তিমির বনিক, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার ফুলতলা ইউনিয়নের ভারত সীমান্তবর্তী জুড়ী নদীর এক কিলোমিটার অংশে প্রায়ই ভেসে উঠছে মরা মাছ। এলাকাবাসীর অভিযোগ প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে নদীর উজানে বিষ ঢেলে মাছ শিকার করছে এক শ্রেনীর অসাধু চক্র। আর সেই মাছ বিক্রি করা হচ্ছে বিভিন্ন হাট বাজারে। জুড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী ইউনিয়ন হচ্ছে ফুলতলা। ভারতের এিপুরা রাজ্য থেকে বয়ে আসা জুড়ী নদীটি হাকালুকি হাওরের সাথে মিলিত হয়েছে। প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে এক শ্রেনীর অসাধু মৎস্য শিকারি বিষ প্রয়োগ করে মাছ শিকার করে আসছে।
উক্ত চক্রের সাথে ফুলতলা ও সাগরনালের অনেক শিকারী রয়েছে। যারা বিষ প্রয়োগের পাশাপাশি ইলেকট্রিক শক দিয়ে মাছ শিকার করে আসছে। সম্প্রতি ইলেকট্রিক শক দিয়ে মাছ শিকার করতে গিয়ে পূর্ব বটলী গ্রামের খালিক মিয়ার ছেলে সেলিম মিয়া (২২) বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে মারা যান।
সরেজমিন ঘুরে তথ্যনুসারে জানা গেছে, আমিনুল ইসলাম, রুমেল আহমদ, সুন্দর আলীসহ স্থানীয়রদের থেকে জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে জুড়ী নদীর জিরো সীমা রেখায় বিষ করা হচ্ছে। ফলে নদীর এক কিলোমিটার অংশে মরা মাছ ভেসে উঠছে। প্রতিদিন রাতে বিষ দেওয়ার পর শিকারীরা উৎপেতে বসে থাকে। বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পুটি, টেংরা, টাকি, ইছা, বৈচা, দারকিনা, বাইন, কৈ, মাগুর, শিং, শোল, বোয়াল, আইড়সহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ পানির উপর ভেসে ওঠতে থাকে। রাতেই শিকারীরা অধিকাংশ মাছ ধরে বিভিন্ন বাজারে পাঠিয়ে দেয়। ভোর হলে শিকারি ও নদী পাড়ে বসবাসরত বাসিন্দারা পানির উপরে আধমরা হয়ে ভেসে উঠা এসব মাছে ধরতে থাকে। বিষক্রিয়ার পানি হাকালুকি হাওরের বিভিন্ন বিলগুলোতে গিয়ে মিশে মাছের প্রজনন ক্ষেত্রগুলো নষ্ট করে দিচ্ছে। পরিবেশবাদীরা বলছেন, প্রায় প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমের সময়টাতে নদীতে মরা মাছ ভেসে ওঠার বড় কারণ বিষ প্রয়োগ। এই অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন স্থানীয় প্রশাসন।
ফুলতলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল আলীম সেলু বলেন, জুড়ী নদীর জিরো সীমান্ত রেখায় বিষ প্রয়োগের অভিযোগ পেয়েছেন। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে মাইকিং করে স্থানীয় জনসাধারণকে সচেতন করাসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জুড়ী উপজেলা মৎস্য অফিসার মোঃ মনিরুল ইসলাম বলেন, জুড়ী নদীর জিরো সীমা রেখায় বিষ প্রয়োগের বিষয়টি তিনি জানেন না। খবর নিয়ে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে, বিজিবি ৫২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল মুহিব্বুল ইসলাম খাঁন বলেন, জুুড়ী নদীর জিরো সীমান্ত এলাকায় যেন কোন দুষ্কৃতিকারী বিষ ঢেলে অবৈধ উপায়ে মাছ শিকার করতে না পারে বিজিবির পক্ষ থেকে নজরদারি বাড়ানো হবে। স্থানীয় পরিবেশবাদীরা বলছেন যদি এই দুষ্কৃতকারীদের এমন হেয়োমন্যতা কাজে এখনি বন্ধ করা না যায়, তাহলে পরিবেশের জন্য আরও হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়বে,যা সমাজ তথা দেশের জন্য হুমকিস্বরূপ।