হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর নির্বাচিত হয়েছেন আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী। রোববার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে সংগঠনের খাস ও কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক শেষে আমির হিসেবে তার নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়। এদিন সকাল দশটায় খিলগাঁও মাখজানুল উলূম মাদ্রাসায় হেফাজত মহাসচিবের কার্যালয়ে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় ও খাস কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। নতুন আমীর আল্লামা শাহ মুহিদুল্লাহ বাবুনগরীর সভাপতিত্বে বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন কেন্দ্রীয় ও খাস কমিটির নেতৃবৃন্দ। বৈঠকের শুরুতে সদ্য প্রয়াত আমীর আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী রহ.-এর মাগফিরাত ও দরজা বুলন্দি কামনা করা হয়।
গত ১৯ আগস্ট হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী মারা যান। ওইদিন রাতেই আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীকে হেফাজতের ভারপ্রাপ্ত আমির ঘোষণা করা হয়। সেই হিসেবে ১০ দিন পরই ভারমুক্ত হলেন মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী। মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী সম্পর্কে সদ্য প্রয়াত জুনায়েদ বাবুনগরীর মামা।
তিনি হেফাজতের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্বে ছিলেন। তিনি ১৯৩৪ সালে ফটিকছড়ির বাবুনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া আজিজুল উলুম বাবুনগর মাদরাসার মহাপরিচালক। তিনি ইসলামী ঐক্যজোট, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ ও আল হাইআতুল উলয়া-লিল-জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশের শীর্ষ পদে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
বৈঠকে হেফাজত আমীর আল্লামা মুহিদুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, হেফাজতের আমীর আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী (রাহ.)এর ইন্তেকালে ইসলামী নেতৃত্বে যে অপুরণীয় ক্ষতি হয়েছে, তা সহজে পূর্ণ হওয়ার নয়। তিনি একাধারে একজন বিখ্যাত মুহাদ্দীস, শাইখুল হাদীস ও ধর্মীয় আন্দোলনের আপোষহীন সিফাসালার ছিলেন। এমন নেতৃত্ব আগামী শতবছরেও জাতির ভাগ্যে জুটবে কিনা সন্দেহ আছে। আমি মরহুম আমীরের মাগফিরাত কামনা করি। সাথে সাথে দেশ ও সারা বিশ্বের মুসলিমদের কাছে মরহুম আমীরের জন্য দুয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
হেফাজত আমীর বলেন, আমি বায়োবৃদ্ধ মানুষ। সকলে মিলে আমাকে আমীরের দায়িত্ব দিয়েছেন। শারীরিক বিভিন্ন অসুস্থতার কারণে দায়িত্ব পালন করা আমার জন্য কঠিন হলেও সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো, ইনশাআল্লাহ।
তিনি আরো বলেন, হেফাজত সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক ঈমানী আন্দোলনের সংগঠন। এই সংগঠনের কোনও রাজনৈতিক উচ্চাবিলাস বা কর্মসুচি নেই। আমরা সেভাবেই হেফাজতকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবো, ইনশাআল্লাহ।
বৈঠকে হেফাজত মহসচিব আল্লামা নূরুল ইসলাম জিহাদী বলেন, আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরীর ইন্তেকালে দেশবাসী একজন ঈমানদার, সৎ ও সাহসী রাহবারকে হারিয়েছে। তিনি শাইখুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী রহ এর হাত ধরে হেফাজতের মহাসচিবের দায়িত্ব পেয়েছিলেন। যথাযথভাবে তিনি সে দায়িত্ব পালন করেছেন। শাইখুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী রহ. এর পরে সারা দেশে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য নেতৃত্বে ছিলেন আল্লামা বাবুনগরী। জীবদ্দশায় তিনি কখনো আপোষ করেননি।
তিনি বলেন, আল্লামা শফির মৃত্যুর পর সারা দেশের আলেম-উলামা ও হেফাজত নেতৃবৃন্দের সমর্থনে আল্লামা বাবুনগরীকে আমীরের দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি সেখানেও সফলতার পরিচয় দিয়েছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, মহান আল্লাহর হুকুমে তাকে পরপারের ডাকে সাড়া দিয়ে চলে যেতে হয়েছে। শাইখুল ইসলামের ইন্তেকালের এক বছরের মধ্যেই আল্লামা বাবুনগরীর ইন্তেকাল আমাদের অসহায় করে তুলেছে। এমন প্রধান দুইজন নেতৃত্বের চলে যাওয়ায় হেফাজতসহ দেশের ইসলামী অঙ্গনের জন্য বড় ধরণের ক্ষতি সম্মুখীন হয়েছে। আমরা আমাদের মরহুম দুই আমীরের জন্যই বিশ্বের সকল মুসলমাদের কাছে দুয়া চাই। মহান আল্লাহ যেন তাদের জান্নাতের উঁচু মাকাম দান করেন।
হেফাজত মহাসচিব আরো বলেন, আকস্মিক আমীরে হেফাজত আল্লামা বাবুনগরীর ইন্তেকালে সকলের পরামর্শে আমাদের আরেক প্রধান মুরব্বী ও হেফাজতের সাবেক সিনিয়র নায়েবে আমীর এবং প্রধান উপদেষ্টা আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীকে আমীরের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। হযরত অসুস্থ শরীর নিয়েই সবার অনুরোধে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। আমাদের বিশ্বাস সাবেক আমীরদের মতো তিনিও দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়ে যাবেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হেফাজতের সকল কার্যক্রম নিয়ম অনুযায়ী চলমান থাকবে।
বৈঠকে কওমী মাদরাসা খোলা, বন্দী উলামায়ে কেরামের মুক্তি, ঢাকায় মুহতামিম সম্মেলন ও হেফাজতের গঠনতন্ত্র প্রণয়ন ও প্রকাশের বিষয়ে আলোচনা হয়।