ভারতে কোভিড পরিস্থিতির ভয়াবহ অবস্থা ও ক্রমাগত আলোচনা-সমালোচনার পর অবশেষে স্থগিত করা হলো এবারের আইপিএল। টুর্নামেন্টের জৈব-সুরক্ষা বলয়ের মধ্যেও চারটি দলের কয়েকজন ক্রিকেটার-সাপোর্ট স্টাফ কোভিড পজিটিভ হওয়ার পর এই সিদ্ধান্ত এলো।
গত কয়েকদিনে কলকাতা নাইট রাইডার্স ও চেন্নাই সুপার কিংস দলের কয়েকজন আক্রান্ত হওয়ার প্রেক্ষিতে টুর্নামেন্টের সব ম্যাচ মুম্বাইয়ে সরিয়ে নেওয়ার কথা ভাবছিল ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড-বিসিসিআই। কিন্তু মঙ্গলবার সানরাইজার্স হায়দরাবাদের ঋদ্ধিমান সাহা ও দিল্লি ক্যাপিটালসের অমিত মিশ্রও পজিটিভ হওয়ার পর আসর স্থগিত করা ছাড়া বিকল্প আর খুব বেশি ছিল না।
আইপিএলের ওয়েবসাইটে মঙ্গলবার ভারতীয় সময় দুপুর দেড়টার দিকে প্রকাশিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিসিসিআই ও আইপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের জরুরি সভার পর সর্বসম্মতিক্রমে এবারের টুর্নামেন্ট স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ক্রিকেটার, সাপোর্ট স্টাফ ও সংশ্লিষ্ট সবার স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত, বলা হয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে। সবাইকে নিজ নিজ দেশে ফেরার জন্য সম্ভব সবরকম সহায়তা ভারতীয় বোর্ড করবে বলে জানানো হয়। আইপিএলে এবার বাংলাদেশ থেকে আছেন সাকিব আল হাসান ও মুস্তাফিজুর রহমান।
জৈব-সুরক্ষা বলয়ে শুরুতে কলকাতার দুই ক্রিকেটার বরুন চক্রবর্তী ও সন্দিপ ওয়ারিয়ার কোভিড আক্রান্ত হন। পরে চেন্নাইয়ের বোলিং কোচ লক্ষ্মিপতি বালাজি ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা একজন পজিটিভ হন। এর প্রেক্ষিতে, রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালোরের সঙ্গে কলকাতার সোমবারের ম্যাচ ও রাজস্থান রয়্যালসের সঙ্গে চেন্নাইয়ের বুধবারের ম্যাচ স্থগিত করা হয়।
এরপর মঙ্গলবার কোভিড শনাক্ত হয় ঋদ্ধিমান ও অমিতের শরীরের।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবর, একটি ফ্র্যাঞ্চাইজি জোরালো ভূমিকা রাখে টুর্নামেন্ট স্থগিত করার পেছনে। ব্রডকাস্টার স্টার ইন্ডিয়াও আপাতত আসর স্থগিত করার পক্ষে বলে জানায় পত্রিকাটি।
ভারতে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে কোভিড মহামারী। দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগের মঙ্গলবারের তথ্য অনুযায়ী, সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত সাড়ে তিন লাখের বেশি, মৃত্যু প্রায় সাড়ে ৩ হাজার। গত শনিবার আক্রান্ত ছিল চার লাখের বেশি। সব মিলিয়ে কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা সেখানে ছাড়িয়ে গেছে ২ কোটি। এই অবস্থার মধ্যেই আইপিএল চালিয়ে নেওয়ায় সপ্তাহ দুয়েক ধরেই চলছিল সমালোচনার স্রোত।
আইপিএল যদিও জৈব-সুরক্ষা বলয়ে চলছিল, তবে এই বলয় কতটা সুরক্ষিত, সেই প্রশ্নও উঠছিল নিয়মিত। কিছুদিন আগে আইপিএল ছেড়ে দেশে ফিরে যাওয়া অস্ট্রেলিয়ান লেগ স্পিনার অ্যাডাম জ্যাম্পার মতে, এই বলয় ছিল বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। ৬ মাস আগে সংযুক্ত আরব আমিরাতে হওয়া আইপিএলের বলয় তার মতে ছিল অনেক সুরক্ষিত।
গত ২৭ এপ্রিল বিসিসিআই অবশ্য দাবি করে, এই সুরক্ষা-বলয় সম্পূর্ণ নিরাপদ। কিন্তু ফাঁক যে ছিল, তা স্পষ্ট হয় একের পর এক আক্রান্ত হওয়াতেই।
সামনে দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন সিরিজ ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপসহ যে ঠাসা সূচি, তাতে স্থগিত হওয়া এই আসর আয়োজন করা বিসিসিআইয়ের জন্য হবে বড় চ্যালেঞ্জ। অক্টোবর-নভেম্বরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ভারতের আয়োজন করা নিয়ে থেকে যাচ্ছে শঙ্কার অবকাশ।