বাংলাদেশে লালমনিরহাট জেলার পুলিশ জানিয়েছে, পাটগ্রাম এলাকায় শত শত মানুষ একজন ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার পর তার মৃতদেহ আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, এক মসজিদে আছরের নামাজের পর ঐ ব্যক্তি ধর্মের অবমাননা করেছেন, এমন গুজব ছড়িয়ে পড়লে শত শত মানুষ জড়ো হয়ে তাকে পিটিয়ে হত্যা করে।
এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
শত শত মানুষ জড়ো হয়ে পিটিয়ে ঐ ব্যক্তিকে হত্যা করে তার মৃতদেহে আগুন দেয়ার ঘটনাটি ঘটেছে পাটগ্রামের বুড়িমারি ইউনিয়নে।
পিটিয়ে একজনকে হত্যা এবং রক্তাক্ত একটি মৃতদেহ আগুন দিয়ে পোড়ানোর ভিডিও ইতোমধ্যে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
লালমনিরহাট জেলার পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানা বলছেন, “যতটুকু শুনেছি দু’জন লোক মসজিদে হোন্ডা (মোটরসাইকেল) নিয়ে নামাজ পড়তে এসেছিল। আসরের নামাজ। তো নামাজ পড়া শেষে, যে কোনো কারণেই হোক তাদের সঙ্গে মসজিদে যারা ছিল, তাদের সাথে কথা কাটাকাটি হয়। ওনারা নাকি একটা শেলফে পা দিয়েছিলেন। তো সেটা নিয়ে কেউ বলছেন কোরআন শরীফের ওপর পা পড়েছে- এরকম একটা গুজব হয়তো ছড়িয়ে পড়েছে।”
পুলিশ সুপার আরও বলেন, “তখন অনেক লোকজন জড়ো হয়ে যায়। সেসময় পুলিশ আসে। এর মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদের একজন মেম্বার তাকে নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের একটা রুমের মধ্যে আটকে রাখে। পরে পুলিশ আসলে হ্যান্ডওভার করবে এরকম। পুলিশ আসার মধ্যেই অনেক লোক জড়ো হয়ে ইউনিয়ন পরিষদের গ্রিল ভেঙে বিভিন্ন দিক দিয়ে লোকজন ঢোকে।
”দুজন ছিল। তাদের একজনকে জোর করে নিয়ে যায়। ওসি একজনকে রেসকিউ করে সরিয়েছে। আরেকজনকে তারা ওইখানে পিটিয়ে মেরেছে। লাশটা তারা নিয়ে গেছে এবং আগুন দিয়েছে,” বলেন পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানা।
তিনি আরও জানান, সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন।
যে ব্যক্তিকে সেখানে হত্যা করা হয়েছে, তার পরিচয় সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু তারা এখনও জানতে পারেন নি।
তবে সেই ব্যক্তির সাথে থাকা একজন, পুলিশ যাকে রক্ষা করতে পেরেছে, তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
তৌহিদুন্নবী বলে এক ব্যক্তি বনিজেকে নিহতের ভাই বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, তার ভাইকে পিটিয়ে হত্যার খবর তারা প্রথমে লোকমুখে শুনেছেন। তারা বিস্তারিত জানতে পারেননি। তবে ঘটনাটি তাদের হতবাক করেছে।
তিনি জানিয়েছেন, তাদের বাড়ি রংপুরে, কিন্তু তার ভাই কীভাবে লালমনিরহাটের পাটগ্রামে গিয়েছে, সেটা তাদের কাছে বোধগম্য নয়। এই খবরে তাদের পুরো পরিবার বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বলে তিনি বলেছেন।
তিনি বলেছেন, “আমরাও তো শুনছি। আমরা কনফার্ম না। আমরাতো কিছুই জানি না। আমরা অন্ধকারে আছি। এতটুকু শুনছি যে ও নাকি বুড়িমারি গেছে ওখানে নাকি লোকজন ওকে গণধোলাই দিছে। দিয়ে নাকি পিটায়ে মেরে ফেলছে। এই খবরটা পাইছি। ও রংপুর ক্যান্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের টিচার ছিল। একবছর আগে চাকরি থেকে অব্যাহতি পাইছে। মানসিক একটু অ্যাবনরমালিটি হয়ছিল। খুব যে সিভিয়ার তা না। এমনি একটু মানসিক বিপর্যস্ত ছিল এই আরকি। কারো সাথে কোনো রকম ঝামেলা ছিল না,” জানিয়েছেন তৌহিদুন্নবী।
পাটগ্রাম থেকে একজন স্থানীয় সাংবাদিক জানিয়েছেন, সেখানে পরিস্থিতি এখনও থমথমে রয়েছে।