জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যভান্ডার এবং জাতীয় পরিচয়পত্র সেবাসংক্রান্ত ওয়েবসাইট বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ। এ সার্ভার থেকে ১৭১টি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তথ্য যাচাইসংক্রান্ত সেবা নিচ্ছে। যা প্রতিনিয়ত ব্যবহার করছে আর্থিক খাতের সবচেয়ে বড় ব্যাংক সেক্টর।
মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) থেকে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যভান্ডার ও জাতীয় পরিচয়পত্র সেবাসংক্রান্ত ওয়েবসাইটও বন্ধ রাখা হয়েছে। যা বুধবার (১৬ আগস্ট) বিকেল ৫টা পর্যন্ত বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে ইসি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, সোমবার অফিস সময় শেষ হওয়ার পরই তথ্যভান্ডারের সার্ভার বন্ধ রাখার জন্য মহাপরিচালক নির্দেশনা দিয়েছেন। ওই নির্দেশনার আলোকে সেটি বন্ধ রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে অনলাইনে জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা পাওয়ার ওয়েবসাইটও ডাউন করে দেওয়া হয়েছে। যেন সেখানে কেউ প্রবেশ করতে না পারেন।
এতে ১৭১টি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানই নয়, বিপাকে পড়েছেন ইসির মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারাও।
এরপরেই ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) শাখা অফিসগুলোতে সেবা নিতে আসা গ্রাহকরা। এদের অনেকের ড্রাইভিং লাইসেন্সের ছবি ও পরিচয় শনাক্ত করা যাচ্ছে না।
ভোগান্তিতে রয়েছে মোবাইল সিমের গ্রাহকরা। যারা তাদের সিম হারিয়ে ফেলেছেন অথবা নষ্ট হওয়ার কারণে রিপ্লেসের প্রয়োজন পড়েছে।
এনআইডির তথ্যভান্ডারে প্রায় ১২ কোটি ভোটারের কম-বেশি ৩০ ধরনের ব্যক্তিগত তথ্য আছে। যা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ১৭১টি প্রতিষ্ঠান এক্সেস নিয়ে ঢুকে থাকে প্রতিনিয়ত।
ইসি সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের কম্পিউটার বা ল্যাপটপ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যভান্ডার আক্রান্তের শঙ্কা করছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ওই শঙ্কায় নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তাদের দিয়ে কম্পিউটার ইনসিডেন্ট রেসপন্স টিম (সার্ট) গঠন করেছে। পাশাপাশি সক্রিয় করা হয়েছে সিকিউরিটি অপারেশন্স সেন্টার (সক) ও নেটওয়ার্ক অপারেশন্স সেন্টার (নক)। এ ছাড়াও সাইবার নিরাপত্তায় বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, এনআইডি সার্ভার বন্ধ থাকায় অনেক ব্যাংক ও সেবা প্রতিষ্ঠানেও বন্ধ রয়েছে সংশ্লিষ্ট সেবা প্রদান। বুধবার (১৬ আগস্ট) বিকেল ৫টা পর্যন্ত বন্ধ থাকবে সার্ভার।
এদিকে ভারতীয় হ্যাকারদের সাইবার আক্রমণে দেশে ২৫টি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট থেকে তথ্য ফাঁস হয়েছে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ, আইসিবি এবং ডিরেক্টরেট জেনারেল অব হেলথ সার্ভিসেস, ডিজিএইচএস। সে হামলা থেকে বাঁচতে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সার্ভার। সাইবার হামলায় প্রায় ১০ হাজার বিনিয়োগকারী এবং বিনিয়োগ আবেদনকারীদের তথ্য থাকায় ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ, আইসিবি’র ওয়েবসাইট হ্যাকিং উল্লেখযোগ্যভাবে বড়। এতে সরকারি মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগকারীদের নাম, ঠিকানা ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। আর ডিজিএইচএসের ফাঁস হওয়া তথ্যে সরকারি হাসপাতাল থেকে রাজস্ব সংগ্রহের পরিসংখ্যান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।