বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার জানিয়েছেন বিমানবন্দরে উপসর্গ ধরা পড়লে আইসোলেশনে পাঠানো হবে ইতালি থেকে ফেরত আসা ১২৫ জন বাংলাদেশিকে।
বিবিসি বাংলাকে তিনি জানান, বিমানবন্দরে নামার পর তাদের শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হবে। যাদের উপসর্গ থাকবে তাদের আইসোলেশনে রাখা হবে।
“উপসর্গ থাকলে তাদেরকে আশকোনার হজক্যাম্পে আইসোলেশনে রাখা হবে। বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে ভর্তি করা হবে।”
তিনি জানান উপসর্গ না থাকলে তারা বাড়িতে থাকতে পারবে। কিন্তু তাদের কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং করা হবে এবং তাদের সাথে যোগাযোগ রাখা হবে। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো আসেনি বলে জানান তিনি।
এদিকে, বাংলাদেশিদের বহনকারী বিমানটি শুক্রবার ভোর রাতের দিকে (রাত ২টা ১০ মিনিটে) ঢাকায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। বর্তমানে এই বাংলাদেশিরা কাতারে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিমানবন্দরের পরিচালক তৌহিদ উল আহসান।
তিনি জানিয়েছেন, ১২৫ জন বাংলাদেশিকে কোয়ারেন্টিনে নেয়ার বিষয়ে তাদের কাছে কোন ধরনের নির্দেশনা এখনো আসেনি। কোন নির্দেশনা আসলে তা মেনে চলা হবে বলেও জানান মি. আহসান।
নিষেধাজ্ঞা স্বত্ত্বেও কেন গেলো ফ্লাইটটি?
গত ৭ই জুলাই বাংলাদেশ থেকে যাওয়া যাত্রীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক করোনাভাইরাস সংক্রমিত ব্যক্তি পাওয়ায় বাংলাদেশ থেকে সব ফ্লাইট এক সপ্তাহের জন্য নিষিদ্ধ করে ইতালি।
নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ঐ ফ্লাইটটি কীভাবে যাত্রা করলো, সে বিষয়ে ইমিগ্রেশন পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ইতালির নিষেধাজ্ঞা আসার আগেই ফ্লাইটটি শিডিউলড ছিল এবং সেটি ছেড়ে যায়।
পরিচয় প্রকাশ না করে ওই কর্মকর্তা বলেন, ধারণা করা হচ্ছিল যে নিষেধাজ্ঞা বলবৎ হওয়ার আগেই সেটি পৌঁছে যাবে। কিন্তু সেটি সম্ভব হয়নি।
ফ্লাইটটি কিছুটা দেরি করায় পৌঁছানোর আগেই ইতালিতে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়। একই তথ্য দিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তারও।
আয়েশা আক্তার বলেন, ওই বাংলাদেশিরা বৈধভাবেই ইতালিতে যাচ্ছিল। তবে তারা জানতো না যে ইতালি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
“বিমান পৌঁছানোর টাইম লিমিট ছিল। কিন্তু বিমানটি দেরি করায় সেই টাইমে যেতে পারেনি। বাংলাদেশিরা ওই টাইমের মধ্যে পড়ে গেছে। টাইম লিমিট ক্রস করে প্লেনটা যাওয়াতে তাদেরকে ব্যাক করে দেয়া হয়েছে।”
বাংলাদেশিদের নিয়ে ইতালির উদ্দেশ্যে ঐ ফ্লাইটটি পরিচালনা করেছিল কাতার এয়ারওয়েজ। তবে এ বিষয়ে কাতার এয়ারওয়েজের সাথে যোগাযোগ করে তাৎক্ষণিক ভাবে কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
ইতালি থেকে ফেরত আসাদের পরীক্ষা করানোর বিশেষ নির্দেশ
গত সপ্তাহে রোমের কাছে ইতালির লাৎজিও অঞ্চলে ঢাকা থেকে আসা সব বাংলাদেশিদের করোনাভাইরাস টেস্ট করানোর জন্য বিশেষ আদেশ জারি করা হয়েছিল।
গত সোমবার ২২৫ জন যাত্রী ঢাকা থেকে ইতালি পৌঁছান এবং এদের মধ্যে পরীক্ষা করে ২১ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়। এ তথ্য জানিয়ে লাৎজিওর ঊর্ধ্বতন একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, “একটি ভাইরাল বোমা আমরা নিষ্ক্রিয় করেছি।”
তবে লাৎজিও’র প্রেসিডেন্ট নিকোলা জিনগারেত্তি তার নির্দেশপত্রে ৩২ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার কথা জানিয়েছেন। যদিও এটি নিশ্চিত নয় যে এই সংখ্যা সোমবার শনাক্ত হওয়া ২১ জনকে সহ গণনা করা হয়েছে কি-না।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ইতালিতে ১৪ হাজার ৭০৯ জন করোনাভাইরাস পজিটিভ ব্যক্তি এখন আছেন এবং এর মধ্যে লাৎজিওতে আছেন ৮৭০ জন। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ৪৫ হাজার বাংলাদেশি ইতালিতে বসবাস করছেন।
উৎসঃ বিবিসি বাংলা