ব্যক্তিগত সহকারীর (পিএ) চাকরি করতে না চাওয়ায় রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন অমি এক কলেজছাত্রকে রাতভর আটকে রেখে নির্যাতন করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পরে ৫০ হাজার টাকা চুরির স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করা হয়েছে ওই ছাত্রকে। তার এই স্বীকারোক্তি ভিডিও ধারণ করে রাখা হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
গত শুক্রবার রাতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের শহিদ মুক্তিযোদ্ধা কাজী নুরুন্নবী হোস্টেলে এ ঘটনা ঘটে। এই হোস্টেলেই থাকেন ছাত্রলীগ নেতা জাকির হোসেন অমি। নির্যাতনের শিকার কলেজছাত্রের নাম মিলন হোসেন (১৯)। জেলার পুঠিয়া উপজেলার শিবপুরহাটে তার বাড়ি। বাবার নাম আলমগীর। মিলন এইচএসসি পরীক্ষার্থী।
নির্যাতনের শিকার হয়ে রোববার থেকে মিলন পুঠিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। তার বাবা আলমগীর এ ঘটনায় মঙ্গলবার সকালে পুঠিয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।
পুঠিয়া থানার ওসি মো. সোহরাওয়ার্দী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, তদন্ত করে এ ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
আলমগীর জানান, রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অমির পিএ হিসেবে চাকরি দেওয়ার কথা বলে গত বৃহস্পতিবার তার ছেলে মিলনকে কাজী নুরুন্নবী হোস্টেলে নিয়ে যান পুঠিয়ার ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। রাতে ওই হোস্টেলে মদ্যপান ও উচ্ছৃঙ্খল পরিবেশ দেখে মিলন সকালে বাড়ি ফিরে যান। জানিয়ে দেন, তিনি চাকরি করবেন না।
কিন্তু যারা মিলনকে নিয়ে যান, তাদের বারবার ফোন করতে থাকেন ছাত্রলীগ নেতা অমি। শুক্রবার রাতে আবার মিলনকে ওই হোস্টেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে একটি কক্ষে ঢুকিয়ে অমি বলেন, মিলন হোস্টেল থেকে ৫০ হাজার টাকা চুরি করে নিয়ে গেছে। এই টাকা দিতে হবে। এ সময় মিলন টাকা চুরির অভিযোগ অস্বীকার করে। তখন অমিসহ ১০-১২ জন মিলনকে ঘুসি মারতে থাকেন। পেটানো হয় ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে।
রাতভর এমন নির্যাতন চলতে থাকে। একপর্যায়ে বালিশের নিচ থেকে অস্ত্র বের করে মিলনকে দেখানো হয়। তারপরও মিলন টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে বেল্ট খুলে তার গলায় পেঁচানো হয়।
অমি তাকে ভয় দেখিয়ে বলেন, তোকে মেরে ফেললে কেউ দেখবে না। প্রাণে বাঁচতে চাইলে টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার কর। প্রাণ বাঁচাতে মিলন স্বীকারোক্তি দেয়। তখন তার কথা ভিডিও করা হয়।
এরপর ভোর ৪টার দিকে মিলনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। অমি তাকে ভয় দেখিয়ে বলেন, কেউ জিজ্ঞেস করলে বলবে- মোটরসাইকেল থেকে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছি। শনিবার সকালে মিলন বাড়িতে গিয়ে সে কথাই জানায়। তবে শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়ে গেলে পরদিন সে পরিবারের সদস্যদের নির্যাতনের কথা জানান। এরপরই তাকে পুঠিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। মিলনের বাবা এ ঘটনার সঠিক তদন্ত দাবি করেন। বিচার চান নির্যাতনকারীদেরও।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন অমি বলেন, চাকরি-বাকরি না। তাকে আনা হয়েছিল যে সে আমার সঙ্গে থাকবে। কাজ করবে। রাতে ছিল। সকালে আমরা ঘুম থেকে ওঠার আগেই ও চলে গেছে। বালিশের নিচে এক ফ্রেন্ডের ৫০ হাজার টাকা ছিল। ওটা নিয়ে চলে যায়। তাই তাকে ডেকে আনা হয়। ছোট-ভাইয়েরা ছিল, চড়-থাপ্পড় দিয়েছে। তাকে বলা হয়েছে, এসব আর করো না ভাইয়া। ছোট ভাইকে বড় ভাই হিসেবে যেভাবে শাসন করা হয়, সেটাই করা হয়েছে।