
ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন জানিয়েছেন, সরকারি মাধ্যমের ৪৯৭৮ হাজীকে ৮ কোটি ২৮ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা ফেরত প্রদান করা হবে।
আজ রোববার (১৩ জুলাই) দুপুরে সচিবালয়ে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ২০২৫ সনের হজ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের পারফরমেন্স বিষয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এতথ্য জানান।
হজ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সরকারের ব্যবসায়িক কোন উদ্দেশ্য নেই উল্লেখ করে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, হাজীদের সেবা করাই সরকারের একমাত্র ব্রত। এ বছর হজ প্যাকেজে বাড়িভাড়ার জন্য যে পরিমান টাকা ধার্য্য করা হয়েছিলো তার চেয়ে কিছু কম রেটে বাড়ি ভাড়া পাওয়া গেছে। কোন কোন ক্ষেত্রে কম রেটে সার্ভিস চার্জও মিলেছে। এর ফলে প্যাকেজের কিছু টাকা উদ্বৃত্ত রয়েছে। এই উদ্বৃত্ত টাকা সরকারি মাধ্যমের প্রত্যেক হাজীকে ফেরত প্রদান করা হবে।
উপদেষ্টা গণমাধ্যমকে জানান, সাধারণ হজ প্যাকেজ-১ এর যেসকল পূর্ণ প্যাকেজের হাজী চার ও ছয় নম্বর বাড়িতে ছিলেন তারা প্রত্যেকে ৫,৩১৫ টাকা ফেরত পাবেন। চার নম্বর বাড়ির শর্ট প্যাকেজের হাজীরা প্রত্যেকে ২৩,০২৭ টাকা ফেরত পাবেন। এই প্যাকেজের ০৫ নম্বর বাড়িতে অবস্থানকারী পূর্ণ প্যাকেজের হাজীরা প্রত্যেকে ১৩,৫৭০ টাকা ফেরত পাবেন। পাঁচ ও ছয় নম্বর বাড়িতে শর্ট প্যাকেজের কোন হাজী রাখা ছিলো না।
উপদেষ্টা আরো জানান, সাধারণ হজ প্যাকেজ-২ এর পূর্ণ প্যাকেজের যেসকল হাজী এক নম্বর বাড়িতে ছিলেন তারা প্রত্যেকে ১৯,১৯২ টাকা এবং শর্ট প্যাকেজের হাজীরা প্রত্যেকে ৫১,৬৯২ টাকা ফেরত পাবেন। দুই নম্বর বাড়িতে অবস্থানকারী পূর্ণ প্যাকেজের হাজীরা প্রত্যেকে ২১,১৪২ টাকা এবং শর্ট প্যাকেজের হাজীরা ৫৩,৬৪২ টাকা ফেরত পাবেন। তিন নম্বর বাড়িতে অবস্থানকারী পূর্ণ প্যাকেজের হাজীরা প্রত্যেকে ২৪,২৬২ টাকা ফেরত পাবেন। এ বাড়িতে শর্ট প্যাকেজের কোন হাজী ছিলেন না। এই টাকা হাজীদের ব্যাংক একাউন্টে ফেরত পাঠানো হবে।
এবছরের হজ ব্যবস্থাপনাকে বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি মাইলফলক অভিহিত করে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, এবছর হজ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সৌদি সরকারের গাইডলাইন অনুসারে আমরা সকল প্রক্রিয়া যথাসময়ে সম্পন্ন করেছি। হজযাত্রী নিবন্ধন, হজের আবশ্যিক ব্যয়ের টাকা আইবিএনের মাধ্যমে সৌদিতে প্রেরণ, নুসুক মাসার নামক অনলাইন প্লাটফর্মের মাধ্যমে মিনা-আরাফায় তাঁবু বরাদ্দ গ্রহণ, বাড়িভাড়া ও সার্ভিস কোম্পানীর সাথে চুক্তি, পরিবহন চুক্তি, ভিসা প্রক্রিয়াকরণ করা হয়। এছাড়া, হজ ফ্লাইট সিডিউল পর্যালোচনা সাপেক্ষে হজযাত্রী পুনঃবন্টনের প্রক্রিয়া যথাসময়ে সম্পন্ন করা হয়।
ধর্ম উপদেষ্টা আরো বলেন, হজ ব্যবস্থাপনার সকল বিষয়ে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা ছিলো প্রো-অ্যাক্টিভ। কোন সংকট তৈরি হওয়ার পূর্বেই আমরা প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ নিয়েছি। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সকল স্তরের কর্মকর্তা/কর্মচারীরা একটি টিম স্পিরিট নিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। এর ফলে, এবছর হজে যেতে না পারার বেদনায় কাউকে কাঁদতে হয়নি। কোন হজ ফ্লাইট বিপর্যয় হয়নি। হজযাত্রীদের মধ্যে কোনরুপ হট্টগোল, হৈচৈ, শোরগোল দেখা যায়নি। বাংলাদেশের নিবন্ধিত শতভাগ হজযাত্রী হজ পালন করতে পেরেছেন।
দেশবাসিকে প্রতারক হতে সাবধান হতে পরামর্শ দিয়ে ড. খালিদ বলেন, হাজীদের রিফান্ড কিংবা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে অনুদান বা দুস্থদের আর্থিক সহায়তাসহ ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে দেয় সকল ধরণের অর্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক একাউন্টে পাঠানো হয়। এরূপ টাকা পাঠাতে মন্ত্রণালয় থেকে কাউকে ফোন করা কিংবা তার কাছ থেকে ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের নম্বর কিংবা বিকাশ বা নগদ কিংবা রকেটের কোন পিন নম্বর চাওয়া হয়না। এমনটি যদি কেউ করে তাহলে সে প্রতারক।
ড. খালিদ আরো বলেন, এবছর হজযাত্রী হারানো সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। এবার ৮৯২ জন হজযাত্রী হারানো গিয়েছিলো যার মধ্যে ৮৯১ জনকেই খুঁজে পাওয়া গেছে। এ মৌসুমে যে ৪৫ জন হজযাত্রী মৃত্যূবরণ করেছেন তাদের সকলেরই নানা ধরণের জটিল রোগব্যাধিতে আক্রান্তের পূর্ব ইতিহাস ছিলো।
হজ ব্যবস্থাপনা টীম ওয়ার্ক হিসেবে অভিহিত করে উপদেষ্টা বলেন ল, সকলে টীম স্পিরিট নিয়ে কাজ করতে পারলে হজ ব্যবস্থাপনা সুন্দর ও সাবলীল হবে-এটাই স্বাভাবিক। এ মৌসুমে হজ ব্যবস্থাপনায় টীম স্পিরিটেরই প্রতিফলন ঘটেছে। আমরা প্রত্যেক স্টেকহোল্ডারের কাছ থেকে আন্তরিক সহযোগিতা পেয়েছি। তিনি হজ ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ বিমান, বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশন অথরিটি, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সাউদিয়া ও ফ্লাইনাস এয়ারলাইন্স, হাবের সভাপতি ও মহাসচিবের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
এসময় ধর্ম সচিব একেএম আফতাব হোসেন প্রামানিক, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) ড. মোঃ আয়াতুল ইসলাম, হজ অনুবিভাগের যুগ্মসচিব ড. মঞ্জুরুল হক, হাবের সভাপতি সৈয়দ গোলাম সরওয়ার ও মহাসচিব ফরিদ আহমদ মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।