কক্সবাজারের টেকনাফ হ্নীলা ইউনিয়নের ছাত্রদল ক্যাডার নুরুল মোস্তফাকে রাতারাতি উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বানানো হয়েছে। ১৩ এপ্রিল রাত সাড়ে ১২টার দিকে কমিটি অনুমোদন হলেও তা প্রকাশ পায় অনেক পরেই।
কমিটি প্রকাশের পর পরেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বিভিন্ন ছাত্র এবং যুব রাজনৈতিক সংগঠনের মধ্যে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। প্রতিবাদে হয়েছে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশও।
কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আবু মো. মারুফ আদনান স্বাক্ষরিত টেকনাফ উপজেলা ছাত্রলীগের নব-গঠিত কমিটিতে সভাপতি করা হয়েছে উপজেলা ছাত্রলীগের দুই বারের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম মুন্নাকে। আগামী এক বছরের জন্য এই কমিটি অনুমোদন দেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
সূত্রমতে, কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি ও উখিয়া-টেকনাফের সাবেক এমপি শাহাজান চৌধুরীর আস্থাভাজন কর্মী, হ্নীলা জুমুরিয়া মাদ্রাসা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল মোস্তফা ছিলেন বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামের প্রথম সারির ক্যাডার। ইতিমধ্যে অনেক ছবি ও তথ্য বহুল কাগজপত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
পাশাপাশি তার হাতে অত্যাচার ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের অসংখ্য ছাত্রলীগ কর্মী। কিন্তু হটাৎ রাতারাতি ছাত্রদল থেকে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হওয়ায় পুরো জেলার রাজনৈতিক অঙ্গনে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
এছাড়া কমিটি ঘোষণার পর পরেই হয়েছে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ। অনেক ত্যাগী ছাত্রলীগ নেতা সংগঠন থেকে নিজেকে সরিয়ে নিচ্ছে বলেও জানা গেছে। কারণ অনেকের দাবি যার হাতে নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হতে হয়েছে তার পেছনে কখনো রাজনীতি করা সম্ভব নয়।
স্থানীয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জানান, নুরুল মোস্তফা কখনো ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিল না। এমনকি ওয়ার্ড পর্যায়েও ছাত্রলীগের কোনো কমিটিতে তার নাম দেখাতে পারবে না। তিনি সম্প্রতি অনৈতিক পন্থায় জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের আস্তাভাজন হয়েছেন। পাশাপাশি রাতারাতি উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদও দখলে নিয়েছেন।
তৃনমূল ছাত্রলীগ কর্মীদের অভিযোগের পুরাপুরি সত্যতা পাওয়া গেছে কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এসএম সাদ্দাম হোসেনের বক্তব্যে। তিনি বলেন, ১৩ এপ্রিল উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম মুন্নাকে সভাপতি ও নুরুল মোস্তফাকে সাধারণ সম্পাদক করে এক বছরের জন্য টেকনাফ উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সেখানে সাধারণ সম্পাদক নুরুল মোস্তফা ছাত্রলীগের পূর্বের কোনো ধরনের কমিটিতে ছিল না। তবে সে ছাত্রলীগ করে।
জেলা সভাপতি দাবি করেন, রাতারাতি নয় এবং অনৈতিক উপায়েও নয়, কাউন্সিল ও সম্মেলন করে দুই মাস পর কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।
তবে নুরুল মোস্তফা ছাত্রদলের একজন সক্রিয় ক্যাডার হিসেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার ছবি ভাইরাল হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সে বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলে দাবি করেন।
কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু মো.মারুফ আদনানকে তার ব্যবহৃত দুইটি নম্বরে বুধবার ও বৃহস্পতিবার একাধিকবার ফোন করা হলেও ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
এদিকে যার বিরুদ্ধে এত অভিযোগ সেই নুরুল মোস্তফা সাংবাদিকদের জানান, তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ সত্য নয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে টেকনাফ উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক পদস্থ একাধিক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, উপজেলা ছাত্রলীগে নেতৃত্ব দেয়ার মতো অন্তত ৫০ জন ছাত্রলীগের নেতা রয়েছে। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বর্ধিত সভা চলাকালে সব প্রার্থীদের সশরীরে হাজির থেকে বায়োডাটা জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিল জেলা ছাত্রলীগ। অন্যথায় কোনোভাবেই প্রার্থী হওয়ার সুযোগ হারাবে বলে ঘোষণা দেন।
কিন্তু ওই দিন নুরুল মোস্তফা নামের এই বসন্তের অতিথি পাখি সেখানে ছিলেন না। তাহলে তিনি কীভাবে সাধারণ সম্পাদক হয় এটাই সবার প্রশ্ন। এছাড়া নুরুল মোস্তফার বিরুদ্ধে আগে কেন্দ্রীয়ভাবে তদন্ত করা হোক। আসলে সে কে? কি তার পরিচয়। তদন্তে যদি উল্লেখিত অভিযোগ ভুল প্রমাণিত হয় তাহলে তাকে সংবর্ধনা দিয়ে গ্রহণ করা হবে। এখন আমাদের দাবি শুধু কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের হস্তক্ষেপ।
কক্সবাজার জেলা ছাত্রদলের সভাপতি শাহাদৎ হোসেন রিপন জানান, টেকনাফ ছাত্রলীগের কমিটি দেখার পর আমাদের নিজেদের মধ্যেও অনেক আলোচনা হয়েছে। কারণ নুরুল মোস্তফা হ্নীলা ইউনিয়ন ছাত্রদলের সদস্য এবং হ্নীলা জুমুরিয়া মাদ্রাসা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তার আত্মীয় স্বজন সবাই বিএনপি করে। তার বড়ভাই নাছির উদ্দিন ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এছাড়া তার চাচা ও চাচাত ভাই সবাই বিএনপি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এটা সবাই জানে।