অনলাইন ডেস্কঃ নতুন যুগে প্রবেশ করলো বাংলাদেশের বিচার বিভাগ। দেশের উচ্চ আদালত হাইকোর্টে শুরু হলো অনলাইনে বিচার কার্যক্রম। আজ সোমবার অনলাইনে আইনজীবীদের বিভিন্ন আবেদন করার মধ্য দিয়ে ভার্চুয়াল আদালত চালু হয়ে গেলো।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ফুলকোর্ট সভায় সুপ্রিম কোর্টসহ সারাদেশে ভার্চুয়াল আদালত চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরদিনই হাইকোর্টে কার্যক্রম শুরু হলো। রবিবার ফুলকোর্টসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওইদিনই ভার্চুয়াল আদালত পরিচালনার জন্য আপিল বিভাগ, হাইকোর্ট বিভাগ এবং অধস্তন আদালত জন্য আলাদা আলাদা ‘প্র্যাকটিস নির্দেশনা’ এবং আইনজীবীদের জন্য ‘ভার্চুয়াল কোর্টরুম ম্যানুয়াল’ প্রকাশ করা হয়।
এই নির্দেশনা মেনেই আজ সকালে দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার সম্পাদক আবুল আসাদের জামিনের আবেদন দাখিল করার অনুমতি চেয়ে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিমের বেঞ্চে আবেদন করেছেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. শিশির মনির। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, জামিনের আবেদন দাখিল করার জন্য আদালতের কাছে অনুমতি চাওয়া হয়েছে। অনলাইনে এই অনুমতি চাওয়া হয়েছে। আমরা আদালতের অনুমতির অপেক্ষায় আছি। আদালত অনুমতি দিলেই জামিনের আবেদন দাখিল করা হবে। এরপর আদালত শুনানির জন্য সময় নির্ধারণ করবেন।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের প্রেক্ষাপটে ঘোষিত সাধারণ ছুটির কারণে নিয়মিত আদালত বন্ধ থাকায় ভার্চুয়াল আদালত চালু করতে রাষ্ট্রপতিকে অধ্যাদেশ জারির জন্য অনুরোধ জানিয়ে আবেদন করা করা হয় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে। আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এই আবেদন পাবার পর রাষ্ট্রপতির নির্দেশনার আলোকে আইন মন্ত্রণালয় ৯ মে ভার্চুয়াল উপস্থিতিকে স্বশরীরে উপস্থিতি হিসেবে গণ্য করে আদালতে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ, ২০২০ নামে গেজেট প্রকাশ করে। এই অধ্যাদেশের ক্ষমতাবলে ভার্চুয়াল উপস্থিতি নিশ্চিত করার মাধ্যমে আদালতকে মামলার বিচার, বিচারিক অনুসন্ধান, দরখাস্ত বা আপিল শুনানি, সাক্ষ্যগ্রহণ, যুক্তিতর্ক গ্রহণ, আদেশ বা রায় দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়।
এই অধ্যাদেশ জারি পর সুপ্রিম কোর্টের বিচার কাজ পরিচালনার জন্য ভার্চুয়াল ব্যবস্থা হাইকোর্ট রুলস-এ অন্তর্ভূক্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপরই আপিল বিভাগে বিচার কাজ পরিচালনার জন্য বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান এবং হাইকোর্টে বিচার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ গঠন করেন প্রধান বিচারপতি। পাশাপাশি সারাদেশে নিম্ন আদালত গুলোতে শুধুমাত্র জামিনের আবেদন শুনানি করার নির্দেশনা জারি করা হয়।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের বেঞ্চে অতি জরুরি সকল প্রকার রিট ও দেওয়ানী মোশন এবং তৎসংক্রান্ত আবেদনপত্র, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেনের বেঞ্চে অতি জরুরী সকল ধরণের ফৌজদারী মোশন ও তৎসংক্রান্ত জামিনের আবেদনপত্র এবং বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের বেঞ্চে আদীম অধিক্ষেত্রাধীন জরুরি বিষয়; যেমন-সম্পত্তি, বিয়ে, কম্পানিসহ উল্লেখিত বিষয়ের আপিল ও আবেদন গ্রহণ ও শুনানি করা যাবে।
উল্লেখ্য, করোনা বাইরাসের সংক্রমণের প্রেক্ষাপটে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির সঙ্গে তালমিলিয়ে গত ২৬ মার্চ থেকে সারাদেশে আদালতে সাধারণ ছুটি ঘোষনা করা হয়। ক্রমেই সাধারণ ছুটির মেয়াদ বাড়ছে। আপাতত আগামী ১৬ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি রয়েছে।