তিমির বনিক, মৌলভীবাজার থেকে: মৌলভীবাজার সদর উপজেলার শ্রীমঙ্গল রোডস্থ জেনারেল প্রাইভেট হাসপাতালের উত্তর পাশের কবরস্থানের সামনে প্রতিনিয়তই যে বিষয়টি চোখে পড়ে এবং আফসোস হয় আমরা সবাই একদিন মরতে হবে এবং কবরই হবে আমাদের শেষ ঠিকানা। অথচ সেখানেই ময়লা ফেলে দুর্গন্ধ ছড়ানো হচ্ছে এবং কবরস্থানের পবিত্রতা নষ্ট করা হচ্ছে।
যে জায়গায় আমাদের ক্ষণস্থায়ী বসবাস সেই জায়গা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে কতই না চেষ্টা করি অথচ যে জায়গায় আমাদের চিরস্থায়ী বসবাস হবে কবরস্থান সেই জায়গাটা পরিস্কার এবং পবিত্র না রেখে বরং ময়লা আবর্জনার স্তূপ তৈরি করে কবরস্থানের পবিত্রতা নষ্ট করা হচ্ছে।
যে জায়গাটির কথা নিয়ে লিখছি তা মৌলভীবাজার সদর উপজেলার শ্রীমঙ্গল রোডস্থ জেনারেল প্রাইভেট হাসপাতাল নামক প্রতিষ্ঠানের দক্ষিণ পাশ এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কার্যালয়ের উত্তর পাশের মধ্যস্থ। খোজ নিয়ে জানা একটি পারিবারিক কবরস্থান। যার উত্তরে জেনারেল প্রাইভেট হাসপাতাল এবং কবরস্থানের দেয়ালে এবং আলাদা করে সাইনবোর্ড ঝুলানো রয়েছে কবরস্থানের পবিত্রতা রক্ষা করুন।
কিন্তু কে শুনে কার কথা। হরহামেশাই এভাবে ময়লা ফেলে দুর্গন্ধ ছড়ানো হচ্ছে এবং কবরস্থানের পবিত্রতা নষ্ট করা হচ্ছে। কবরস্থানের আশপাশের কয়েকজন লোক কতৃক জানা যায় এটি একটি পারিবারিক কবরস্থান তবে নাম বলতে পারেন নি। তাদেরও দেখা শুনা করার কি প্রয়োজন ছিল না?
দ্বিতীয়ত প্রতিদিনই ময়লা দেখি তবে পরিস্কার করতে কাউকে দেখি না আজকে যখন রাতে ছবি তুলতে গেলাম তখন দেখলাম কবরস্থানের উত্তর পাশ অবস্থিত জেনারেল প্রাইভেট হাসপাতালের একজন নারী পরিচ্ছন্ন কর্মী কবরস্থানের যেখানে ময়লা ফেলা নিষেধ সেখানেই ময়লা ফেলে যাচ্ছেন। এর একটু দক্ষিণ পাশে দাড়িয়ে থাকা একটি ময়লার ভ্যান গাড়ি যাতে ময়লা ফেলে রাখা হয়েছে।
দু’টি স্পর্শ কাতর বিষয় হলো যে, এক. ময়লা যারা ফেলে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে তা থেকে বিভিন্ন রোগ জীবানু ছড়াচ্ছে, বিশেষ করে মৌলভীবাজার সদরের বেরীর পাড় থেকে শ্রীমঙ্গল সড়কে অসংখ্য প্রাইভেট হাসপাতাল ও সরকারি হাসপাতাল রয়েছে। এতে করে অসংখ্য বয়স্ক, নারী পুরুষ বিশেষ করে শিশুরা চিকিৎসা নিতে আসে কিন্তু এই ময়লার স্তূপের দুর্গন্ধের কারনে আরো সুস্থ হওয়ার চেয়ে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যার কারনে ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা ফেলতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের দায়িত্ব বলে মনে করি।
দুই. অথচ যদি ঈমানদার হতেন, তাহলে রাসূলুলাহ সালালাহু আলাইহি ওয়া সালাম তার জন্য দোআ করার জন্য কবরের পাশে দাঁড়াতেন। হাদীসে এসেছে, রাসূলুলাহ সালালাহু আলাইহি ওয়া সালাম বলেছেন, যে কেউ জানাযার সালাত শেষ হওয়া পর্যন্ত থাকবে তার জন্য এক কীরাত, আর যে কেউ সালাত শেষ হওয়ার পর দাফন পর্যন্ত থাকবে তার জন্য দুই কীরাত। বলা হল, কেমন দুই কীরাত? তিনি বললেন, তার ছোটটি ওহুদ পাহাড়ের সমতুল্য। [বুখারী: ১৩২৫; মুসলিম: ৯৪৫] অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূলুলাহ সালালাহু আলাইহি ওয়া সালাম যখন দাফন শেষ করতেন, তখন তার কবরের পাশে দাঁড়াতেন এবং বলতেন, তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য ক্ষমা চাও, আর তার জন্য স্থিতি বা দৃঢ়তার জন্য দো’আ কর; কেননা তাকে এখন প্রশ্ন করা হচ্ছে। [আবু দাউদ: ৩২২১] সূরা হজ্জ এর ২২ নং আয়াতের তফসিরে যা উল্লেখ রয়েছে আর কিয়ামত আসবেই, এতে কোন সন্দেহ নেই এবং কবরে যারা আছে নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের পুনরুত্থিত করবেন। আল-বায়ান
(১) উপরের আয়াতগুলোতে মানুষের জন্মের বিভিন্ন পর্যায়, মাটির উপর বৃষ্টির প্রভাব এবং উদ্ভিদ উৎপাদনকে পাঁচটি সত্য নির্ণয়ের প্রমাণ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। সে সত্যগুলো হচ্ছেঃ একঃ আল্লাহই সত্য। দুইঃ তিনি মৃতকে জীবিত করেন। তিনঃ তিনি সর্বশক্তিমান। চারঃ কেয়ামত অনুষ্ঠিত হবেই। পাঁচঃ যারা মরে গেছে আল্লাহ নিশ্চয়ই তাদের সবাইকে জীবিত করে উঠবেন।
তাফসীরে জাকারিয়া
আর কিয়ামত অবশ্যম্ভাবী, এতে কোন সন্দেহ নেই। আর অবশ্যই আল্লাহ কবরে যারা আছে তাদেরকে পুনরুত্থিত করবেন। তাফসীরে জাকারিয়া ( কোরআন ও হাদীসের রেফারেন্স সংগৃহীত)
পরিশেষে এটাই বলবো, উক্ত কবরস্থানের পাশে ময়লা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। এবং যারা নিয়মিত ময়লা ফেলে পরিবেশ দূষণ করছে এবং কবরস্থানের পবিত্রতা নষ্ট করছে। আল্লাহ তাদের হেদায়েত দান করুন। এবং সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলবো জেনারেল প্রাইভেট হাসপাতালসহ যারা পরিবেশ দূষণ করছে এদের বিরুদ্ধে পরিবেশ দূষণ করার কারণে ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।