কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, দেশে খাদ্যের কোনো সংকট নেই, একটি মানুষও না খেয়ে নেই। অথচ বিএনপির একদল নেতা সারা দিন শুধু টেলিভিশনে ও পত্রপত্রিকায় খাদ্য সংকটের কোরাস গেয়ে চলেছে, যা শুনলে মনে হয় দেশে দুর্ভিক্ষ চলছে, মানুষ না খেয়ে মারা যাচ্ছে। কিছু বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজও এ কোরাসের সঙ্গে সুর মিলিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) সকালে মানিকগঞ্জের সিংগাইর ও ঘিওর উপজেলায় ব্রি-ধান ৮৯ ও ৯২ এর বীজ উৎপাদন মাঠ পরিদর্শনকালে কৃষিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
কোরাস গাওয়ার আগে বিএনপি ও সুশীল সমাজকে ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের দিকে ফিরে তাকাতে আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান যখন ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিল, প্রতিদিনই মানুষ না খেয়ে থেকেছে। প্রতি বছর খাদ্যদ্রব্য সংকটে শত শত মানুষ না খেয়ে মারা গেছে। সে সময়ের পত্রপত্রিকার পাতা উল্টালেই দেখা মিলত, খাদ্যের জন্য হাহাকার আর অনাহারে মৃত্যুর খবর। অন্যদিকে গত ১৩ বছরে আওয়ামী লীগের আমলে একজন মানুষও না খেয়ে মারা যায়নি।
চালের উৎপাদন বাড়াতে উচ্চ ফলনশীল ব্রি-ধান ৮৯ ও ব্রি ৯২ দ্রুত সম্প্রসারণের কাজ চলছে জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, এ দুটি বোরো জাতের ধানের উৎপাদন প্রতি শতাংশে প্রায় এক মণ। এটিকে দ্রুত মাঠে নিয়ে যেতে চাই। সে জন্য এসব জাতের বীজ উৎপাদনের জন্য এবার কৃষকদের বিনামূল্যে বীজ দেওয়া হয়েছে।
সারাদেশে এটি জনপ্রিয় করতে প্রয়োজনে কৃষকদের আরও প্রণোদনা দেওয়া হবে বলে জানান আবদুর রাজ্জাক।
কৃষিজমি রক্ষায় সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, একদিকে করোনা মহামারি, অন্যদিকে যুদ্ধের কারণে ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে গম আসছে না। ইতোমধ্যে বিশ্বের অনেক দেশেই দুর্ভিক্ষের হাতছানি দেখা যাচ্ছে। সে জন্য কৃষি উৎপাদনে আমাদের স্বয়ংসম্পূর্ণ থাকতে হবে। কাজেই কৃষিজমি রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সবার। কৃষিজমি রক্ষার যে আইন হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিসহ সবাই মিলে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। শিল্পায়নও করতে হবে, আবার কৃষিজমিও রক্ষা করতে হবে। এ দুটির মধ্যে ভারসাম্য আনতে হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানিয়েছে, এ বছর ধান বীজ উৎপাদনের জন্য মানিকগঞ্জের ১৬টি স্পটে ১ হাজার ৪৪ বিঘা জমিতে ব্রি-ধান ৮৯ ও ৯২ এর আবাদ হয়েছে। ৮১৪ জন কৃষক এ বীজ ধান চাষ করেছেন। কৃষকদের নানাভাবে প্রণোদনা ও পরামর্শ দিয়ে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছে ৫ হাজার কেজি বীজ। সমলয় পদ্ধতির আদলে একসঙ্গে ধান রোপণ করা হয়েছে, একই সময়ে হার্ভেস্টারের মাধ্যমে ধান কাটাও হবে।
এবিষয়ে মানিকগঞ্জের উপপরিচালক এনায়েত উল্লাহ জানান, এ বছর জেলার এক হাজার ৪৪ বিঘা জমি থেকে প্রায় এক হাজার টন ব্রি-ধান ৮৯ ও ৯২ ধান বীজ উৎপাদন হবে, যা দিয়ে আগামী বছর ৪০ হাজার হেক্টর বা এক লাখ একর জমিতে ব্রি-ধান ৮৯ ও ৯২ চাষ করা যাবে। তাতে ৫০ হাজার টন বাড়তি ধান উৎপাদন করা সম্ভব হবে।
পরিদর্শনকালে কৃষিসচিব মো. সায়েদুল ইসলাম, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক বেনজীর আলম, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) মহাপরিচালক মো. শাহজাহান কবীর, মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক মুহা. আবদুল লতিফ, পুলিশ সুপার গোলাম আজাদ খান, কৃষি সম্প্রসারণের উপপরিচালক এনায়েত উল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।