ফরিদপুর প্রতিনিধি: ফরিদপুর সদর উপজেলার ৯ নং কানাইপুর ইউনিয়নের সাহাপাড়া এলাকার মধ্যে মেসার্স বর্ষা অটো রাইস মিল নামে একটি চালকলের শব্দ দূষনে পরিবেশ নষ্ট হওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগি কৃষ্ণ সাহা ও বিপ্লব সাহাসহ এলাকার প্রায় অর্ধশতাধীক অভিযোগ করে বলেন, ২০১৪ সালে কানাইপুর সাহাপাড়া এলাকার বিপ্লব কুমার সাহা পরিবেশ অধিদপ্তরের আইন না মেনে এই ঘনবসতিপূর্ন এলাকায় নিজের ইচ্ছামত বর্ষা অটো রাইস মিল নামক চালের মিল চালু করে। এতে পাশ্ববর্তি প্রায় ৩০-৪০ পরিবারের ১৫০-২০০ মানুষের নিত্য নৈমিত্তিক এই শব্দ দূষনের কাছে জিম্মি থাকতে হচ্ছে। এই মিলটি ২৪ ঘন্টা চালু থাকায় ছোট ছোট কোমলমতি শিশুদের পড়া লেখাসহ বিকট আওয়াজে বিভিন্ন সমস্যায় পরতে হচ্ছে। এছাড়াও মিলে পৌছানোর জন্য যে রাস্তাটি ব্যাবহার করা হয়, সেখানে কোন মালবাহী লড়ি ঢুকলে স্কুলে যাতায়াতের জন্য কোমলমতি বাচ্চারাসহ এলাকাবাসিদের জন্য পুরো রাস্তাটিই চলাচলের জন্য অযোগ্য হয়ে পরে। এছাড়াও অনেক আগে এই মিলে ধান মাড়াই করা হলেও বর্তমানে ধান সেদ্ধ থেকে শুরু করে মাড়ায়ের কাজ ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে। এতে চাল কলের তীব্র শব্দসহ ছাই ও তুষ ছড়িয়ে পরে এবং পচানো পানির গন্ধে বিপাকে পরছে এলাকাবাসি। এ ব্যাপারে ফরিদপুর পরিবেশ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করা হলেও মিলটির ব্যাপারে কোন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়নি বলে জানান স্থানীয় জনতা। এই মিল সংলগ্ন প্রায় ২০০ মানুষের বিভিন্ন ধরনের রোগজিবানু সৃষ্টি হতে পারে বলে ও মনে করছেন এলাকাবাসি। এ ছাড়াও বর্ষা মিলের মালিক বিপ্লব সাহা পুষ্টি চাউলের কন্টাক নিয়ে মেশিনের মাধ্যমে নিয়ম মাফিক মিক্সিং না করে বাজারের কৃষানী এনে তাদের দিয়ে মিক্সং করাচ্ছেন। নিয়ম আছে প্রতি ১০০ কেজি চাউলে ৩০০ গ্রাম পুষ্টি চাউল মেশানো যাবে এবং প্রতি কেজী পুষ্টি চালের মুল্য ৩০০ টাকা নির্ধারন করা হয়। কিন্তু রেশিও অনুযায়ী মেশানোর কথা থাকলেও অধিক মুনাফা লাভের আশায় এই বিপ্লব সাহা বাজার থেকে কৃষান এনে পুষ্টি চাল মেসান তিনি। এ ছাড়াও অম্বিকাপুর গোডাউনের দায়িত্বে থাকা সংরক্ষন ও চলাচল কর্মকর্তা মুশফিক সাহেবের সাথে বিপ্লব কুমার সাহার গভীর সম্পর্ক রয়েছে এবং তাদের দুজনের যোগসাজসে অধিক মুনাফা লাভের আশায়ই এ ধরনের অপকর্ম করে যাচ্ছে বলে এলাকাবাসি জানান। অভিযোগে জানা যায়, ধান, গম, চাল এর প্রতি মৌসুমে সরকারের বেধে দেওয়া মুল্য দিয়ে কৃষকের নিকট থেকে সরকারি এই কর্মকর্তা মুসফিক এর ক্রয় করার থাকলেও তিনি উৎকচের আশায় এই বর্ষা মিলের মালিক বিপ্লব সাহাকে দিয়ে ধান, গম, চাল ক্রয় করে পুনরায় বিপ্লবের নিকট থেকেই ফসল গুলো ক্রয় করে নিচ্ছেন অম্বিকাপুর গোডাউনের সংরক্ষন ও চলাচল কর্মকর্তা মুশফিক সাহেব। অভিযোগে আরো জানা যায়, মাদারীপুর এবং ফরিদপুর সদর উপজেলার খলিলপুর এলাকায় আরো দুটি চালের মিল থেকে আধা ভাংঙ্গা চাউলের সাথে মিশিয়ে রমরমা ব্যবসা পরিচালোন করছেন তিনি।
উল্লেখ্য বর্ষা অটো রাইস মিল নামক প্রতিষ্টানটিকে গত ৫-৮-২০১৪ ইং তারিখে পরিচালক (মনিটরিং এন্ড এএনফোর্সমেন্ট) পরিবেশ অধিদপ্তর, ঢাকা কর্তৃক পরিদর্শন করা হয়। পরিদর্শনে দেখা যায় মিলটির অবস্থানগত ছাড়পত্রের ৪নং শর্ত (যেমন ধান সিদ্ধ ও ছাঁটাই) লঙ্ঘন করে পরিচালিত হচ্ছিল। এই অপরাধে পরিচালক (মনিটরিং এন্ড এএনফোর্সমেন্ট) পরিবেশ অধিদপ্তর, ঢাকা কর্তৃক ২লক্ষ টাকা জরিমানা করে। এ ছাড়াও গত ২৬-৪-২০১৪ তারিখে বর্ষা অটো রাইস মিল পরিবেশ দূষনের কারনে সরেজমিন তদন্ত করা হয়। তখন দেখা যায় প্রতিষ্ঠানটিতে ধান মাড়াইয়ের কর্যক্রম ধারা এলাকায় বায়ু দূষন ঘটছে। এছাড়া এই মিলের কারনে শব্দদূষনের কারনও পরিণত হয়। জানা যায় পরিবেশ অধিদপ্তরে এই মিল মালিক বিপ্লব সাহা মিলের নবায়নের জন্য আবেদন করলে উপরিউক্ত অভিযোগসহ সরকারি বিভিন্ন নিয়ম মেনে ছাড়পত্র প্রদান করলেও ঐমিল মালিক কোন শর্তই পূরন করেনি। এব্যাপারে সরকারি নির্দেশনা না মানার কারনে এলাকাবাসি পুনরায় পরিবেশ অধিদপ্তরকে অবগত করলে তিনি কোন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহন করেনি। এলাকাবাসি অভিযোগ করে বলেন তৎকালীন ডিডি মোটা অংকের টাকা নিয়ে এই মিলটি পরিচালোনা করার জন্য সাময়ীক আদেশ দিয়েছিল। বর্ষা মিল মালিক বিপ্লব সাহার এই অবৈধ কর্মকান্ডের ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের অভিযোগ দায়ের করা হলে, উল্টো ঐ মিল মালিক বিপ্লব সাহা এলাকাবাসির বেশকিছু গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গের নামে মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করে এবং সেই মামলা ও অবৈধ এই মিলের সবকিছু তৎকালিন দাপিয়ে উঠা নেতা সাবেক মন্ত্রির ঘনিষ্ট মোকারম মিয়ার সহযোগিতায় পরিচালিত হয়। যার ফলে মিল মালিকের বিরুদ্ধে কেউ তখন ভয়ে কথা বলতে পারেনি। পরে মোকারম মিয়ার দূর্নীতির বিষয় জনসাধারনের নিকট প্রকাশ পেলে ক্ষমতায় চলে আসে বর্তমান ফরিদপুরের আলোচিত দুই ভাই রুবেল বরকত। তাদের সহযোগিতায় বিপ্লব সাহা ২০১৬ সালে নবায়ন করা থাকলেও পরবর্তিতে দুই ভাইয়ের সহযোগিতায় মিলের কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে। কোন উপায়ন্তর না পেয়ে এই মিলের বিকট শব্দ দূষনের হাত থেকে রক্ষা পেতে এলাকাবাসির পক্ষে বিষ্ণু সাহা গত ৩০-৮-২০১৬ সালে মহামন্য হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করে যার নং, (ৎিরঃ ঢ়বুঃঃরঃরড়হ হড় ৯৮১৪ ড়ভ ২০১৬)। পরে এলাকাবাসির পক্ষে এই রিটের ব্যপারে একটি রুল জারি হয়। কিন্তু মহামান্য হাইকোর্টে রিট এর তোয়াক্কা না করেই আলোচিত দুই ভাইয়ের সহযোগিতায় মিল মালিক বিপ্লব সাহা ব্রয়লার নিয়ে আসে। যাতে এলাকাবাসি আরো বড় ধরনের বিপাকের সম্মুখিন হয়। এদিকে এই মিল মালিক বিপ্লব সাহার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করলে তিনি এলাকার বিভিন্ন গন্য মান্য ব্যাক্তিবর্গকে প্রাণ নাশের হুমকি প্রদান করে। যে ব্যাপারে ঐ লোকজন সাধারন ডায়েরী দায়ের করেছেন। ভুক্তভোগি কৃষ্ণ সাহা ও বিপ্লব সাহাসহ অন্যান্যরা আরো জানান, এই মিল মালিক সবার অগোচরে মিলের ভিতরে বসে খারাপ নারীসহ মাদক নিয়ে রাতভর আসরে মেতে থাকে। তাই দ্রুত এই বর্ষা মিল মালিক বিপ্লবের লাইসেন্স বাতিল করে এলাকাকে দূষন মুক্ত করতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ ও সহযোগিতা কামনা করছেন এলাকার পক্ষে অভিযোগকারি কৃষ্ণ সাহা, বিপ্লব সাহা, আলম বিশ্বাস, অরুন দাস, মনোতষ সাহা, গুপি ঘোষ, কিরণ দাস, শিমুল চক্রবর্তি, সুকুমার ভৌমিক, নারায়ন মিত্র, শান্তি রানী দাস, সুশান্ত রানী ঘোষ, আলহাজ্ব রকিব উদ্দিন বিশ্বাস, জাহাঙ্গির বিশ্বাস, শাজাহান বিশ্বাসসহ মিল সংলগ্ন প্রায় ৩০ টি ভুক্তভোগী পরিবার। এ বিষয়ে অভিযুক্ত ফরিদপুর শহরের অম্বিকাপুর গোডাউনের দায়িত্বে থাকা সংরক্ষন ও চলাচল কর্মকর্তা মুশফিক সাহেবের মুঠোফোনে বারবার ফোন দিলে তিনি ফোনটি ধরেননি। অভিযোগের বিষয়ে মেসার্স বর্ষা অটো রাইস মিল মালিক বিপ্লব কুমার সাহার সাথে কথা হলে তিনি জানান একজন প্রতিপক্ষের সাথে কোর্টে রিট থাকার কারনে বর্ষা অটো রাইস মিলের নামে কোন ছারপত্র হয়নি। অন্যান্য অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি উত্তর দিতে বাধ্য নয় বলে সাব জানিয়ে দেন।