খোলাবাজারে ডলারের দাম বেশি, আর ব্যাংকিং চ্যানেলের মূল্য কম হওয়ায় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেছেন, ‘শ্রমিকরা গরিব মানুষ। তাদের কিভাবে বলব, তুমি ত্যাগ স্বীকার করো। বৈধ চ্যানেলে টাকা পাঠাও? এটা সম্ভব না।’ গতকাল রবিবার রাতে রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে তৃতীয় গ্লোবাল বিজনেস সামিটে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে বক্তারা অভিযোগ করেন, দেশে প্রবাস আয়ের ৬০ শতাংশ আসে হুন্ডির মাধ্যমে।
দেশে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স পাঠানো প্রবাসীদের সংগঠন এনআরবি সিআইপি অ্যাসোসিয়েশন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, ‘আজকে হয়তো ১১৭ টাকা ৫০ পয়সা ডলারের দাম ছিল। সরকারের বেঁধে দেওয়া দাম ১১০ টাকা।
সাড়ে ৭ টাকার পার্থক্য। এটা কি কাভার করা সম্ভব? আপনারা (সিআইপি) দেশকে যাঁরা ভালোবাসেন তাঁরা বৈধভাবে ডলার পাঠান। আপনারা শ্রমিকদের চেয়ে অনেক ভালো অবস্থায় আছেন। যাঁদের আয় অনেক কম।
সত্যি কথা বলতে আমি আপনাদের একবার বলতে পারি যে ঠিক আছে, আপনারা দেশের জন্য একটু স্যাক্রিফাইস করে ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু শ্রমিকদের একবারও বলতে রাজি না। ওরা কেন স্যাক্রিফাইস করবে? ডলারের রেট কেন ১১০ টাকা দরে নেবে? আমি মনে করি এটা অন্যায্য, ওদেরও তো স্ত্রী-সন্তান আছে। অর্থ মন্ত্রণালয় বা বাংলাদেশ ব্যাংককে এ ব্যাপারে নীতিমালা তৈরি করতে হবে।’ মন্ত্রী বলেন, ‘প্রবাসীরা আগে যত ইচ্ছা বন্ড কিনতে পারতেন। কিন্তু এটা পরে সরকার সীমা বেঁধে দিল। তখন আন্তর্জাতিক বাজারে সুদের হার অনেক বেশি ছিল। এখন সেই সুদের হার কম। এখন আমাদের ডলার সংকট আছে। তাই এখন সীমা ধরে রাখার কোনো প্রয়োজন নেই।’ অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘প্রবাসীদের আয় ও রেমিট্যান্স আমাদের অর্থনীতির জন্য বিশাল শক্তি। এর অগ্রগামী সৈনিক আপনারা।’
এনআরবি সিআইপি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইয়াছিন চৌধুরী বিমান ভাড়া সহনীয় করা, পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনের নামে হয়রানি বন্ধ করা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবাসী ছেলেমেয়েদের কোটা বরাদ্দ রাখা, আয়কর সহজ করাসহ বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘৪০ শতাংশ টাকা আসে বৈধভাবে, আর বাকি ৬০ শতাংশ টাকা হুন্ডির মাধ্যমে দেশে আসে। বিদেশের দূতাবাসগুলো জানে কারা হুন্ডির ব্যবসা করেন। তাহলে তাঁদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয় না?’
প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে এনআরবি সিআইপি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ মাহতাবুর রহমান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়ন করব। সবাই আমাদের (প্রবাসী) কথা বোঝেন, কিন্তু মন্ত্রণালয়ের কিছু কর্মকর্তা আছেন তাঁরা প্যাঁচ লাগান। তাঁদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। এটা করা গেলে প্রবাসীদের জটিলতা দূর হবে।’
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিন, সিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান রেজাউল কায়সার টিটো প্রমুখ।