একাদশ জাতীয় সংসদের উপনেতা, মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী, আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলির সদস্য ও ফরিদপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, সংসদ সদস্য শেখ এ্যানী রহমানসহ কয়েকজন সাবেক সংসদ সদস্যের মৃত্যুতে আজ জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এ শোক প্রস্তাব সংসদে উত্থাপন করেন। শোক প্রস্তাবে সৈয়দ সাজেদা চৌধুরী ও শেখ এ্যানী রহমানের মৃত্যুতে মহান জাতীয় সংসদ থেকে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করা হয়।
সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ১৯৩৫ সালের ৮ মে মাগুরা জেলায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এবং ২০২২ সালের ১১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করে ১৯৫৬ সালে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন। ১৯৬৯ সালে তিনি মহিলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের সাথে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭৬ সালে আওয়ামী লীগের ক্রান্তিকালীন সময়ে তিনি ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৮৩-১৯৮৬ সময়ে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক, ১৯৮৬-১৯৯২ সময়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, ১৯৯২ সাল থেকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ১৯৭০-১৯৭৩ সময়ে জাতীয় পরিষদ সদস্য এবং পরবর্তীতে প্রথম, পঞ্চম, সপ্তম, নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সপ্তম জাতীয় সংসদে পরিবেশ ও বন মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদে তিনি সংসদ উপনেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০১০ সালে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হন।
সংসদে শোক প্রস্তাবে বলা হয়, এ সংসদ প্রস্তাব করছে যে মহান জাতীয় সংসদের সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী এমপি’র মৃত্যুতে দেশ বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং নিবেদিতপ্রাণ সমাজসেবককে হারালো। এ সংসদ তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ, তাঁর রুহের মাগফেরাত কামনা এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সহমর্মিতা প্রকাশ করছে।
শোক প্রস্তাবে স্পিকার বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদের ৩১৯ মহিলা আসন-১৯ এর নির্বাচিত সংসদ সদস্য শেখ এ্যানী রহমানকে হারিয়েছি।’
শেখ এ্যানী রহমান ১৯৬০ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর পিরোজপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন এবং ১১ অক্টোবর ব্যাংককের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৬২ বছর।
শেখ এ্যানী রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর, তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন। শেখ এ্যানী রহমান একাদশ জাতীয় সংসদে ৩১৯ মহিলা আসন-১৯ থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ সংসদে তিনি লাইব্রেরী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
শোক প্রস্তাবে বলা হয়, এ সংসদ প্রস্তাব করছে যে, একাদশ জাতীয় সংসদের ৩১৯ মহিলা আসন-১৯ এর নির্বাচিত সংসদ সদস্য শেখ এ্যানী রহমান-এঁর মৃত্যুতে মহান জাতীয় সংসদ গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ, তাঁর রুহের মাগফেরাত কামনা এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সহমর্মিতা প্রকাশ করছে।
প্রথা অনুযায়ি সংসদ সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ও শেখ এ্যানী রহমানের স্মরণে সংসদে আলোচনা অনিষ্ঠিত হয়। সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নেন।
অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন, সরকারি দলের আমির হোসেন আমু, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, বেগম মতিয়া চৌধুরী, ফারুক খান, শাজাহান খান, মৎস ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী স ম রেজাউল করিম, আ স ম ফিরোজ, বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের, সরকারি দলের সদস্য ওয়াসিকা আয়েশা খান, বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা, জাতীয় পার্টির সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ ও আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।
এ ছাড়া, ব্রিটেনের দীর্ঘমেয়াদী রাজ্যশাসক রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ (পূর্ণ নাম- এলিজাবেথ আলেকজান্ড্রা ম্যারি উইন্ডসর) এর মৃত্যুতে জাতীয় সংসদ গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করছে।
ইতোমধ্যে ৫ জন সাবেক সংসদ সদস্যের মৃত্যুতে সংসদ থেকে গভীর শোক প্রকাশ করে তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করা হয়। মৃত্যুবরণকারীরা হলেন- সাবেক হুইপ ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপিকা খালেদা খানম, সাবেক সংসদ সদস্য গিয়াস উদ্দিন আহমেদ, সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য আবুল হাসনাত ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহানারা বেগম।
এ ছাড়া, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আকবর আলি খান, ভাষাসংগ্রামী, মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক রণেশ মৈত্র, দৈনিক বাংলার সম্পাদক ও একুশে পদকপ্রাপ্ত বর্ষীয়ান সংবাদিক তোয়াব খান, কিংবদন্তী গীতিকার, চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক গাজী মাজাহারুল আনোয়ার, একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রবীণ চিত্রশিল্পী সমরজিৎ রায়, একুশে পদকপ্রাপ্ত খ্যাতিমান অভিনেতা ও নাট্যনির্মাতা মাসুম আজিজ এবং কানিজ ফাতেমা আহমেদ এমপি’র মাতা জাকিয়া বেগম খান ও জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের কামরা পরিচারক নূর মোহাম্মদ-এর মৃত্যুতে সংসদ গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করছে।
স্পিকার শোক প্রস্তাবে বলেন, সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং-এ হতাহত, পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার করতোয়া নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় হতাহত এবং দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে দুর্ঘটনায় হতাহতদের স্মরণে জাতীয় সংসদ গভীর শোক প্রকাশ, সকল বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করছে।
শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনার পর সর্বসম্মতিক্রমে তা গৃহিত হয়। পরে মৃত্যুবরণকারীদের সম্মানে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন ও তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন সরকারি দলের সদস্য হাফেজ রুহুল আমিন মাদানী।
এরপর সংসদের নিয়ম অনুযায়ী বিদ্যমান সংসদের সদস্যের মৃত্যুতে দিনের অন্যসব কার্যসূচি স্থগিত করে সংসদে বৈঠক মুলতবি করা হয়।