
হঠাৎ করেই তুমুল সমালোচনা ও বিতর্কের কবলে ওয়েব সিরিজ। বিশেষ করে করোনার সময়ে চলচ্চিত্র ও টিভি নাটকে যখন ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে, ঠিক তখনই সুযোগটা কাজে লাগাচ্ছেন এক শ্রেণির অসাধু নির্মাতারা। অনলাইনে প্রচার হওয়া এসব ওয়েব সিরিজের ক্ষেত্রে কোনো বিধি-নিষেধ এমনকি সেন্সর না থাকায় নির্মাতারা ইচ্ছেমতো দৃশ্যধারণ করছেন। যার দরুণ অশ্লীলতার জোরালো অভিযোগ উঠেছে এর নির্মাতা ও কলাকুশলীদের বিরুদ্ধে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি ওয়েব সিরিজকে নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে। তার মধ্যে রোজার ঈদে অবমুক্ত হওয়া ‘আগস্ট ১৪’, ‘সদরঘাটের টাইগার’ ও ‘বুমেরাং’ ওয়েব সিরিজ তিনটি উলেস্নখযোগ্য। এসব ওয়েব সিরিজের নির্মাতা ও অভিনয় শিল্পীরা জড়িয়েছে কথার লড়াইয়ে। কেউ কেউ বিবৃতি দিয়ে পক্ষ নিয়েছে বিতর্কিত ওয়েব সিরিজগুলোর।
তবে নতুন খবর হচ্ছে, নাট্যাঙ্গনের অর্ধশতাধিক বিশিষ্টজন ও সিনিয়র তারকারা এসব অশালীন ও ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে ভরপুর ওয়েব সিরিজের প্রতি নিন্দা জানিয়েছেন। পাশাপাশি ভবিষ্যতে এসব দৃশ্য ধারণে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। শনিবার রাতে অভিনেতা সৈয়দ হাসান ইমাম, মুস্তাফা মনোয়ার, মামুনুর রশীদ, আলী যাকের, আবুল হায়াত, দিলারা জামান, ফেরদৌসী মজুমদার, আসাদুজ্জামান নূর, এটিএম শামসুজ্জামান, ড. ইনামুল হক, আফজাল হোসেন, শর্মিলী আহমেদ, সারা যাকের, ঝুনা চৌধুরী, হারুন অর রশীদ, তারিক আনাম খান, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, ফেরদৌস হাসান, সালাহউদ্দিন লাভলু, শহীদুজ্জামান সেলিম, নাদের চৌধুরী, আজিজুল হাকিম, ফজলুর রহমান বাবু, তৌকীর আহমেদ, জাহিদ হাসান, মাহফুজ আহমেদ, গাজী রাকায়েত, ইরেশ যাকের, শমী কায়সার, বিপাশা হায়াত, তানিয়া আহমেদ, ত্রপা মজুমদার, শহীদুল আলম সাচ্চু, তুষার খান, চয়নিকা চৌধুরী, ইন্তেখাব দিনার, এজাজ মুননা, শাহেদ শরীফ খান, দীপা খন্দকার, বৃন্দাবন দাস, বিজরী বরকতউলস্নাহ, তারিন জাহান, তানভীন সুইটি, রিচি সোলায়মান, চঞ্চল চৌধুরী, মীর সাব্বির, এস এ হক অলিক, আহসান হাবিব নাসিম ও সাজু মুনতাসিরসহ ৭৯ জন স্বাক্ষরিত একটি বিবৃতি গণমাধ্যমের হাতে আসে।
‘বিভিন্ন ওয়েব পস্নাটফর্ম এবং ইউটিউব চ্যানেলে প্রদর্শিত নাটক সম্পর্কে দেশের বিশিষ্টজনদের অভিমত’ শিরোনামের এই বিবৃতিতে এসব ওয়েব সিরিজ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
এতে বলা হয়, ‘উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করা যাচ্ছে অনেকদিন ধরে কিছু ইউটিউব এবং ওয়েব পস্নাটফর্মে অত্যন্ত দায়িত্বহীনতার সঙ্গে কিছু নির্মাতা প্রযোজক, নাট্যকার ও অভিনয়শিল্পী কুরুচিপূর্ণ নাটক পরিবেশন করে আসছে। এই নাটকগুলোর মধ্যে কাহিনীর প্রয়োজনে নয় একেবারেই বিকৃত রুচিসম্পন্ন নাটক নির্মাণ করে বিবেকবান ও সচেতন দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। আমরা এসব কাজকে তীব্রভাবে ভর্ৎসনা করি, নিন্দা জানাই।’
সিনিয়র শিল্পীদের স্বাক্ষরিত এই বিবৃতে আরও বলা হয়, ‘বাংলাদেশের টেলিভিশনের নাটক জন্মলগ্ন থেকেই পারিবারিক বিনোদন মাধ্যম হওয়ায় দর্শকের রুচি ও মূল্যবোধ নির্মাণে ভূমিকা পালন করে আসছে। বাংলাদেশের বেসরকারি টেলিভিশন আসার পর কিছু প্রতিভাবান নাট্যকার, পরিচালক, অভিনেতা অভিনেত্রী ও কলাকুশলী বাংলাদেশের এই মাধ্যমকে এক নতুন মহিমায় স্থাপন করেছিল। কিন্তু কিছু কিছু চ্যানেলে নাটকের মান এমনভাবে নেমে এসেছে যে বাংলাদেশের নাটক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে অনেক দর্শক।’
যৌনতা ও অশ্লীলতাকে তিব্র ভাষায় নিন্দা জানিয়ে এসব শিল্পীরা আরও বলেন, ‘এর মধ্যেও কিছু পরিচালকরা কিছু ভালো কাজ করার তাগিদও অনুভব করেছে। যার প্রতিফলন আমরা প্রায়ই চ্যানেলগুলোতে দেখতে পাই। কিন্তু এর মধ্যে আবার অনলাইন প্রচার মাধ্যমগুলোতে অবাধ প্রচারের সুযোগে যৌনতা এবং ভায়োলেন্সকে উপজীব্য করে অশ্লীলতাকে আশ্রয় করেছে। সম্প্রতি সেই সব নাটক ওয়েবসাইট ও ইউটিউবে প্রদর্শিত হয়ে বাঙালির চিরন্তন সংস্কৃতি ও মূল্যবোধকে আঘাত হানতে শুরু করেছে। এর আগে ভাষাকে বিকৃত করার মাধ্যমে কিছু পরিচালক নাটক নির্মাণ করায় জনরোষে পড়ে এবং মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনায় কিছুটা প্রশমিত হয়।’ এতে আরও বলা হয়, ‘আশির দশকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে অশ্লীলতার প্রবণতার ফলে দর্শক সিনেমা বর্জন করেছিল। একইভাবে দর্শক যদি আমাদের নাটক বর্জন করতে থাকে তাহলে তা হবে অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।