চট্টগ্রাম থেকে ইতালি রুটে আজ থেকে শুরু হলো সরাসরি পণ্য রফতানি। মেইড ইন বাংলাদেশ স্টিকারযুক্ত পণ্য বোঝাই কন্টেনার নিয়ে ‘এমভি সোঙ্গা চিতা’ যাত্রা করবে। জাহাজটি আজ দুপুরে ইতালির উদ্দেশে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে নোঙর তুলবে।
চট্টগ্রাম-ইতালি রুটে এটিই প্রথম কোনো জাহাজ যেটি কানায় কানায় পূর্ণ রয়েছে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ স্টিকার লাগানো তৈরি পোশাকসহ রফতানি পণ্যে।
এর আগে, পরীক্ষামূলকভাবে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে একটি জাহাজ ইতালির পথে যাত্রা করলেও সেটি ছিল পুরোপুরি খালি কন্টেনার বোঝাই। নতুন এই যাত্রা এখন থেকে অব্যাহত থাকবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। আজ দুপুরে বন্দর চেয়ারম্যান নিজে উপস্থিত থেকে বাংলাদেশি পণ্যবোঝাই জাহাজটিকে বিদায় জানাবেন।
সূত্র জানায়, দেশের আমদানি রফতানি বাণিজ্যে কন্টেইনারে পণ্য পরিবহন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাত্র ৬ টিইইউএস কন্টেনার নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে ১৯৭৭ সালে কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের যে যাত্রা শুরু হয়েছিল তা আজ এক মহাযজ্ঞে পরিণত হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে গত বছর ৩১ লাখ টিইইউএসের বেশি কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং হয়েছে। প্রতিবছর গড়ে ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি রয়েছে কন্টেনার বাণিজ্যে। চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে দেশের আমদানি রফতানি বাণিজ্যের কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং হলেও বাংলাদেশ থেকে কন্টেইনার নিয়ে সরাসরি কোনো জাহাজই গন্তব্যে যায় না।
আবার লোডিং পোর্ট থেকেও কন্টেইনার নিয়ে সরাসরি কোনো জাহাজই বাংলাদেশে আসে না। ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্টের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয় বাংলাদেশের আমদানি রফতানি বাণিজ্যের কন্টেইনার পরিবহন। বাংলাদেশ থেকে কন্টেনার নিয়ে ফিডার ভ্যাসেলগুলো চারটি ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্টে গিয়ে সেখানে অবস্থান করে। ওখান থেকে কন্টেনারগুলো পুনরায় বড় মাদারভ্যাসেলে তুলে দেওয়া হয় ইউরোপ, আমেরিকা, চীন, জাপানসহ বিভিন্ন গন্তব্যে প্রেরণের জন্য। অপরদিকে আমদানি পণ্য বোঝাই কন্টেইনারও সংশ্লিষ্ট রফতানিকারক দেশ থেকে মাদার ভ্যাসেল বোঝাই করে উক্ত চারটি ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্টে আনা হয় ওখান থেকে চট্টগ্রাম বন্দরমুখী ফিডার ভ্যাসেলে পুনরায় বোঝাই করা হয়।
এতে পণ্য পরিবহনে দীর্ঘ সময়ের পাশাপাশি বহু বেশি অর্থ ব্যয় হয়। এই প্রক্রিয়ায় কোনো কারণে সময়মতো ফিডার ভ্যাসেল ধরতে না পারলে বা চলাচল না করলে বিমানে পণ্য পাঠাতে হয়। যাতে অনেক বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় রফতানিকারকদের।
এদিকে ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্ট ব্যবহার করে চট্টগ্রাম থেকে ইউরোপে পণ্য পাঠাতে ২৪ থেকে ২৮ দিন সময় লাগে। সরাসরি পাঠালে সময় লাগবে ১৪ থেকে ১৫দিন। এতে পরিবহন ব্যয় অন্তত ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কমে যাবে বলেও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।
এই অবস্থার অবসান ঘটিয়ে ইউরোপের বড় বড় কয়েকটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ঐক্যবদ্ধ হয়ে চট্টগ্রামের সাথে সরাসরি ইউরোপে জাহাজ চলাচলের উদ্যোগ নেয়। এরই অংশ হিসেবে ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার প্রতিষ্ঠান আরআইএফ লাইন এবং এটির সহযোগী প্রতিষ্ঠান ক্যালিপসো কোম্পানিয়া ডি নেভিগেশন চট্টগ্রাম ইতালি রুটে জাহাজ চলাচলের ব্যবস্থা করেছে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কন্টেনার নিয়ে সরাসরি ইতালির সমুদ্রবন্দর সিভিটাভিসিয়ায় জাহাজ ভিড়বে। ফিরতি পথেও ইতালি থেকে পণ্য নিয়ে জাহাজ ভিড়বে চট্টগ্রামে। প্রাথমিকভাবে এমভি সোঙ্গা চিতা এবং এমভি ক্যাপ ফ্লোরেস নামের দুইটি কন্টেনার জাহাজ দিয়ে এই রুট চালু করা হয়েছে। পরবর্তীকালে প্রয়োজনে এই রুটে জাহাজের সংখ্যা বাড়ানো হবে।