আসবে এবং আমরা সহজেই জানতে পারবো তারা (আক্রান্তরা) কার সাথে মেলামেশা করছেন।”
“তখন সহজে আমরা কন্ট্যাক্ট ট্রেসিংয়ের কাজ করতে পারবো, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখাও তখন অনেক সহজ হয়ে যাবে,” বলছিলেন এই বিজ্ঞানী।
এএসএম আলমগীর বলেন, কোনো একটি এলাকা বা শহর লকডাউন করলে কমপক্ষে দুই সপ্তাহ থেকে তিন সপ্তাহ পর্যন্ত তা অবরুদ্ধ করে রাখা হবে।
বাংলাদেশে গত ২৬শে মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার পর বেশ কয়েকদফা ছুটির মেয়াদ বাড়ায় কর্তৃপক্ষ। ছুটির মধ্যে বন্ধ ছিল শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত এবং অধিকাংশ দোকানপাট।
গণপরিবহন চলাচলে ও জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞাও ছিল।
তবে সেই ছুটির সময় নিয়মকানুন মানার ব্যাপারে খুব একটা সচেতনতা দেখা যায়নি সাধারণ মানুষের মধ্যে।
তবে ছুটির মধ্যে একপর্যায়ে গার্মেন্টস কারখানাগুলো খুলে দেয়া হয়, যার ফলে সাধারণ ছুটির শুরুতে নিজেদের বাড়িতে ফিরে যাওয়া বহু মানুষ কর্মস্থলে ফিরে আসে।
এরপর ঈদুল ফিতরের সময় আবার লক্ষ লক্ষ মানুষ গ্রামে ও শহরে যাওয়া আসা করে।
বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করেন, ওই সময় ‘লকডাউন’ শব্দটি ব্যবহার না করে একে ‘সাধারণ ছুটি’ হিসেবে উল্লেখ করা ভুল ছিল। আর মানুষকে কঠোরভাবে ঘরে রাখার চেষ্টা না করে ছুটি দেয়ার কারণে সরকারের পদক্ষেপটি শেষ পর্যন্ত সংক্রমণ ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে।
এ কারণেই এখনকার এলাকাভিত্তিক লকডাউনের পরিকল্পনা কতটা সফল হবে, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের অনেকের সন্দেহ রয়েছে।