জলবায়ু উদ্বাস্তু ৬০০ পরিবারকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘জাতির পিতার এই জন্মশতবর্ষে আমাদের অঙ্গীকার, দেশে একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। প্রত্যেক মানুষকে আমি যেভাবেই পারি, একটা চালাও করে হলেও করে দেবো।’
বৃহস্পতিবার (২৩ জুলাই) ৬০০ জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর ‘ড্রিম প্রজেক্ট’খ্যাত বিশেষ এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেওয়া হয়। সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকা থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পে’র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। খুরুশকুলে বাঁকখালী নদীর তীরে ২৫৩ একর জমির ওপর গড়ে ওঠা এই বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পকে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বড় আশ্রয়কেন্দ্র বলে দাবি করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছি। জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ। আমরা জাতির পিতার সেই স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে যাচ্ছি। আর সেই লক্ষ্য আমাদের অর্জন করতে হবে। এভাবে আমাদের সমস্ত কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। কাজেই জাতির পিতার এই জন্মশতবর্ষে আমাদের লক্ষ্য কেউ গৃহহীন থাকবে না। সবার থাকার ব্যবস্থা করা হবে। অন্তত একচালা করে হলেও করে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। জাতির পিতার জন্মবার্ষিকীর অঙ্গীকার ‘মুজিব বর্ষে কেউ গৃহহীণ থাকবে না’ বাস্তবায়ন করা হবে।”
তিনি বলেন, ‘আমরা আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ঘর করে দিচ্ছি । শুধু এখানে বলেই না, সারা বাংলাদেশেই কোথায় গৃহহীন ভূমিহীন মানুষ আছে, তাদের আমরা পুর্নবাসনের ব্যবস্থা নিচ্ছি। পাশাপাশি যাদের জমি আছে তাদেরও ঘর করে দেওয়ার জন্য গৃহায়ণ তহবিল নামে বাংলাদেশ ব্যাংকে একটা তহবিল করা আছে। সেখান থেকে যে কেউ বা যে কোনও প্রতিষ্ঠান টাকা নিয়ে ঘর করতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কক্সবাজারে বিমানবন্দর নির্মাণ করতে গিয়ে দেখলাম জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এবং ঘূর্ণিঝড়-জলেঅচ্ছ্বাসের কারণে অনেকে ঘরবাড়ি, ভিটামাটি হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়ে আছেন। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম তাদের পুনর্বাসন করবো। সেই চিন্তা থেকেই এই প্রকল্প। এখানে নতুন শহরের মধ্যে মানুষ বসবাস করতে পারবে।’
তিনি ফ্ল্যাটপ্রাপ্তদের উদ্দেশে বলেন, ‘এখানে আলাদা একটা সুন্দর শহর গড়ে উঠবে। আপনারা এতোদিন যেভাবে ছিলেন কষ্টের মধ্যে, এখন সুন্দরভাবে বসবাস করতে পারবেন। আপনাদের ছেলেমেয়েরা মানুষ হবে, বড় হবে। সেটাই আমরা চাই। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই ব্যবস্থা নিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, ‘কক্সবাজার আমাদের পর্যটক এলাকা। কক্সবাজারে সৈকতে বিশাল ঝাউবন। এটা জাতির পিতার নির্দেশেই করা হয়েছিল যেন প্রাকৃতিক জলোচ্ছ্বাস থেকে কক্সবাজার শহরটা রক্ষা করা যায়। জাতির পিতার সেই স্বপ্ন কক্সবাজারটাকে আরও সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে চাই পর্যটন শহর হিসেবে। আমাদের সমুদ্র সৈকতটা সারাবিশ্বের মধ্যে সব থেকে দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত। এতো সুন্দর এতো দীর্ঘ এবং যেখানে বালু আছে, বালুময় সমুদ্র সৈকত পৃথিবীর আর কোনও দেশে নেই। এতো চমৎকার একটা জিনিস সেটা দেশের মানুষ এবং বিশ্বব্যাপী সবাই যেন উপভোগ করতে পারেন সে লক্ষ্য নিয়ে এই অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য পদক্ষেপ নেই। বিমানবন্দরটাকে এমনভাবে উন্নত করতে চাই যেখানে হয়তো সারা বিশ্ব থেকে অনেকে আসতে পারবে, যত বড় বিশাল বিমান হোক নামতে পারবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন ২০টি ভবন করা হয়েছে, ভবিষতে বাকি ভবনগুলো করা হবে। এখানে সব কিছু থাকবে। সেখানে ১৪টা খেলার মাঠ, সবুজ এলাকা থাকবে, মসজিদ, মন্দির থাকবে। অন্য ধর্মাবলম্বী যদি থাকে তাদের প্রার্থনার জায়গাও থাকবে। স্কুল থাকবে, প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্কুল করে দেবো। সেখানে পুকুর খনন করা হয়েছে সেখান থেকে সুপেয় পানি খেতে পারবেন। বৃষ্টির পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পুলিশ ফাঁড়ি করা হবে, ফায়ার স্টেশন থাকবে। দুটো জেটি করা হবে যেখানে জাহাজ ভাঙতে পারবে। তাছাড়া মাছ ধরতে যায়, তারা মাছ ধরে যেন শুঁটকি শুঁকাতে পারে সেজন্য জায়গা করে দেবো। সুন্দর বাজার করে দেবো। সুন্দর শুঁটকির হাট করে দেবো, সেটা দৃষ্টি নন্দন করবো। আধুনিকভাবে করে দেবো যেন সেখানে মানুষ দেখতে যায়।’
এ প্রকল্পের স্বপ্নদ্রষ্টা বলেন, ‘বাসিন্দাদের বিদ্যুৎ ব্যবহারের জন্য সেখানে স্যোলার প্যানেলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিদ্যুতের জন্য সাব স্টেশন করা হবে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করতে হবে। তাছাড়া বাকখালী নদীর ওপর ব্রিজ নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে গেছে। সেখানে ৫৯৫ মিটার দৈর্ঘ্যের একটা প্লেস নির্মাণ করা হচ্ছে। সেখানে চারটি সাইক্লোন সেন্টার করা হবে। যে ভবন করা হয়েছে সেগুলোর নিচ তলা সম্পূর্ণ ফাঁকা। অর্থাৎ জলোচ্ছ্বাস হলে পানি যেন এদিক থেকে ওদিকে চলে যেতে পারে।’
গণভবন প্রান্তে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমেদ কায়কাউস। তিনি অনুষ্ঠানের শুরুতেই একটি সংক্ষিপ্ত পটভূমি তুলে ধরেন। এরপর একটি সংক্ষিপ্ত ভিডিও চিত্র প্রদর্শনী করা হয়। এ অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সেনাপ্রধান সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। কক্সবাজার প্রান্তে প্রকল্প এলাকায় উদ্বোধনে অংশ নেন স্থানীয় প্রশাসনসহ জনপ্রতিনিধিরা। উদ্বোধন শেষে কয়েকজন উপকারভোগীর হাতে ফ্লাটের চাবি হস্তান্তর করা হয়। এরপর আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকায় তিন জন উপকারভোগী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তিনটি বৃক্ষ রোপণ করেন। এরপর গণভবন প্রান্ত থেকে দোয়া মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।
প্রকল্প এলাকায় জেলা প্রশাসক কামাল হোসনে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। সেখানে তিন জন উপকারভোগীর কথা শুনে কথা শোনা হয়। তারা আঞ্চলিক ভাষায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান। গণভবনে প্রান্তে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে প্রকল্প এলাকার একটি স্মারক প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেন সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ।
উৎসঃ বাংলা ট্রিবিউন