বগুড়ার এক ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্যকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় আবদুল লতিফ শেখ নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। মুন্সীগঞ্জ থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাব বলছে, গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর বগুড়ার ধুনট উপজেলার মথুরাপুর এলাকার একটি ইটভাটার পাশের নির্জন স্থানে ওই ইউপি সদস্যকে নিয়ে যান আবদুল লতিফ শেখ। তাঁদের দুজনের মধ্যে সখ্য ছিল আগে থেকেই। সেখানে তাঁরা একান্তে সময় কাটানোর জন্য যান। একপর্যায়ে লতিফ ওই নারীকে ধর্ষণ করেন। পরে এ ঘটনা যেন কেউ জানতে না পারে, সেজন্য ওই নারীকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর পালিয়ে যান লতিফ।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আজ শুক্রবার দুপুরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানান।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর বগুড়ার একটি ইউপির সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য নিখোঁজ হন। পরে ২২ সেপ্টেম্বর উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের কুড়িগাঁতী গ্রামের একটি ইটভাটার পাশে গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় তাঁর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনায় ভুক্তভোগীর ভাই বাদী হয়ে গত ২৩ সেপ্টেম্বর ধুনট থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করে একটি মামলা করেন।
র্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের প্রায় সাত মাস আগে ইউনিয়ন পরিষদে কম্বল বিতরণের একটি অনুষ্ঠানে ভুক্তভোগী নারীর সঙ্গে আবদুল লতিফের পরিচয় হয়। পরে ওই নারীর সঙ্গে আবদুল লতিফ ঘনিষ্ঠতার চেষ্টা চালান। এ সময় তাঁরা ইউনিয়নসহ আশপাশের এলাকায় বিভিন্ন সময় সাক্ষাৎ করেন। গত ১৮ সেপ্টেম্বর লতিফ কৌশলে ওই নারীকে ধুনটের মথুরাপুর এলাকার একটি ইটভাটার পাশে নির্জন স্থানে নিয়ে আলাপচারিতার মধ্যেই পানীয়র সঙ্গে চেতনানাশক খাইয়ে ধর্ষণের চেষ্টা চালান। এ সময় ওই নারী তাঁকে বাধা দেন। একপর্যায়ে লতিফ তাঁকে ধর্ষণ করেন।’
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ওই নারী ধর্ষণের বিষয়টি পরিবার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানিয়ে দিলে লতিফ কারাভোগ করতে পারেন, এ আশঙ্কা তাঁর মধ্যে তৈরি হয়। ফলে, ভুক্তভোগীর গলায় ওড়না পেঁচিয়ে তাঁকে শ্বাসরোধে হত্যার পর মরদেহ একটি ইটভাটার পাশে রেখে পালিয়ে যান। নিজেকে সন্দেহের বাইরে রাখতে তিনি কৌশলে মরদেহটি উদ্ধারের কাজে স্থানীয়দের সহায়তা করেন এবং দাফনকাজে অংশ নেন। এ ছাড়া ভুক্তভোগী নারীর পরিবারের সঙ্গে সু-সম্পর্ক বজায় রাখেন। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার ভয়ে তিনি নিজ এলাকা ত্যাগ করে প্রথমে ছদ্মবেশী শ্রমিক হিসেবে নোয়াখালীতে কিছুদিন কাজ করেন এবং পরবর্তী সময়ে মুন্সীগঞ্জে আত্মগোপনে যান।
খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘গ্রেপ্তার লতিফ ছোটবেলা থেকে ফার্নিচার তৈরির কাজ করতেন। পরে তিনি নিজের বাড়িতেই কর্মচারী রেখে ফার্নিচার তৈরি করে তা বিক্রি করতেন। লতিফের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালে বগুড়ায় একটি ধর্ষণের মামলা রয়েছে এবং বর্ণিত মামলায় তিনি সাত মাস কারাভোগ করেন। ওই নারী ইউপি সদস্যের সঙ্গেও তাঁর বেশ ভালো সম্পর্ক ছিল। তাঁরা একাধিকবার দেখাও করেছেন। সর্বশেষ একান্তে সময় কাটাতে তাঁরা দুজন ইটভাটার নির্জন স্থানে যান। এরই মধ্যে লতিফের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।’