![IMG_20200716_152418.jpg](https://banglaexpressonline.com/wp-content/uploads/2020/07/IMG_20200716_152418.jpg)
করোনা মহামারীর মধ্যে চিকিৎসার নামে প্রতারণা আর জালিয়াতির ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া ‘সাহেদ-সাবরিনা’র উত্থান সরকারের নীতির কারণেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
বৃহস্পতিবার দুপুরে এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘মানুষ মরে মরুক, আমি (সরকার) তো ঠিক আছি, জনগণ চুলায় যাক, আমি তো ঠিক আছি- এটা হচ্ছে এই সরকারের নীতি। এই নীতি কারণেই আজকে সাহেদের উত্থান হয়েছে, সাবরিনাদের উত্থান হয়েছে ….।’
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ফুটপাতে মহানগর দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে ‘করোনা পরীক্ষার জাল সনদ বিক্রি, অর্থ ও মানব পাচার এবং মহাদুর্নীতির প্রকোপ বৃদ্ধির প্রতিবাদে’ এই মানববন্ধন হয়। মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশারের পরিচালনায় মানববন্ধনে মহানগর, যুবদল, শ্রমিকদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল, মহিলাদলের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রসঙ্গ টেনে রিজভী বলেন, আজকে হাসপাতালে আইসিইউ নেই, বেড নেই, ভেন্টিলেটর নেই, হাসপাতালে মাস্ক নেই। আক্রান্ত রোগী রাস্তায় মরছে, অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে মরছে। সরকারি হাসপাতাল সেগুলো নরকে পরিণত হয়েছে। প্রাইভেট হাসপাতালের একজন রোগী আমাকে কাঁদতে কাঁদতে বলেছেন, ভাই আমার ৯ লাখ টাকা বিল হয়েছে। আমি বাঁচার জন্য এসেছিলাম আমিসহ পরিবারের দুই-একজন, ৯ লাখ টাকার বিল হয়েছে। এই হচ্ছে এই সরকার।
তিনি বলেন, আজকে মানুষকে বাঁচা-মরার সার্টিফিকেট দিচ্ছে একজন প্রতারক। যার করোনা হয়েছে তাকে করোনা হয়নি বলে সনদ দিচ্ছে। আর যার করোনা হয়েছে তাকে বলছে যে, তার করোনা হয়নি। আজকে দেশের ভাবমূর্তি কোথায় গেছে? আজকে ফিরে দেয়া হয় আমাদের বিমান। শুধু ইতালিতে নয়, আরো অন্যান্য দেশ থেকে আমাদের বিমান ফিরিয়ে দিচ্ছে। দেশের যদি এই হাল হয় তবে মানুষ কোথায় যাবে?
শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি মওকুফের দাবি
রিজভী বলেন, আজকে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা প্রতিবাদ করছেন যে, টিউশন ফি কমাতে হবে। প্রধানমন্ত্রী মহোদয়, আপনি তো অনেক প্রণোদনা দিলেন অনেককে। কিন্তু এটা কী খুব অন্যায় দাবি? শুধু ইংরেজি স্কুল নয়, দেশের সকল স্কুল-মাদরাসায় টিউশন ফি একেবারে বাতিল করে দিতে পারেন। এটাই হতো এই মুহূর্তে সবচাইতে মানবিক কাজ।
তিনি বলেন, একে তো ছেলে-মেয়েরা স্কুলে যেতে পারছে না, তার উপরে তাদেরকে টিউশন ফি দিতে হবে। এর প্রতিবাদে অভিভাবকরা যে আন্দোলন করছেন সেটাতে সরকার কোনো কর্ণপাত করছেন না। কারণ সরকার স্কুল-কলেজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছে। শুধু লুটপাট আর দুর্নীতি করতে মেগা প্রজেক্ট করতে ব্যস্ত।
রিজভী বলেন, প্রতিবাদ বন্ধ করার জন্য বিএনপির তরুণদেরকে রাতের অন্ধকার তুলে নিয়ে গুম করা হয়, স্বীকার করা হয় না। সবাই দেখেছে, টিটো হায়দারকে তুলে নিয়ে গেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে লোকজন। পলিরা আজকে রাতের অন্ধকারে গ্রেফতার হয়ে যায়। এরকম অসংখ্য ঘটনা।
আমরা অসহায় মানুষের কাছে ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছি, আমরা আমাদের সাধ্য অনুযায়ী মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছি, আমরা পিপিই দিচ্ছি-এটা সহ্য হচ্ছে না। এটা সহ্য না হওয়ার কারণে এখন শুরু হয়েছে মিথ্যা মামলা, গুমের ধারাবাহিক বিএনপি নিধনে যে কর্মসূচি, সেই কর্মসূচি তারা অব্যাহত রেখেছে। তারা সরকারের বিরুদ্ধে কোনো সমালোচনা সহ্য করবে না। ডিজিটাল নিরাপত্তার আইনের কালো দড়ির ফাঁসি মাথার উপর লটকিয়ে রেখেছে।
রিজভী বলেন, একজন পাপুল ধরা পড়ল। এরকম গত ১২ বছরে কত পাপুল তৈরি হয়েছে এটা আমরা বলতে পারবো না। এই দুরাচার দুর্বৃত্তমূলক শাসন ব্যবস্থায় পাপুলরাই প্রতিষ্ঠিত হবে, তারাই এমপি হবে, তাদের পক্ষেই রাষ্ট্র থাকবে। এই নীতিতে আজকে রাষ্ট্র চললে বলেই মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নেই। এক ভয়ংকর মরণঘাতী বেষ্টনীর মধ্যে দেশের মানুষ এখন বন্দি হয়ে আছে।
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সরকারের ব্যর্থতার কঠোর সমালোচনা করে মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ও দলের যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল বলেন, আজ বাড়িতে বাড়িতে ছেয়ে গেছে করোনা আক্রান্ত রোগীতে। যখন করোনা মহামারী শুরু হয় তখন উচিত ছিলো সারা বাংলাদেশে লকডাউন দেয়া, এয়ারপোর্টসহ বাংলাদেশ প্রবেশের সমস্ত রাস্তা বন্ধ করে দেয়া। সরকারের ভুলের কারণে করোনাভাইরাস বাংলাদেশে এসে বাসা বাঁধলো, তারপর সবাইকে আক্রান্ত করলো। আমরা কী করোনা আক্রান্তের মৃত্যুগুলোকে মৃত্যু বলব, নাকী হত্যা বলব?
উৎসঃ নয়া দিগন্ত