মো. রাসেল ইসলাম: ফুলের রাজধানী খ্যাত যশোরের গদখালীতে স্থানীয় উৎপাদিত ফুলের পাশাপাশি প্লাস্টিক ও কাগজের তৈরি ফুল বিক্রি হওয়ায় কয়েক হাজার ফুল চাষি চরম হতাশায় ভুগছেন। বাজারে কৃত্রিম ফুলের সরবরাহ বন্ধ না হলে ফুল ব্যবসায় বিপর্যয় হতে পারে বলে জানান ফুলের সাথে জড়িত সংশ্লিষ্টরা। একই সাথে ফুল সেক্টর থেকে আয় হওয়া সরকারি রাজস্ব খাতেও ঘাটতি হবে বলে জানান ফুল ব্যবসায়ীরা।
সরেজমিনে তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, গদখালীর ফুল বাজার সহ দেশজুড়ে বিভিন্ন বিপণিবিতানে প্লাস্টিকের ফুল বিক্রি হচ্ছে। এসব ফুল বারবার ব্যবহার করা যায় বলে আসল ফুল বিক্রি কমে গেছে। আগে সব অনুষ্ঠানেই কাঁচা ফুল ব্যবহার হতো। এখন উৎপাদিত ফুল কাঙ্খিত দামে বিক্রি হচ্ছেনা। সেকারণে হাজার হাজার ফুল চাষিরা চরম হতাশা জ্ঞাপন করেন।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটি সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে শার্শা ও ঝিকরগাছা উপজেলার ৭৬টি গ্রামে দেড় হাজার হেক্টর জমিতে ফুল চাষ হচ্ছে। ছয় হাজার তালিকাভুক্ত কৃষক এই ফুল চাষের সঙ্গে যুক্ত। আর ফুল কেনা-বেচার সঙ্গে যুক্ত দুই লাখ মানুষ। চাষিরা উন্নতমানের গোলাপ, রজনীগন্ধা, জারবেরা ও গ্লাডিওলাস ফুল উৎপাদন করেন এখানে। রয়েছে উন্নত মানের টিউলিপ ও লিলিয়াম ফুল।
গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত গদখালী বাজার থেকে পানিসারা ফুলের মোড় ঘুরে দেখা যায়, কয়েকটা ছড়া প্রায় সব ফুলের দোকানে উৎপাদিত কাঁচা ফুলের পাশাপাশি বাহারী ডিজাইনের রং বে রঙের প্লাস্টিক ও কাগজের তৈরি ফুল শোভা পাচ্ছে। দোকানীরা জানান এখন ফুল উৎপাদনের ভরা মৌসুম না হওয়ায় ফুলের চাহিদা মেটাতে কৃত্রিম ফুলও আমাদের বেঁচতে হচ্ছে। তবে ফুলের ভরা মৌসুমে প্লাস্টিক বা কগজের তৈরি ফুলের চাহিদা কম থাকে।
পানিসারা গ্রামের ফুল চাষি ইসমাইল হোসেন ও বিক্রেতা আল আমিন হোসেন বলেন, কাগজের ফুল বাজারে থাকলে আমরা সকল চাষি ও ব্যবসায়ীরা চরম লোকসানে পড়ি। ফুলের দরপতনে আমরা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ছি। তাই ফুলের রাজধানী থেকে অতি দ্রুত এসমস্ত কৃত্রিম ফুল অপসারণ করতে হবে।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, ‘চায়নাসহ আরো দু-একটি দেশ থেকে আমদানি করা প্লাস্টিকের ফুল এখন ফুল চাষিদের জন্য হুমকিস্বরূপ। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানোর পাশাপাশি স্থানীয় ফুল চাষি ও ব্যবসায়ীদের প্লাস্টিকের ফুল ক্রয় বিক্রয় থেকে বিরত থাকতে বলেছি। এই ফুলের ব্যবহার বন্ধ করা না হলে দেশের সম্ভাবনাময় ফুল চাষ বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে চরম ভোগান্তিতে পড়বে ফুলের সাথে জড়িতরা।
অতি দ্রুত ফুলের রাজধানীখ্যাত গদখালীতে উক্ত বিষয়টি নিয়ে সরকারী সার্বিক সহযোগিতা সহ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সদয় দৃষ্টি দিবেন এমনটাই কামনা করেন ফুল চাষি ব্যবসায়ী সহ সংশ্লিষ্টরা।