কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের উৎপাদন প্রযুক্তি ও জ্ঞান অবিলম্বে একটি বৈশ্বিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বিনিময় করে নেওয়া উচিত যাতে বাংলাদেশের মতো ঔষধ উৎপাদনের ক্ষমতাসম্পন্ন দেশগুলো ব্যাপকহারে ভ্যাকসিন উৎপাদন ও বিতরণ করতে পারে।
শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) নিউইয়র্কস্থ জাতিসংঘ সদরদপ্তরের সাধারণ পরিষদ হলে ‘গ্যালভানাইজিং মোমেন্টাম ফর ইউনিভার্সাল ভ্যাকসিনেশন’ শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের এক থিমেটিক বিতর্কে একথা বলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আবদুল মোমেন।
উচ্চ-পর্যায়ের এই ইভেন্টটি আহ্বান করেন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি আব্দুল্লাহ শাহিদ। এতে, বেশ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানগণ, জাতিসংঘ মহাসচিব, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক এবং জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর মন্ত্রী ও সিনিয়র রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
কোভিড ভ্যাকসিনকে সার্বজনীন বিশ্ব সম্পদ হিসাবে বিবেচনা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানের কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, উন্নত দেশ এবং উৎপাদনকারীদের অবশ্যই সমতার ভিত্তিতে কোভ্যাক্স ফ্যাসিলিটির মাধ্যমে কোভিড-১৯ এর টিকার বৈশ্বিক সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী টিকার চাহিদা মেটাতে এর উৎপাদন আরও বাড়াতে হবে এবং বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। এছাড়া বিশ্ব সম্প্রদায়কে টিকা বিষয়ক ভুল তথ্য এবং টিকা জাতীয়করণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অবশ্যই একতাবদ্ধ হতে হবে।
বাংলাদেশে কোভিড মোকাবিলা ও এর ব্যবস্থাপনায় সরকার সময়োপযোগী যে সকল পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করেছে তা তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এক্ষেত্রে তিনি তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবা শক্তিশালী করা এবং নাজুক জনগোষ্ঠীকে সরাসরি নগদ অর্থ ও অন্যান্য সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে তাদের জীবন ও জীবিকার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভারসাম্য নিশ্চিত করাসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত, ১০১ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ কোভিড-১৯ এর টিকার অন্তত একটি ডোজ গ্রহণ করেছেন। কোভিড অতিমারির কার্যকর মোকাবেলায় আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাদের জনসংখ্যার অন্তত ৮০% (প্রায় ১৩২ মিলিয়ন) কে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব সম্প্রদায়কে অবশ্যই উপলব্ধি করতে হবে যে সবাই নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত কেউ নিরাপদ নয়। সর্বজনীন টিকা নিশ্চিত করতে এবং মানুষের জীবন ও বিশ্বের অর্থনীতিকে বাঁচাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে একতাবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
একই দিনে জাতিসংঘ সদরদপ্তরের ইন্দোনেশিয়া লাউঞ্জে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং কানাডার আন্তর্জাতিক উন্নয়ন মন্ত্রীর মধ্যে এক দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ.কে.আব্দুল মোমেন কানাডার মন্ত্রী হারজিত সজ্জনকে রোহিঙ্গা সমস্যার চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে বিস্তারিত উল্লেখ করেন এবং রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে কানাডার সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।
হারজিত সজ্জন রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে কানাডার সমর্থনের আশ্বাস দেন এবং বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় ও মানবিক সহায়তা প্রদানে বাংলাদেশের উদারতার প্রশংসা করেন।
কানাডায় পলাতক জাতির পিতার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অন্যতম খুনি নূর চৌধুরীকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়েও কানাডা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন। তিনি কানাডার মন্ত্রীকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। কানাডার মন্ত্রী আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বর্তমানে সরকারি সফরে নিউইয়র্ক অবস্থান করছেন। পহেলা মার্চ তিনি জাতিসংঘের মহীসোপান সীমা বিষয়ক কমিশনে (সিএলসিএস) বাংলাদেশের এ সংক্রান্ত সংশোধিত তথ্যাদি উপস্থাপন করবেন।