ফরিদপুর প্রতিনিধি: সরকারি বেতন নির্ধারনের আর্থিক নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ফরিদপুর সিভিল সার্জন অফিসের প্রধান সহকারি সর্দার জালাল উদ্দিন ১৬তম গেডের ক্যাশিয়ার থেকে সরসাসরি পদন্নতি না নিয়ে দুই ধাপ অতিক্রম করে ১৩তম গ্রেডের পদ দখল করে বেতনের অতিরিক্ত টাকা আত্মসাৎ ও নানা অনিয়ম করে চলেছেন। তার বিরুদ্ধে ২০১৬ সালে তদন্ত হলে আনিত অভিযোগ সুস্পষ্টভাবে প্রমানিত হওয়ার পরেও বর্তমানে যোগদানকৃত সময়কাল থেকেই ১৩তম গ্রেডের বেতন নিয়ে প্রধান সহকারি পদে বহাল রয়েছেন।
রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষায় তদন্ত কর্মকর্তার প্রতিবেদন অনুযায়ী এই দূর্নীতিবাজ এর বিরুদ্ধে কোন প্রকার ব্যাবস্থা না নেওয়ায় এ বছরের শুরুতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর ফরিদপুর জেলার স্বাস্থ্য বিভাগে কর্মরত নন-মেডিকেল নিরিহ কর্মচারীগন লিখিত ভাবে অবহিত করেছেন। তদন্তকারি কর্মকর্তার প্রতিবেদন লিপি ও ফরিদপুর শহরের স্থানীয় বাসিন্দা ফারুখ হোসেন এর অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, ১৯৯৪ সালে ১৬ জেলা হাসপাতালকে ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নিতকরন প্রকল্পে বেশ কিছু জনবল নিয়োগ হওয়ার সময় জালাল উদ্দিন ১৬ তম গ্রেডে ভোলা সদর হাসপাতালে ক্যাশিয়ার পদে নিয়োগ পান। পরে ঐ প্রকল্প শেষ হওয়ার পর সরকার অস্থায়ী ভিত্তিতে রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করেন এবং শর্ত থাকে এখানে নিয়মিত হওয়ার পরই রাজস্ব খাতের সুবিধা উপভোগ করতে পারবে। ঐ সময়ই জালাল উদ্দিন ফরিদপুর সদর হাসপাতালে স্থানান্তর হন এবং অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন যায়গা ম্যানেজ করে ফরিদপুর সিভিল সার্জন অফিসে পদন্নতি ব্যাতিতই ১৪তম গ্রেডে ক্যাশিয়ার পদে স্থানন্তর হয়ে সকল সুবিধাধি গ্রহন করেন। একপর্যায়ে উচ্চমান সহকারী সমমর্যাদা সম্পন্ন ১৪তম গ্রেডের ক্যাশিয়ার পদে কর্মরত থাকা অবস্থায় নিজ ক্ষমতাবলে বদলী আদেশ সৃষ্টি করে রাজবাড়ী সিভিল সার্জন অফিসে ১৩তম গ্রেডে স্থানন্তর হন। কিছু দিন পর ঐ একই পদে বদলী হয়ে ফরিদপুর সিভিল সার্জন অফিসে যোগদান করে কর্মরত রয়েছেন।
জানা যায়, তিনি বেতন নির্ধারনের ক্ষেত্রে আর্থিক বিধি বিধান লংঘন করে টাইম স্কেল সমন্বয় না করেই ১৬তম গ্রেডে প্রকল্পে চাকরিরত অবস্থায় নিয়মিতকরণ না করেই ৩টি টাইম স্কেল গ্রহন করেন, যাহা সরকারের রাজস্ব ক্ষতির সামিল। যা অদ্যাবধি গ্রহন করছেন। জালাল উদ্দিন এর নামে পুর্বে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বরাবর বিভিন্ন অভিযোগ ও একাধীক পত্রিকায় প্রমানিত হলেও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, এর রহস্য কোথায়। উল্লেখ্য সামান্য বেতনের একজন কর্মচারি হয়ে শহরের উত্তর আলিপুর ও গুহলক্ষিপুর এ ক্রয় করেছেন কোটি টাকার যায়গা। তার জালজালিয়াতির মাধ্যমে প্রকৃত বেতনের অতিরিক্ত টাকা গ্রহন করায় সরকারের আর্থিক ক্ষতি সাধনসহ দেশের প্রচলিত আইন ও বিধিবিধান ক্ষুন্ন করে চলেছে। এর আগে ২০১৬ সালে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ গুলো সরকারের উচ্চ মহল থেকে মাগুরা জেলার সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ আঃ সালামকে তদন্ত করার নির্দেশ দিলে উক্ত অভিযোগ গুলো সুস্পষ্ট ভাবে প্রমানিত উল্লেখ করে প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্তকারি কর্মকর্তা। তার প্রতিবেদন অনুযায়ি তৎকালীন সময় থেকে আজ অবধী কোন ধরনের ব্যাবস্থা না নেওয়ায় এই ফরিদপুর সিভিল সার্জন অফিসের প্রধান সহকারি সর্দার জালাল উদ্দিন সরকারি নিয়মানুযায়ী নির্ধারিত বেতনের অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে স্বাস্থ্য বিভাগের সুনাম ক্ষুন্ন ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ আতœ্যসাৎ করছে। এমনকি ১৬ তম গ্রেডে চাকরির সময়কাল থেকেই ১৩তম গ্রেডের সকল সুবিধাধি ভোগ করছেন। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশ ও সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাগনদের লিখিত ভাবে অবহিত করলেও সর্দার জালাল উদ্দিন তার নিজস্ব প্রভাব খাটিয়ে উক্ত পদে কর্মরত রয়েছেন।
এ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে নারী কেলেংকারীসহ নিয়োগ বাণিজ্য, স্বেচ্ছাচারিতা, দূর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যাবহারসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে সঠিক তদন্তপুর্বক রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষা ও আইনের সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সর্দার জালাল উদ্দিন এর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহন করে স্বাস্থ্য বিভাগের মর্যাদা ধরে রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সদয় অবগতি কামনা করেছেন ফরিদপুর শহরের স্থানীয় বাসিন্দা ফারুখ হোসেনসহ সচেতন মহল। আনিত অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত ফরিদপুর সিভিল সার্জন অফিসের প্রধান সহকারি সর্দার জালাল উদ্দিন সস্পুর্ন অভিযোগ অস্বীকার করেন। এ ছাড়াও ১৬ তম গ্রেড থেকে ১৩ তম গ্রেড এর পদন্নতির কোন তথ্য উপাত্ত আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি আছে বলে স্বীকার করেন। তবে কোন ধরনের কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। এ বিষয়ে ফরিদপুর সিভিল সার্জন সিদ্দিকুর রহামান জানান, জালাল উদ্দিন যে বেতন গ্রহন করছেনা সেটা সরকার এবং জালাল উদ্দিন এর ব্যাপার। আমরা তার বিরুদ্ধে কোন সুনিদ্দির্ষ্ট অভিযোগ পেলে উর্ধতন কর্মকর্তা বরাবর জানাবো। তবে জালাল উদ্দিন এর নামে একাধীক অভিযোগ এর কথা স্বীকার করেন।