করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশে টানা তিন মাস আন্তর্জাতিক রুটের ফ্লাইট চলাচল বন্ধ রাখার পর গত ১৬ জুন থেকে সীমিত পরিসরে ফ্লাইট চালু করা হয়েছে।
প্রতি সপ্তাহে হাতে গোনা কয়েকটি ফ্লাইট চলাচলের কারণে ছুটি কাটাতে আসা অভিবাসীরা সময় মতো ফিরে যেতে পারবেন কিনা, সেটা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। রিটার্ন টিকেট করেও অনেক সিট পাচ্ছেন না। আবার যারা রিটার্ন টিকেট করতে পারেননি তাদের কাছে চাওয়া হচ্ছে পাঁচ থেকে ১০ গুণ বেশি দাম।
বরিশালের চর নাজিরপুরের বাসিন্দা মল্লিক মহিউদ্দিন এ বছরের শুরুতে ছুটি কাটাতে দেশে আসেন। তিনি ইতালিতে একটি রেস্তোরায় কাজ করেন। রোজার ঈদ শেষে ২৮ মে তার ইতালি ফিরে যাওয়ার কথা থাকলেও দেশব্যাপী লকডাউনের কারণে আটকে যান।
এদিকে তার টিকেট এবং ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে আসায় তিনি চরম উদ্বেগের মধ্যে দিন পার করছেন। সময়মত কাজে যোগ দিতে না পারায় চাকরি হারানোর আশঙ্কা তো আছেই।
তার ওপর বিদেশে গিয়ে নতুন চাকরি সন্ধানের সুযোগটিও পাবেন কিনা সেটা নিয়েও দেখা দিয়েছে সংশয়।
‘আমি তো আপ-ডাউন টিকেট কাটসি। এখন এয়ারলাইন্স বলে, ১৫ আগস্টের আগে কোন সিরিয়াল নাই। সব সিট বুকিং হয়ে গেসে। এখন শিগগির কবে যাইতে পারবো সেটাও কেউ বলতে পারেনা। আমি টাইম মতো যাইতে পারলাম না। এজন্য চাকরিটাও মনেহয় থাকবে না। আবার চাকরি পাব কিনা জানিনা।’
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গত ২১ মার্চ প্রথমে ১০টি দেশে বিমান চলাচল স্থগিত করে বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। এরপর লকডাউনের সময়সীমা বাড়ার সাথে সাথে বিমান বন্ধের সময়সীমাও বাড়তে থাকে।
এরপর ১ জুন থেকে অভ্যন্তরীণ রুটে এবং ১৬ জুন থেকে আন্তর্জাতিক কয়েকটি রুটে সীমিত পরিসরে বিমান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
শুধুমাত্র বাংলাদেশ বিমান, কাতার এয়ারওয়েজ এবং এমিরেটস হাতে গোনা কয়েকটি রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারছে।
এমন অবস্থায় যারা রিটার্ন টিকেট করে এসেছেন তাদেরকে আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে সিট দিচ্ছে এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ।
আর যারা টিকেট করেননি তাদের কাছে চাওয়া হচ্ছে ৫ থেকে ১০ গুণ বেশি দাম। সবচেয়ে বেশি দাম বাড়ানো হয়েছে কাতার এয়ারলাইন্সের।
এমন অবস্থায় গ্রাহকরা টিকেট বুকিং দিতে ট্রাভেল এজেন্সিগুলোয় যাচ্ছে। কিন্তু দাম দিয়েও কোন টিকেট পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ট্রাভেল এজেন্সির কর্মকর্তা।
তিনি জানান, কোন ফ্লাইটেই ইকোনমির সিট আগস্টের আগে খালি নেই। এখন হাতে গোনা কয়েকটি বিজনেস ক্লাসের সিট খালি আছে।
সেগুলোর দাম ধরা হয়েছে আকাশচুম্বী। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, কাতার এয়ারওয়েজে আগে ওয়ানওয়ে টিকেটের দাম ছিল ৫০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা। এখন বিজনেস সিটের ন্যূনতম মূল্য ৫ লাখ টাকা ধরা হয়েছে।
ঢাকা থেকে বাহরাইনে যাওয়ার যে টিকেট আগে ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা ছিল। সেটা এখন বেড়ে এক লাখ ৩৮ হাজারে ঠেকেছে বলে তিনি জানান।
কাতার এয়ারওয়েজকে সপ্তাহে তিনটি ফ্লাইট এবং বাংলাদেশ বিমান সপ্তাহে ১টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে বলে জানা যায়। এমিরেটসে এ বিষয়ে তথ্য জানতে যোগাযোগ করা হলে কোন সাড়া মেলেনি।
সব মিলিয়ে প্রতি সপ্তাহে এই তিনটি এয়ারলাইন্সে ৬০০-৮০০ জন যাত্রী যেতে পারছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু দেশ ছাড়ার অপেক্ষায় রয়েছে লাখ লাখ প্রবাসী।
এভাবে অনেক প্রবাসীদের রিটার্ন টিকেটে বিদেশে ফেরার শিডিউল দুই তিন মাস এমনকি তারও বেশি পিছিয়ে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে প্রতি ফ্লাইটে ৩৫ ভাগ কম যাত্রী বহন করার কারণে এবং সংক্রমণ রোধে সতর্ক ব্যবস্থা নেয়ার কারণে এই শিডিউল বিপর্যয় এবং টিকেটের মূল্য বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মোকাব্বির হোসেন।
তিনি বলেন, ‘চেক ইনের পর আমরা যাত্রীদের একটি সুরক্ষা ব্যাগ দেই, যেখানে দুটো মাস্ক, গ্লাভস, স্যানিটাইজার এবং ফেইস শিল্ড থাকে। ইকোনমিতে ৫টা সিট পাশাপাশি। আমরা মাঝখানের সিটগুলো খালি রাখছি। পেছনের একটা সারি খালি রাখা হচ্ছে। এ কারণে ৬৩ ভাগ যাত্রী বহন করা যাচ্ছে। এ কারণে টিকেটের রেট কিছুটা বাড়ানো হয়েছে।’
এছাড়া ঢাকা থেকে যাত্রী পরিবহন করা গেলেও, ফেরার পথে কোন যাত্রী না থাকায় টিকেট দাম বাড়িয়ে সেটা পুষিয়ে নেয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।
প্রবাসীরা দ্রুত ফিরে যেতে এয়ারলাইন্স প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে অনলাইনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও কোন সাড়া পাচ্ছে না।
আশা করা হচ্ছে ৩রা জুলাইয়ের পর সরকার ফ্লাইট চলাচল স্বাভাবিক করার অনুমোদন দিলে পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে পারে।
উৎসঃ নয়া দিগন্ত
Drop your comments: