কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ অতি বৃষ্টি আর বন্যার সাথে লড়ছে কুড়িগ্রামের চাষিরা। বন্যার সাথে যোগ হয়েছে করোনাভাইরাস। এসব দুর্ভোগ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে কুড়িগ্রাম জেলার আমন চাষিরা।
কুড়িগ্রাম জেলা বন্যাকবলিত বলে আমনের ফলনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
জানা যায়, চলতি মৌসুমে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে আমন ধান চাষে ঝুঁকে পড়ার কথা ছিল চাষিদের। কিন্তু বন্যা ও করোনায় বেশ ঢিলে তালে চলছে আমন চাষ। বন্যায় ক্ষতির মুখে পড়তে পারে জেলায় আমন চাষ।
তারপরেও জেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকেরা পুরাদমে আমন ধান লাগানোতে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষকেরা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠের পর মাঠ কৃষি শ্রমিকেরা ধান রোপন করে যাচ্ছেন। পুরুষ ও নারী শ্রমিক একই সঙ্গে আমন ধানের চারা রোপন করছে।
কিন্তু বন্যায় নষ্ট হওয়া উঠতি ফসলের মধ্যে ছিলো আমন বীজতলা। এই বীজতলা নষ্ট হওয়ায় কৃষকরা পড়েছেন চরম বিপাকে। দফায় দফায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হাজার হাজার কৃষক আমন চাষে এবার ঘুরে দাঁড়াতে চায়।
জেলার ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার, তিস্তাসহ ১৬ নদী অববাহিকার ৯ উপজেলায় তৃতীয় দফার বন্যায় ক্ষতির মুখে পড়েছে এখানকার কৃষক।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, জেলায় বন্যায় অন্যান্য ফসলের মধ্যে শুধুমাত্র ১ হাজার ৭১ হেক্টর জমির আমন বীজতলা নষ্ট হয়েছে। বীজতলা নষ্ট হলেও বন্যা পরবর্তী সময়ে এখানকার কৃষকরা ঘুরে দাঁড়াতে আমন চারা রোপণে চেষ্টা চালাচ্ছেন। আমন ধানের চারার তীব্র সংকট ও দামও বেড়েছে কয়েকগুণ। যে কারণে বিপাকে পড়েছেন বন্যা কবলিত এলাকার কৃষক। আমনের চারা পাওয়া গেলেও তা বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। তবুও কৃষকরা আমন ধানের চারা রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
হলোখানা ইউনিয়নের সুভারকুটি গ্রামের কৃষক নুরল হক জানান, ৩ বিঘা জমির আমন বীজতলা বন্যায় সম্পূর্ণ ডুবে পঁচে যায়। এখন স্থানীয় হাট থেকে চড়া দামে আমন চারা কিনে আমন ধান রোপণের চেষ্টা করছেন। বন্যা পরবর্তী সময়ে তাকে বন্যার ক্ষতি থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য এক বিঘা জমিতে আমন চারা রোপণ করতে শ্রমিক মূল্য দিতে হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ টাকা।আরও কয়েকজন কৃষক জানান, আমন বীজতলা বন্যায় নষ্ট হয়ে তারা চরম বিপাকে পড়েছেন। বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় আমন চারার খোঁজে ছুটে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু চাহিদা মত আমন চারা পাচ্ছেন না।
কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আঃ মজিদ জানান, বন্যায় এবার কুড়িগ্রামে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে কৃষকদের। এ ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে কৃষি বিভাগ ট্রে সিস্টেম, ভাসমান পদ্ধতি ও কমিউনিটি বীজ তলা তৈরি করতে ব্যাপক পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে।
আরও জানান, ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের তালিকা করে কৃষি প্রণোদনা হিসেবে রোপণ যন্ত্রের মাধ্যমে কৃষকদের জমিতে আমন চারা রোপণ করে দেয়াসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেয়া হবে।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর খামারবাড়ীর উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান রাজু বলেন, জেলার ৯ টি উপজেলায় এবার আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার হেক্টর জমি। এখানে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১ হাজার ৭১ হেক্টর জমির আমন বীজতলা।
তিনি আরো বলেন, কৃষি বিভাগ থেকে আমনের লক্ষ্যমাত্রার অর্জনকে ঠিক রাখতে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের কৃষি প্রণোদনাসহ আমন চারা বিতরণের কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে।