
বাড়ির উঠোনে পানি, ঘরের ভিতরে পানি। গ্রামীণ মেঠোপথ, কৃষিজমি পানিতে তলিয়ে আছে। এক কথায় জোয়ারের পানিতে ভাসছে পুরো গ্রাম। এমন দুরবস্থার মধ্যে সম্পন্ন হল কলাপাড়া উপজেলার লালুয়া ইউনিয়নের কলাউপাড়া গ্রামে একটি বিয়ের ‘গায়ে হলুদের’ অনুষ্ঠান। পানির মধ্যে ওই ‘গায়ে হলুদের’ অনুষ্ঠান নিয়ে রীতিমতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তোলপাড় চলছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লালুয়া ইউনিয়ন শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন ফকির গত মাসের ২৯ জুলাই বিয়ে করেন। তার শ্বশুরবাড়ি রাঙ্গাবালী উপজেলার বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নের গাববুনিয়া গ্রামে। গত ২০ আগস্ট তিনি নববধূকে নিজ বাড়িতে তুলে আনেন। ২২ আগস্ট দুপুরে জোয়ারের পানির মধ্যে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান করা হয়। জোয়ারের পানিতে চারদিক যখন থৈ থৈ করছে, তখন তাঁর বাড়ির উঠোনে চেয়ার পেতে বর-কনেকে হলুদ দেয়া হয়। এতে আত্মীয়স্বজনরা অংশ নেন।
জোয়ারের পানির মধ্যে ব্যতিক্রমী গায়ে হলুদ দেয়ার আয়োজনকে সবার কাছে আকৃষ্ট করেছে। এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিল পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য পাস করা শিক্ষার্থী মো. ইব্রাহিম খলিল। তার মন্তব্য ছিল- আমাদের সুখ-শান্তি কিছুই নাই। একটি জনপদ সব সময় পানিতে ডুবে থাকে, আর তা নিয়ে কারও মাথা ব্যথা নেই। এটা হতে পারে? জীবনকে তো থামিয়ে রাখা যাবে না। জীবন চলবেই। যার কারণে এরকম একটি আয়োজন করতে হয়েছে। এটা সুখের সঙ্গে কষ্টের চিত্র বহন করে।
মহিউদ্দিনের বাবা আবদুল বারেক ফকির বলেন, ‘কী করমু কন? ঘরে পানি, বাইরে পানি। নাইম্যা কোথাও যে যামু হেই পরিস্থিতি নাই। বাধ্য হইয়াই বাড়ির উডানে হলুদের আয়োজন করতে হইছে। তয় মনডায় শান্তি পায় নাই। আত্মীয়স্বজন কাউকেই দাওয়াত করতে পারি নাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘গ্রামের মানুষ রান্না কইরা খাইবে, হেই পরিস্থিতিডা পর্যন্ত নাই। গ্রামের মানুষ বর্ষার পানি ধইরা রাইখ্যা, কোনো কোনো সময় দূরে গোনে পানি আইন্যা রান্নার কাজ করে। একটা কষ্টের জীবন আমরা পার করছি।’
কলাপাড়া উপজেলার লালুয়া ইউনিয়নের মানুষের সুরক্ষার জন্য বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ না থাকায় এখানকার ১২-১৩টি গ্রাম পানিতে তলিয়ে রয়েছে। প্রতিদিন দুই দফা জোয়ারের পানিতে গ্রামের মানুষ প্লাবিত হচ্ছেন।