হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে পূর্বশত্রুতার জের ধরে সাতাইহাল গ্রামের দলবদ্ধ লাঠিয়াল বাহিনীর দেয়া আগুনেও সন্ত্রাসী তাণ্ডবলীলায় সবকিছু হারিয়ে ১৩টি পরিবার এখন পাগলপ্রায়।
হামলাকারীদের কবল থেকে বাদ পড়েনি গাছপালা, গবাদিপশুসহ আসবাবপত্র স্বর্ণালংকার। গত রোববার সকালে সকালে উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
বুধবার সরেজমিন যাওয়া মাত্রই পরিবার-পরিজন নিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাসকারী মানুষদের আহাজারি দেখা গেল। তাদের সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা নেই কারও।
নির্যাতিত পরিবারের লোকজন জানান, নবীগঞ্জ উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চলের গজনাইপুর ইউনিয়নের সাতাইহাল গ্রামসহ ৬ মৌজার লোকজন কর্তৃক পানিউমদা ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগসহ তাণ্ডবের ঘটনা ঘটে গত রোববার সকালে।
এ ঘটনায় রোববার রাতেই মৃত আব্দুস শহীদের পুত্র জামাল হোসেন বাদী হয়ে নবীগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের পরপরই সোমবার ভোরে নবীগঞ্জ থানা পুলিশ সাতাইহাল গ্রামসহ আশপাশের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে ৭ জনকে আটক করেছে। আটককৃতদের সোমবার দুপুরে হবিগঞ্জ কোর্টহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
এদিকে মাথাগোঁজার ঠাঁই বাড়িঘর হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবযাপন করছেন নারকীয় তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন। ঘটনাটি নিয়ে ওই এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। হামলাকারীরা নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার, প্রায় ২ হাজার মণ ধান, ৮টি টিউবওয়েল, ১০-১৫টি গরু, ১৫-২০টি ছাগল, অসংখ্য হাঁস-মুরগি লুটপাট করে নিয়ে যায় বলে জানান স্থানীয়রা।
তাণ্ডবের ঘটনায় রোববার রাতে পানিউমদা ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের মৃত আব্দুশ শহীদের পুত্র জামাল হোসেন বাদী হয়ে ৪৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আড়াই শতাধিক দাঙ্গাবাজকে আসামি করে নবীগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার উপজেলার পানিউমদা ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের পার্শ্ববর্তী হাওরে গজনাইপুর ইউনিয়নের সাতাইহাল গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরউদ্দিনের (বীরপ্রতীক) মালিকানাধীন ফিশারিতে অবস্থানরত পাহারাদার ও তার স্ত্রীকে মারধর করে নোয়াগাঁও গ্রামের কতিপয় লোকজন। আহত দম্পতি সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ঘটনায় নবীগঞ্জ থানায় একটি মামলাও দায়ের করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরউদ্দিন।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গজনাইপুর ইউনিয়নের সাতাইহাল গ্রামসহ ৬ মৌজার লোকজন মিটিং করে মাইকিং করে বহিষ্কৃত চেয়ারম্যান ইমদাদুর রহমান মুকুলের নির্দেশে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরত্বে আরেকটি ইউনিয়নে অবস্থিত নোয়াগাঁও গ্রামে দেশীয় অস্ত্রসহকারে হামলা করার পরিকল্পনা করেন।
ঘটনার খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মহিউদ্দিন ও নবীগঞ্জ থানার ওসি ডালিম আহমদসহ একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে উভয়পক্ষের লোকজনদের নিয়ে নোয়াগাঁও গ্রাম থেকে একটু দূরবর্তী স্থানে মিটিং করেন।
মিটিং চলাকালে সাতাইহাল ৬ মৌজার প্রায় ২ সহস্রাধিক লোক বিকল্প রাস্তায় নোয়াগাঁও গ্রামে প্রবেশ করে হামলা চালায়। এতে ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, ভাংচুরসহ তাণ্ডবলীলা চালায় হামলাকারীরা। অগ্নিসংযোগের ফলে নোয়াগাঁও গ্রামের মৃত সফর উল্লার পুত্র রমজান মিয়া, হেলাল মিয়া, লুৎফুর মিয়া, সাদ্দক মিয়া, কামাল মিয়া, মাদ্দক মিয়া, হিরন মিয়া, মৃত আরজু মিয়ার পুত্র আব্দাল মিয়া, মৃত আবরু মিয়ার পুত্র আফজল মিয়া, আওলাদ মিয়া, তাজুদ মিয়া, আজাদ মিয়া ও সফর উল্লার পুত্র মুহিবুর রহমানের ১৩টি পাকা-আধাপাকা, টিনশেডের বাড়িঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এ সময় হামলার শিকার হয়ে বাড়িঘরে থাকা লোকজন পালিয়ে গিয়ে প্রাণ রক্ষা করেন৷
এ বিষয়ে প্রতিবেদককে গৃহবধূ লুৎফা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, হামলাকারীরা আমাদের সর্বস্ব লুটপাট করে ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে পুড়িয়ে আমাদের ১৩টি পরিবারকে নিঃস্ব করে দিল, আমরা এখন ছেলেমেয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে কোথায় যাব? কী খাব?
স্থানীয় সচেতন নাগরিক রাজু আহমেদ বলেন, আমরা এলাকাবাসী এই বর্বরোচিত হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি। পাশাপাশি দোষীদের অনতি বিলম্বে গ্রেফতারপূর্বক কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
এ নিয়ে নবীগঞ্জ থানার ওসি ডালিম আহমেদ বলেন, এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হযেছে, ৭ জন গ্রেফতার হয়েছেন। অপর আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে৷
ইউএনও শেখ মহিউদ্দীন বলেন, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। তবে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সরকারিভাবে ত্রাণ সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।
উৎসঃ যুগান্তর