ভয়াবহ সংঘাত-সহিংসতায় প্রায় দু’সপ্তাহ ধরেই আতঙ্কের নগরী সুদানের রাজধানী খার্তুম। সংঘর্ষের ভয়াবহতা কমার বদলে আরও আগ্রাসী হয়ে উঠছে দুপক্ষ। প্রতি পদে মৃত্যুর আতঙ্ক নিয়ে দেশ ছেড়ে পালাচ্ছে হাজারো মানুষ। বিদেশিদেরও সরিয়ে নিতে চলছে অভিযান। খবর আল জাজিরার।
সংঘাতময় সুদানের রাজধানী খার্তুম থেকে যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের সরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয় মঙ্গলবার। ব্রিটিশ প্রশাসন জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ৩ শতাধিক নাগরিককে নিরাপদে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে দেশে। এখনও আটকা পড়ে আছে প্রায় ৪ হাজার। সুদান থেকে নিরাপদে ফেরা এক ব্রিটিশ নাগরিক বলেন, সেখানকার অবস্থা ভাষায় বর্ণনা করার মতো না। আমরা ক্ষুধা তৃষ্ণা ভুলে গিয়েছিলাম। সারাদিন দুশ্চিন্তা আর আতঙ্কে ছিলাম। ভাবিনি বেঁচে ফিরতে পারবো।
সুদান থেকে ভারতের নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে আনার অভিযানের নাম দেয়া হয়েছে ‘অপারেশন কাবেরি’। জেদ্দা হয়ে ভারতীয়দের প্রথম দলটি দিল্লি পৌঁছায় বুধবার। প্রায় ৩৬০ জন ছিল এই দলে। নিরাপদে দেশে ফেরার স্বস্তি সবার চোখেমুখে। বিমানবন্দরে নেমে এক ভারতীয় বলেন, দিন দিন আরও খারাপ অবস্থা হচ্ছে সেখানে। খাবার ছিল না; পানি ছিল না; বিদ্যুৎও ছিল না। কোনো রকমে বেঁচে ছিলাম। মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে দেখেছি।
সুদান থেকে উদ্ধারের পর সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষকে নেয়া হয় সৌদি আরবের জেদ্দায়। ৫৬টির বেশি দেশের নাগরিকদের প্রাথমিকভাবে আশ্রয় দেয়া হয় সেখানে। সাইপ্রাস, ইথিওপিয়া, মিসরের বিমানবন্দরেও নেয়া হয় অনেককে।
এনিয়ে ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাথেরিন কোলোনা বলেন, খুব জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ মিশন ছিল। অস্ত্রবিরতির কথা বলা হলেও কখনওই সংঘাত থামেনি। সব পক্ষের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে খুব সাবধানে সরাতে হয়েছে নাগরিকদের। এখনও আটকে পড়াদের দিন কাটছে চরম উদ্বেগ-আতঙ্কে।
সুদানে আটকে পড়াদের নিজ দেশে ফেরাতে অন্যান্য দেশে তোড়জোড় চললেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নাইজেরিয়ার নাগরিকরা। তাদের অভিযোগ, অনেক দেশ নিজ নাগরিকদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করলেও নাইজেরিয়া সরকারের কোনো উদ্যোগ নেই। এখানে সাহায্যের জন্য চিৎকার-চেঁচামেচি চলছে। কী হবে কিছুই জানি না। দুঃসহনীয় এক অবস্থা।
কেবল বিদেশিরাই নয়, সংঘাত থেকে বাঁচতে দেশ ছাড়ছে সুদানের হাজার হাজার মানুষ। আশ্রয় নিচ্ছে প্রতিবেশী দেশগুলোতে।