বিশিষ্ট পাখি পর্যবেক্ষক ও বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ ড. রেজা খান সদ্য চালু হওয়া ব্লু ভিসা পাওয়া প্রথম ব্যক্তিদের মধ্যে একজন। সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভেতরে ও বাইরে পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা রাখা ব্যক্তিদের এই ভিসা দেওয়া হয়। খবর গালফ নিউজ।
ব্লু ভিসা একটি ১০ বছরের আবাসিক ভিসা। পরিবেশ সংরক্ষণ ও টেকসই উন্নয়নে অসাধারণ অবদান রাখা ব্যক্তিদের দেওয়া করা হয়। গতকাল (১১ জানুয়ারি) দুবাইয়ে ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্ট সামিটে পরিবেশ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ফেডারেল আইডেন্টিটি, সিটিজেনশিপ, কাস্টমস ও পোর্টস সিকিউরিটি কর্তৃপক্ষ (আইসিপি) এটি ঘোষণা করে।
ড. রেজা খান এর আগে দুবাই মিউনিসিপ্যালিটি পাবলিক পার্ক ও বিনোদন সুবিধা বিভাগের প্রধান বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি ২০১৭ সালে দুবাই চিড়িয়াখানা বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত এর দায়িত্বেও ছিলেন। গতকাল তিনি ২০ জন টেকসই উন্নয়ন চ্যাম্পিয়নের সঙ্গে ব্লু ভিসা লাভ করেন।
গালফ নিউজকে ড. রেজা খান বলেন, “এই সম্মাননা ও স্বীকৃতির জন্য আমি জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের প্রতি গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। সংযুক্ত আরব আমিরাত দীর্ঘদিন ধরে শুধু মানুষের জন্যই নয়, প্রকৃতির জন্য উন্নতি, সমৃদ্ধি ও মানবিকতার পথপ্রদর্শক। এই উদ্যোগ দেশটির পরিবেশ সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতির স্বাভাবিক ধারাবাহিকতা, যা সত্যিকারের ‘খলিফা’-র দায়িত্ব বহন করে। আমাদের সৃষ্টিকর্তা যে দায়িত্ব দিয়েছেন, তা হলো পৃথিবীকে রক্ষা ও লালন করা।”
৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আমিরাতে বসবাস করা ড. খান পাখি, বন্যপ্রাণী ও সংরক্ষণ বিষয়ে এক চলমান জ্ঞানের ভাণ্ডার। আমিরাতে পাখি ও বন্যপ্রাণীর শনাক্তকরণ ও সংরক্ষণে তার অবদান অসামান্য। তিনি একজন জনপ্রিয় লেখক। ব্যক্তিগতভাবে তিনি মরুভূমি গবেষণার কাজও চালিয়ে যাচ্ছেন।
ড. রেজা খান বলেন, “যখন কেউ সত্যিকারভাবে তার কাজকে ভালোবাসে, তখন সে নিঃস্বার্থভাবে তাতে নিজেকে উৎসর্গ করে—স্বীকৃতি বা পুরস্কারের অপেক্ষায় না থেকে। আজীবন প্রকৃতিপ্রেমী ও সংরক্ষণকর্মী হিসেবে, আমার আবেগ সবসময়ই প্রাকৃতিক জগতের বিস্ময়ের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। মাঠে সময় কাটানো, বন্যপ্রাণী পর্যবেক্ষণ, ক্যামেরায় তাদের সৌন্দর্য বন্দি করা, তাদের আচরণ ও পরিবেশগত পরিবর্তনের ওপর গবেষণা— এসবই আমার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।”
তিনি আরও বলেন, “৪০ বছর ধরে সংযুক্ত আরব আমিরাতে কাজের সুবাদে আমি বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক পরিবেশ ঘুরে দেখেছি। আল আইন চিড়িয়াখানার কিউরেটর হিসেবে কাজ করা, দুবাই চিড়িয়াখানার দেখভাল করা, সাফারি প্রকল্পের পরিকল্পনা করা, আল মারুম মরুভূমির জীববৈচিত্র্য নিয়ে গবেষণা— এসব অভিজ্ঞতাই আমার জীবনের মূল সম্পদ। গত বছর অবসর নেওয়ার পর কল্পনাও করিনি, জীবনের পরবর্তী অধ্যায় এত গভীর এবং সম্মানজনকভাবে শুরু হবে।”
ড. খানের ব্লু ভিসার মেয়াদ ২০৩৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
তিনি ও তার স্ত্রী নুরুন নাহার তিন সন্তান ও ছয় নাতি-নাতনির গর্বিত অভিভাবক। তাদের সকলেই সংযুক্ত আরব আমিরাতে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।
ড. খান বলেন, “আমার নাতি-নাতনিরা ঠিক আমার মতোই উচ্ছ্বসিত ছিল। তারা এসেছিল আমার নতুন অধ্যায় উদযাপন করতে।”