খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বিশ্ব নেতাদের শোক

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস শোকবার্তায় বলেন, খালেদা জিয়া বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের এক গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক ছিলেন। বহুদলীয় রাজনীতি ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তার সংগ্রাম ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি এই শোকাবহ সময়ে দেশবাসীকে শান্ত ও শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।

ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা শোক প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে খালেদা জিয়ার অবদান এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনে তার ভূমিকা জাতির ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য। তিনি মরহুমার আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার পরিবার ও বিএনপির নেতাকর্মীদের প্রতি সমবেদনা জানান।

প্রতিবেশী ও আঞ্চলিক নেতাদের শোকবার্তা
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন এবং ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারে বেগম খালেদা জিয়ার ভূমিকা স্মরণযোগ্য। তার রাজনৈতিক উত্তরাধিকার দুই দেশের সম্পর্ককে ভবিষ্যতেও দিকনির্দেশনা দেবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ শোকবার্তায় বলেন, খালেদা জিয়া বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে দীর্ঘস্থায়ী অবদান রেখে গেছেন। পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশাক দারও গভীর শোক প্রকাশ করে মরহুমার আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।

চীনের পক্ষে ঢাকায় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত উ ওয়েন বেগম খালেদা জিয়াকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক দৃঢ় ব্যক্তিত্ব হিসেবে উল্লেখ করেন এবং বিএনপির সঙ্গে চীনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অব্যাহত থাকার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

শ্রীলঙ্কার সংসদ সদস্য নামাল রাজাপক্ষ বলেন, খালেদা জিয়ার মৃত্যু শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, আঞ্চলিক গণতন্ত্রের জন্যও একটি বড় ক্ষতি। সার্ক ও আঞ্চলিক সহযোগিতায় তার ভূমিকার কথাও স্মরণ করা হয়।

আন্তর্জাতিক ও পশ্চিমা বিশ্বের প্রতিক্রিয়া
জাপানের রাষ্ট্রদূত সাইদা শিনিচি শোকবার্তায় বলেন, খালেদা জিয়ার প্রধানমন্ত্রিত্বকালে জাপান-বাংলাদেশ সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছায়। তার অবদান দুই দেশের বন্ধুত্বকে আরও দৃঢ় করেছে।

ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস এক বিবৃতিতে জানায়, খালেদা জিয়া বাংলাদেশের আধুনিক ইতিহাস গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন এবং নারী ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন এক অগ্রগামী নেতা।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জার্মান দূতাবাস, ফ্রান্স দূতাবাস, অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশন এবং ব্রিটিশ হাইকমিশন পৃথক শোকবার্তায় বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক অবদান, নেতৃত্ব ও বাংলাদেশের জাতীয় জীবনে তার প্রভাবের কথা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেছে।

বেগম খালেদা জিয়ার ইন্তেকাল আন্তর্জাতিক মহলে কেবল একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যু হিসেবে নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ার গণতান্ত্রিক রাজনীতির এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সমাপ্তি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। নারী নেতৃত্ব, বহুদলীয় গণতন্ত্র এবং রাষ্ট্রীয় সম্পর্ক গঠনে তার ভূমিকা ভবিষ্যত প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তার মৃত্যুতে বিএনপি সাত দিনের শোক কর্মসূচি ঘোষণা করেছে এবং দেশজুড়ে শোকের আবহ বিরাজ করছে। বিশ্ব নেতাদের এই শোকবার্তাগুলো বাংলাদেশের প্রতি আন্তর্জাতিক সহানুভূতি ও সম্মানের প্রতিফলন হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

শীর্ষনিউজ

Facebook Comments Box
Share:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *