পাবনা গণপূর্ত অফিসে ঠিকাদার আওয়ামী লীগ নেতাদের অস্ত্র নিয়ে প্রবেশের ঘটনায় প্রশাসনে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। গত ৬ জুন এই ঘটনা ঘটলেও সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা একটি ভিডিও ফুটেজ শনিবার জানাজানি হয়। তাদের এই অস্ত্রের মহড়ায় আতঙ্কিত অফিসের কর্মীরা।
জেলা গণপূর্ত অফিসের পক্ষ থেকে এ নিয়ে পুলিশে কোনো অভিযোগ করা হয়নি। নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ঠিকাদাররা লাইসেন্স করা অস্ত্র নিয়ে অফিসে ঢুকলেও কারও সঙ্গে খারাপ আচরণ করেননি। তাই কোনো অভিযোগ দেওয়া হয়নি।
অস্ত্র নিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, আমরা ভুল করে লাইসেন্স করা অস্ত্র নিয়ে ওই অফিসে গিয়েছিলাম। তবে এটি আমাদের ভুল হয়েছে।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মীরা জানান, এ ঘটনায় তারা আতঙ্কিত।
গত ৬ জুনের সিসিটিভির ওই ভিডিওতে দেখা যায়, দুপুর ১২টার দিকে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ফারুক হোসেন তার কর্মীদের নিয়ে জেলা গণপূর্ত ভবনে প্রবেশ করছেন। তার পেছনে শটগান হাতে পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ আর খান মামুন এবং জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শেখ লালু। অস্ত্র নিয়েই তাদেরকে কার্যালয়ের বিভিন্ন কক্ষে ঢুকতে দেখা গেছে। ওই সময় তাদের অন্য সঙ্গীরা বাইরে অপেক্ষায় ছিলেন। বেলা ১২টা ১২ মিনিটে তারা ফিরে যান।
এদিকে আওয়ামী লীগ নেতা ঠিকাদারদের অস্ত্র নিয়ে এভাবে সরকারি অফিসে প্রবেশ নিয়ে সর্বত্র ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। অস্ত্র ও দলবল নিয়ে গণপূর্ত বিভাগে যাওয়ার বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক হোসেন বলেন, আমি গণপূর্ত বিভাগের ঠিকাদার নই। বিল সংক্রান্ত বিষয়ে কথা বলতে মামুন ও লালু আমাকে সেখানে নিয়ে গিয়েছিল।তবে এভাবে যাওয়া আমাদের উচিত হয়নি।
মামুন বলেন, নিরাপত্তার স্বার্থে বৈধ অস্ত্র নিয়ে আমি ব্যবসায়িক কাজে ইটভাটায় যাচ্ছিলাম। পথে নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ারুল আজিমের সঙ্গে কথা বলতে গণপূর্ত বিভাগে যাই। কিন্তু তিনি না থাকায় আমরা ফিরে আসি। তাকে ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে অস্ত্র প্রদর্শন করা হয়নি। প্রতিপক্ষ ঠিকাদাররা বিষয়টিকে অন্যদিকে নেওয়ার চেষ্টা করছে।
সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে দেখা পাবনা জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শেখ লালু বলেন, ভুলবশত আমরা অস্ত্র নিয়ে অফিসে ঢুকে পড়েছিলাম। প্রভাব দেখিয়ে বিভিন্ন কাজ নিজেদের আয়ত্তে নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তারা।
পাবনা গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, নির্বাহী প্রকৌশলী স্যার অফিসে ছিলেন না। ঠিকাদাররা আমার কক্ষে এসেছিলেন। আমার টেবিলে অস্ত্র রেখে নির্বাহী প্রকৌশলী স্যারের কাছে এসেছেন বলে জানান তারা। তবে তারা কোনো খারাপ আচরণ বা অসৌজন্যমূলক আচরণ করেননি।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গণপূর্ত অফিসের এক কর্মী বলেন, এসব মহড়ায় তাদের আতঙ্কে থাকতে হচ্ছে। প্রভাব বলয় তৈরি করে বিভিন্ন কাজের দরপত্র নিজেদের আয়ত্তে নিতে চেষ্টা করেন ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন ঠিকাদার নেতারা। তাদের দাপটে অনেক নিরীহ ঠিকাদাররা দরপত্র জমা দিতে পারেন না।
শনিবার পাবনা গণপুর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ারুল আজিম বলেন, ওইদিন আমি অফিসের বাইরে ছিলাম। তবে সিসিটিভি ফুটেজে অস্ত্র হাতে অনেকে এসেছে দেখেছি। পরে তাদের সঙ্গে কথাও হয়েছে। তারা বলেছেন, মহাসড়কের পাশে অফিস হওয়ায় তারা ওইদিক দিয়ে যাওয়ার সময় আমার অফিসে এমনিতে আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। তারা আমাকে সরাসরি বা ফোনে কোনো হুমকি দেয়নি। তাই আমরা লিখিত অভিযোগ করিনি।
তিনি আরও বলেন, এখন দরপত্র হয় অনলাইনে এবং ব্যাংক থেকে দরপত্র কিনতে হয়। কাজেই কোনো কাজের বিষয়ে এখানে মহড়ার কোনো প্রয়োজন বা প্রশ্ন নেই।
পাবনার পুলিশ সুপার (এসপি) মুহিবুল ইসলাম খান বলেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। অস্ত্র আইনের শর্ত ভঙ্গ হয়েছে কি না- আমরা তা খতিয়ে দেখছি। তদন্ত শেষে দোষী হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পাবনার জেলা প্রশাসন (ডিসি) কবীর মাহমুদ বলেন, আমি ঘটনাটি শুনেছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিষয়টি তদন্ত করছে। তাদের সুপারিশ অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উৎসঃ যুগান্তর