অনলাইন ডেস্কঃ দিন কয়েক আগে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে গিয়ে কাশ্মীরীদের প্রতি সংহতি জানিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে কটূক্তি করেছিলেন পাকিস্তানের ক্রিকেট তারকা শহীদ আফ্রিদি। সেই বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হতেই ভারতের ক্রিকেট সমাজে তোলপাড়। ভারতের সাবেক-বর্তমান ক্রিকেটারদের মনে যেন ক্ষোভের আগুন জ্বেলে দিয়েছেন আফ্রিদি।
আফ্রিদির সঙ্গে এমনিতেই গৌতম গম্ভীরের সম্পর্ক ভালো নয়। দুজনের মধ্যে কথার লড়াই চলে আসছে অনেকদিন ধরে। গম্ভীর পাকিস্তানের সাবেক অলরাউন্ডারের সাম্প্রতিক বক্তব্যের জেরে তীব্র ভাষায় তাকে আক্রমণ করেছেন আগেই। পরে গম্ভীরের সঙ্গে সুর মিলিয়ে আফ্রিদির বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরেছেন হরভজন সিং। পরে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন যুবরাজ সিং ও শিখর ধাওয়ান।
সর্বশেষ আফ্রিদিকে কড়া ভাষায় জবাব দিয়েছেন সুরেশ রায়না। অনেকদিন ভারতীয় দলের বাইরে থাকা বাঁহাতি ব্যাটসম্যান বলেছেন, ‘নিজেকে প্রাসঙ্গিক রাখার জন্য একটা লোক কী না কী করতে পারে! তোমার ব্যর্থ দেশের জন্য করো। আর কাশ্মীরকে অব্যাহতি দাও। কাশ্মীর নিয়ে কথা বলতে যেও না। আমি একজন গর্বিত কাশ্মীরী। কাশ্মীর চিরকাল ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়েই থাকবে। জয় হিন্দ।’
বিশ্বের প্রায় সব দেশের মতো পাকিস্তানও করোনাভাইরাস মহামারিতে আক্রান্ত। খেলোয়াড়ি জীবনে মাঠে তীব্র প্রতিপক্ষ থাকলেও আফ্রিদির সঙ্গে এমনিতে ভালো সম্পর্কই ছিল যুবরাজের। আফ্রিদির ডাকে সাড়া দিয়ে গত মাসে শহীদ আফ্রিদি ফাউন্ডেশনকে অর্থসাহায্য করেছিলেন ভারতের সাবেক তারকা অলরাউন্ডার, যদিও ভারতের অনেকেই যুবরাজের এই ‘ঔদার্য’ ভালোভাবে নেয়নি।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে আফ্রিদির মন্তব্যে এখন বেজায় চটেছেন যুবি, টুইট করেছেন, ‘আমি কোনওভাবেই ওর বক্তব্য মানবো না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উদ্দেশে শহীদ আফ্রিদি যা বলেছো তাতে আমি ভীষণ হতাশ। আমি ভারতের হয়ে খেলার মাঠে প্রতিনিধিত্ব করেছি। তাই আমার পক্ষে তোমার বক্তব্য মেনে নেওয়া অসম্ভব। মানবতার খাতিরে আমি তোমার ডাকে সাড়া দিয়েছিলাম। কিন্তু আর নয়।’ যুবরাজের পর আফ্রিদি ফাউন্ডেশনের হয়ে প্রচারে নামেন হরভজন সিং। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রসঙ্গে আফ্রিদির বক্তব্যের পর বিগড়ে গেছেন ভারতের সাবেক অফ স্পিনারও, ‘আফ্রিদি যা বলেছে তা খুব দু:খজনক। আমাদের দেশ ও প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে বাজে কথা বলা গ্রহণযোগ্য নয়। সত্যি বলতে, ও আমাদের অনুরোধ করেছিল ওর সংস্থার হয়ে কাজ করতে। সরল বিশ্বাসে আমরা ওকে সাহায্য করেছি। ওর সঙ্গে আমাদের আর কোনও সম্পর্ক নেই। ওর উচিত নিজের দেশ ও নিজের সীমার মধ্যে থাকা।’
এর আগে আফ্রিদির বিরুদ্ধে টুইটারে ক্ষোভ উগরে দেন গম্ভীর, ‘একজন ১৬ বছর বয়সী মানুষ আফ্রিদি বলছে পাকিস্তানের ৭ লাখ সেনাসদস্য আছে, ২০ কোটি মানুষ আছে। অথচ ৭০ বছর ধরে ওরা কাশ্মীরের জন্য ভিক্ষা চেয়েই চলেছে। আফ্রিদি, ইমরান খান, বাজোয়ার মতো লোক পাকিস্তানের মানুষকে বোকা বানাতে ভারত ও নরেন্দ্র মোদির নামে যা খুশি বিষ ছড়াতে পারে, কিন্তু ওরা কোনওদিন কাশ্মীর পাবে না। আর বাংলাদেশের কথা মনে করো?’ গম্ভীর একইসঙ্গে আফ্রিদি, ইমরান খান ও পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল বাজোয়াকে ‘জোকার’ বলেও কটাক্ষ করেন।
ভারতের ওপেনার শিখর ধাওয়ান আফ্রিদির উদ্দেশে হিন্দিতে টুইট করেছেন, ‘এই সময় গোটা পৃথিবী যখন করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়ছে, তখনও তুমি কাশ্মীর নিয়ে ভাবছো। কাশ্মীর আমাদের ছিল, আমাদের আছে, আমাদেরই থাকবে। চাইলে ২২ কোটি নিয়ে আসো। আমাদের কাছে তা এক লাখ বা তার চেয়ে একটু বেশি। বাকিটা নিজে গুনে নিও।’
আফ্রিদির যে কথায় ভারতীয় ক্রিকেটরদের মনে ক্ষোভের আগুন জ্বলছে তা কী ছিল দেখে নেওয়া যাক। ‘বিশ্ব এখন বড় অসুখে আক্রান্ত। কিন্তু তার চেয়েও বড় অসুখ রয়েছে নরেন্দ্র মোদির মস্তিষ্কে। মোদি কাশ্মীরে ধর্মের নামে নৈরাজ্য চালাচ্ছেন। সেখানে সাত লাখ সেনা মোতায়েন করেছেন, যা পাকিস্তানের মোট সেনা সংখ্যার সমান’- বলেছিলেন আফ্রিদি।