ফরিদপুর প্রতিনিধি: ফরিদপুরে স্বামী লিটন চন্দ্র কর নামে এক প্রতারকের বিরুদ্ধে মোটা অংকের যৌতুক নিয়েও নানাভাবে গৃহবধূর উপরে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। কথায় আছে ” শ্বশুর বাড়ী মধুর হাঁড়ি – প্রবাদটি আমাদের সমাজে যুগ যুগ ধরে প্রচলিত আছে।
কিন্তু অনেক জামাই এ মধুর হাঁড়িকে অন্যভাবে ব্যবহার করতে চান এবং করেও থাকেন। এ নিয়ে পারিবারিক জীবনে নেমে আসে নানা জটিলতা ও অশান্তি। কখনো তা গড়ায় মামলা মোকদ্দমা পর্যন্ত। যৌতুক সংক্রান্ত যত অপরাধের ঘটনা ঘটে, তা এই মধুর হাঁড়ি নিয়েই। শ্বশুরবাড়ির কোন কিছুর উপর দাবি করার আইনত অধিকার জামাতার নেই। অথচ ফরিদপুরে এক প্রতারক স্বামী মোটা অংকের যৌতুক নিয়েও গৃহবধূর উপরে বিভিন্ন ভাবে নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রায় ৮ বছর অতিবাহিত দাম্পত্য জীবন গৃহবধূ শিখা রানী ভৌমিক। মোটা মাপের যৌতুক নিয়েও ক্ষান্ত হয়নি প্রতারক স্বামী লিটন চন্দ্র কর (৩৫)। প্রতারক স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। ব্যাক্তি স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ভাবে বিবাহের আগে পরে তালবাহানা করে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের নিকট থেকে যৌতুক আদায় করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ সুত্রে জানা যায় ফরিদপুর সদরের কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের হাট গোবিন্দপুর এলাকার মৃত নিরঞ্জন ভৌমিকের কণ্যা শিখা রানী ভৌমিক গত ৮ বছর আগে শহরের লক্ষিপুর পালপাড়া এলাকায় গনেশ চন্দ্র করের পুত্র লিটন চন্দ্র করের সাথে ২০১৩ সালে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। প্রতারক লিটন চন্দ্র কর বিবাহের আগে ১০ ভরি স্বর্নের গহনা আসবাবপত্র সহ নগদ ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার যৌতুক হাতিয়ে নেয়। বিবাহের তিন মাস পরে ২৭’ ইঞ্চি টিসিএল কালার টেলিভিশন, স্টিলের আলমারি বাবদ ১৯ হাজার টাকা ও ফ্রিজ বাবদ ৩২ হাজার টকা নেয়। বিবাহের ৫-৬ মাস পর বাড়ী করার কথা বলে শ্বশুর বাড়ির জমি বিক্রি করে ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা নিয়ে নেন এই প্রতারক স্বামী লিটন। এরপরে শ্বশুর জমিজমার হিসাব বুঝে নিতে চায় স্বামী লিটন। হিসাব বুঝে না দেওযায় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন।
এবার শুধু যৌতুকের চাপ নয় গৃহবধূর উপরে নেমে আসে কালো মেঘের অন্ধকার। স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও ননদ মিলে তাকে অমানবিক নির্যাতন করা হয়। বিবাহের পর একটপর্যায়ে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্যের কথা ভুলে অন্যায় অত্যাচার নিরবে মুখ বুজে সহ্য করে আসছে গৃহ বধু। তার অত্যাচারের মাত্রা দিন দিন বেরে যাওয়ায় স্বামী লিটন চন্দ্র কর বাবার বাড়ীতে রেখে আসে। এর পরে আমার কোন খোজখবর নিতে আসে নাই। নির্দয়ামুলক আচরন করার পরেও তিনি বিভিন্ন ভাবে ভাড়াটিয়া লোকজনের মাধ্যমে প্রাণনাশের হুমকি দেয় এবং বলেন, বিবাহটি বিচ্ছেদ হয়ে যেতে।
পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে গৃহবধূ শিখা রানী ভৌমিক আইনের আশ্রয় নেয়। যৌতুক নিরোধ আইন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে শিখা রানী ভৌমিক বাদী হয়ে মামলা দায়ের করে। যাহার মামলা নং- বিজ্ঞ ও নারী শিশু আতদালত ৪২/২০২০। যে মামলা চলমান রয়েছে। এই মামলায় লিটন চন্দ্র কর জামিনে থাকা অবস্থায় মামলা তুলে নিতে হুমকি প্রদান করে। এলাকা সুত্রে জানা যায়, সদর উপজেলা ধীন কৃষ্ণনগর ইউনিয়ন নিবাসী মৃত নিরাঞ্জন ভৌমিক এর ৩ কণ্যা ১ স্ত্রী রেখে মৃত্যু বরণ করেন। কনিষ্ঠ কন্যা শিখা রানী ভৌমিক নিরাঞ্জনের কোন পুত্র সন্তান না থাকায়, বড় ২ জামাই লিটন চন্দ্র করের সাথে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিবাহ দেন। এ বিষয়ে অভিযুক্ত লিটন চন্দ করের প্রতিবেশি সুকদেব পালের সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের অনেক দিন যাবত বিবাহ হয়েছে। বিবাহের পরে পারিবারিক কলহ হচ্ছে। তবে শিখা রানী ভৌমিক স্বামীর বাড়ি ছাড়তে রাজি নয়, সে তার স্বামীর নিকট থাকতে চায়, কিন্তু লিটন তাকে রাখবেনা বলে শুনেছি। এ বিষয়ে একই এলাকার পরান পাল মুখ রাজি না হলেও বলেন, “যদি কেউ খারাপ কাজ না করে তাহলে কি কোর্টে মামলা হয়”। এ ছাড়াও একাধীক প্রতিবেশির কাছে বিষয়টি জানতে চাইলেও কেউ মুখ খুলতে রাজি হননি। উক্ত বিষয়ে আনিত সকল অভিযোগ, অভিযুক্ত লিটন ও তার পরিবার অস্বীকার করেন। এমনকি কিছু স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে শিখা বাড়ি থেকে চলে গেছে বলেও দাবি করেন। তাই শিখা রানী ভৌমিক ও তার পরিবার দাবি করে বলেন, সঠিক তদন্ত পুর্বক প্রতারক স্বামী লিটন করের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সদয় হস্তক্ষেপ কামনা করছি।