মোহাম্মদ মিলন আকতার, ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি: যে দিকেই চোখ যায় পেঁয়াজের ক্ষেত। সারি সারি প্রতিটি গাছেই কমবেশি ফুল ফুটেছে। আর কিছুদিনের মধ্যে পরাগায়ন শুরু হবে। পরাগায়ন শেষ হলে ২০-২৫ দিনের মধ্যে শুরু হবে বীজ সংগ্রহের কাজ। ঠাকুরগাঁও জেলায় পেঁয়াজের বীজ বানিজ্যিকভাবে চাষ শুরু হয়েছে। আর এ বৃহৎ আকারে বীজ উৎপাদনের কার্যক্রম হাতে নিয়ে অনন্য উদাহরণ স্থাপন করেছেন মো: আরশেদ আলী খাঁন নামে এক ব্যবসায়ি। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আখানগর বাজার এলাকায় প্রায় সাড়ে ৮ বিঘা (২৬৪ শতক) জমিতে বানিজ্যিকভাবে পেঁয়াজের চাষ করেছেন তিনি। প্রতি বছরে তিনি ঠাকুরগাঁও জেলায় বীজের পেঁয়াজ রোপন করেন। প্রয়োজনীয় পরিচর্যা শেষে সেগুলো থেকে যে পরিমানে বীজ উৎপাদন হয় সেগুলো জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা আয় করেন তিনি। এতে করে তার পেঁয়াজের প্লটে বেশ কযেকজন মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। ভাল মানের বীজ উৎপাদনের মাধ্যমে সুনাম কুড়াতে চান বলে জানান আরশেদ আলী খাঁন। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আখানগরে তার পেঁয়াজের প্লটে গিয়ে দেখা যায়, তিনি সেখানে কয়েকজন শ্রমিক নিযুক্ত করেছেন। পেয়াজের ক্ষেতে শ্যালোমেশিন দিয়ে পানি দেওয়া হচ্ছে। পানি দেওয়ার ফলে কোন গাছ যাতে করে হেলে না পরে শ্রমিকেরা তাই বাঁশের লাঠি ও সুতলি দিয়ে গাছের সুরক্ষা বলয় তৈরী করছেন। ওই প্লটে ২৬৪ শতক জমি থাকলেও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চাড়োলে একজন কৃষকের মাধ্যমে ২৫ বিঘা জমিতে বীজের পেঁয়াজ লাগানো হয়েছে। জেলার বিভিন্ন এলাকার প্রায় ১২৫ জন কৃষককে চুক্তিভিত্তিক প্রায় ২৪ টন উন্নত মানের পেঁয়াজ সরবরাহ করেছেন। সেগুলো থেকে বীজ উৎপাদনের পর আরশেদ আলী ন্যার্য্য দামে পেঁয়াজের বীজ কিনবেন বলে জানান তিনি।
মো: আরশেদ আলী খাঁন বলেন, আমার বাসা পাবনা জেলার কাশনাথপুরে। এখানে সাড়ে ৮ বিঘা জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করেছি। যমুনা বীজ ভান্ডার নামে আমার একটি কোম্পানী রয়েছে। গত বছর আমি প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতি মন পেয়াজ ২ লাখ টাকা দরে বিক্রি করেছিলাম। এ বছর আশা করছি এখান থেকে প্রায় ৫০ মন বীজ উৎপাদন সম্ভব হবে। সেগুলো জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যান্য স্থানে বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবনা হওয়া যাবে।
পেঁয়াজের ক্ষেতে নিযুক্ত শ্রমিক আবুল কালাম আজাদ, বিশ্বনাথ ও সুশিল বলেন, এখানে আমরা নিয়মিত কাজ করে থাকি। এখানে ১০-১২ দিনের মধ্যে পরাগায়ন শুরু হবে। পরাগায়ন হয়ে গেলে ২০-২৫ দিন পরেই বীজ প্রস্তুত হবে। এ সময় আমরা প্রতিদিন গড়ে ২৫-৩০ জন শ্রমিক কাজ করবো। ঠাকুরগাঁও কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে পেয়াজের আবাদ চলমান রয়েছে। কিছু কিছু স্থানে কর্তন শুরু হয়েছে। এ বছর জেলায় মোট ৭৯৮ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হলেও ৮০২ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ হাজার ১৯০ মেট্রিক টন। চলতি মৌসুমে পেঁয়াজের বীজ প্রতি কেজি বিক্রি হতে দেখা যায় ৫-৬ হাজার টাকায়। ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার মোছাম্মাৎ শামীমা নাজনীন জানান, ঠাকুরগাঁও জেলায় অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি পেয়াজেরও ভাল আবাদ হয়। চাষীদের ঠাকুরগাঁও কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য ও পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। পেয়াজের ক্ষেতে পোকা দমনে বিভিন্ন কার্যকরী পদক্ষেপের বিষয়ে কৃষকদের জানানো হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূল ও বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা না দিলে পেয়াজের আশাতীত ফলন হবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।