ফোনালাপে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী সম্পর্কে সংগঠনটির প্রচার সম্পাদক আনাস মাদানী জামায়াত সংশ্লিষ্টতার যে অভিযোগ তুলেছেন তা আনাস মাদানীর পরিকল্পিত মিথ্যাচার বলে মন্তব্য করেছেন জুনায়েদ বাবুনগরী। বুধবার (১ জুন) সংবাদ মাধ্যমে বিবৃতিতে পাঠিয়ে ওই ফোনালাপের প্রতিবাদ করেন জুনায়েদ বাবুনগরী।
ফাঁস হওয়া ওই ফোনালাপে আনাস মাদানী বলেন, ‘বাবুনগরী জামায়াতের সঙ্গে আতাঁত করেছেন। বাবুনগরী সব সময় বাতিলের বিরুদ্ধে কথা বলেননি। সব সময় জামায়াতের সঙ্গে আঁতাত করে কাজ করেন। জামায়াতের সঙ্গে আঁতাত করে শাপলা চত্বরে মাইর খাওয়াইছেন।’
এর প্রতিবাদে দেওয়া বিবৃতিতে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, জামায়াতের সঙ্গে আমার বিন্দুমাত্রও সম্পর্ক নেই। অতীত-বর্তমান কোনও সময়ই জামায়াতের সাথে আমার সম্পর্ক ছিল না। বরং পুরো জীবন আমার লেখালেখিতে ও লাখ লাখ মানুষের বিশাল সমাবেশে বয়ান বক্তৃতার মধ্যে জামায়াতের ভ্রান্ত আকিদা সম্পর্কে আমি দেশবাসীকে সচেতন করে আসছি।
তিনি আরও বলেন, আনাস মাদানী জামায়াত সংশ্লিষ্টতা নিয়ে আমার সম্পর্কে যা বলেছেন, সেটি তার মিথ্যাচার। তার এহেন মিথ্যাচার আমাকে বির্তকিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করার ধারাবাহিক ষড়যন্ত্রের অংশ বলেই আমি মনে করি। এগুলো আমার মানহানি করার অপচেষ্টা। কিছুদিন ধরে আমি লক্ষ করছি, তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে একটি কুচক্রীমহলের ইন্ধনে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা এবং সাজানো কথা রটিয়ে উস্কানিমূলকভাবে সরকার ও প্রশাসনকে বিভ্রান্ত করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার চক্রান্ত করে যাচ্ছে। এসবের নিন্দা ও ধিক্কার জানানোর ভাষা আমার নেই।
তিনি বলেন, ‘আনাস মাদানী তার ফোনালাপে ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরের মর্মান্তিক ঘটনার সম্পূর্ণ দায়ভার আমার ওপর চাপিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা করছেন। তিনি শাপলা চত্বরের মর্মান্তিক ঘটনা নিয়ে আমাকে জড়িয়ে এমন ডাহা মিথ্যা কথা বলতে পারবে আমি আশা করিনি। অথচ জেলে গেলাম আমি। রক্ত দিলাম আমি। রিমান্ডে অমানুষিক নির্যাতন ভোগ করলাম আমি। সে রাতে হেফাজতের সমাবেশে কী হয়েছিল সেটি জাতি জানে, কিন্তু মামলার আসামি হয়েছিলাম আমি।’
বাবুনগরী বলেন, আমিরে হেফাজতের আনুগত্য করে, লক্ষ লক্ষ নবী প্রেমিক জনতাকে বিপদের মুখে ঠেলে না দিয়ে আমার জীবনের মায়া ত্যাগ করে ঝুঁকি নিয়ে শাপলার মঞ্চে অটল থাকাটাই কি আমার অপরাধ? আমি আমিরে হেফাজতের নির্দেশ মতে সেদিন লালবাগ থেকে শাপলা চত্বরে গিয়েছি। আমিরে হেফাজতের পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত শাপলা চত্বরে অবস্থান করেছি। বার বার মিডিয়াকে বলা হয়েছে, সেদিন যা হয়েছিল আমিরে হেফাজতের নির্দেশেই হয়েছে। সুতরাং এতদিন পর আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর নামান্তর।’
তিনি আরও বলেন, ‘সচেতন মহল ভালো করেই জানেন। শাপলা চত্বরে আমি মানুষকে মার খাওয়ানি। বরং সেই রাতে মুহুর্মুহু গুলিবৃষ্টির মধ্যেও আমি নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লাখ লাখ মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছি। আর ২০১৩ সালে কারা জামায়াতসহ বিরোধী রাজনৈতিক দল থেকে সুবিধা ভোগ করেছে আর আজ সরকারের সাথে আঁতাত করে কওমিদের নীতি আদর্শ বিসর্জন দিয়ে হেফাজতকে ধ্বংস করার চক্রান্ত করছে, তা জাতি ভালো করেই জানেন। সময় মতো তাদের মুখোশ উন্মোচিত হবে।’
এ সম্পর্কে জানতে আনাস মাদানীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলে তিনি কল ধরেননি। এসএমএস পাঠিয়ে ফোন ধরার অনুরোধ করেও তার পক্ষ থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি।