ফরিদপুর জেলা প্রতিনিধি: ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার চরবিষ্ণুপুর ইউনিয়নে ২২নং মুলামেরটেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মমতাজ বেগম দুর্নীতি,অনিয়ম ও অসদাচরণ করার কারনে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন এলাকাবাসী।
গত(সোমবার ৩০সেপ্টেম্বর) ৪৫জন ব্যক্তির স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগপত্র শিক্ষার্থী অভিভাবক ও এলাকাবাসী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার নিকট জমা দেন।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, উপজেলার চরবিষ্ণুপুরে ২২ নং মুলামেরটেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মমতাজ বেগম দীর্ঘদিন এই বিদ্যালয়ে অবস্থান করায় বিভিন্ন ধরণের দুর্নীতি-অনিয়ম করে আসছে। তার দুর্নীতির পাশাপাশি শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকদের সাথে অশোভন আচরণের ফলে বিদ্যালয়টির অবকাঠামোগত উন্নয়ন সহ পাঠদান ব্যাবস্থায় ধ্বস নেমেছে। প্রায় শিক্ষার্থীশুন্য হয়ে পড়েছে পুরো বিদ্যালয়।
আর্সেনিক মুক্ত পানির ব্যাবস্থা থাকার পরে ও প্রধান শিক্ষকের অব্যবস্থাপনার কারনে বাচ্চা রা বিশুদ্ধ পানি থেকে বঞ্চিত। এলাকাবাসীর অভিযোগ প্রধান শিক্ষকের শশুড় মৃত: নজরুল ইসলাম সিদ্দিকী, বাংলাদেশ আওয়ামিলীগ, সদরপুর উপজেলা শাখার সাবেক সভাপতি ও তাঁর স্বামী: শহিদুল ইসলাম সিদ্দিকী দীর্ঘদিন যাবৎ সদরপুর উপজেলার ১নং চরবিষ্ণুপুর ইউনিয়ন আওয়ামিলীগ এর সাংগঠনিক সম্পাদক থাকায় রাজনৈতিক ক্ষমতা বলে এতোদিন যা ইচ্ছা করেছে, এবং উপরমহলে তাঁদের লোকজন আছে বলে এলাকার মানুষকে কোনঠাসা করে রাখতো। তাই এলাকা বাসী প্রধান শিক্ষকের অনিয়ম ও দূর্ণীতি র বিরুদ্ধে কখনো কথা বলতে সাহস পান নি।
স্কুল কমিটির বিদ্যুৎসাহী মহিলা সদস্য সালমা আক্তারের মাধ্যমে জানা যায় বিগত কয়েক দিন আগে উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্কুল ভিজিটকালে তাঁকে ওয়াশরুম সম্পর্কে অবগত করলে উপজেলা শিক্ষা অফিসার প্রধান শিক্ষক কে জানায় অতি তাড়াতারি বিদ্যালয়ের ওয়াশরুম টি মেরামত করতে, কিন্তু তিনি সেটার ব্যাবস্থা আজ পর্যন্ত করেন নি। আরো জানা যায়, প্রধান শিক্ষকের বাড়ি স্কুলের ১০০ মিটারের ভিতরে হওয়ায় স্কুলের ডিজিটাল মাল্টিমিডিয়ার সরঞ্জাম ও সাংস্কৃতিক সরঞ্জাম তার বাসায় রাখতো, সাংবাদিকের খোজ পেয়ে মাল্টিমিডিয়ার সরঞ্জাম গুলো স্কুলে আনতে পারলে ও সাংস্কৃতিক যন্ত্রপাতি গুলো দেখাতে পারেন নি।
আরো অভিযোগ উঠে এসছে প্রধান শিক্ষক স্কুল চলাকালীন সময়ে শিশু শ্রেনীতে পাঠাদান কালে সে উক্ত ক্লাশে একই সময় ই প্রাইভেট পড়াতো, বার বার তাকে এলাকার কয়েকজন অবগত করার পরে ও সে এটা কেয়ার করেন নি, পরবর্তী তে বিষয়টি সভাপতি লুৎফর রহমান কে জানানো হলে সভাপতি আজ পর্যন্ত কোনো ব্যাবস্থা গ্রহন করেন নি।
প্রধান শিক্ষক মমতাজ বেগম অনিয়ম ও অসদাচরণের ফলে শিক্ষার্থীরা সহ আশপাশের সকলে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে। স্লীপ বরাদ্দ কৃত অর্থ থেকে শুরু করে সরকারি সকল বরাদ্দ তিনি নামমাত্র খরচ দেখিয়ে ইচ্ছে মতো ভোগ করে যাচ্ছেন। যাহা সহকারী শিক্ষকদেরও জানতে দিচ্ছেন না। চলতি বছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনের আগের বছরগুলোতে তিনি তার অনুগত স্কুল কমিটি সাজিয়ে যেনতেন ভাবে বিদ্যালয় পরিচালনা করতেন। যেখানে বিদ্যালয়ের প্রতিবেশী কোনো মানুষকে তোয়াক্কা করতেন না। শিক্ষক দালালদের সহযোগিতায় তৎকালীন সকল অনিয়ম করতেন। নিয়ম কানুন না মেনে যখন ইচ্ছে তখন বিদ্যালয়ে আসেন। ফলে তার সহকারীরাও একই ধাঁচে চলতে থাকে।
বিদ্যালয়টিতে কোনো পড়াশোনার মান ভাল না হওয়ায় পার্শ্ববর্তী সকল শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় বিমুখ হয়ে পড়ছে। ছাত্র-ছাত্রী সংগ্রহের জন্য কোন কর্মতৎপরতা ও নেই শিক্ষকদের মাঝে। শিক্ষা অফিসেরও নেই কোনো মনিটরিং। কর্মকর্তাদের কেউ কখনো ভিজিটে এসে শিক্ষার্থী না দেখলে প্রধান শিক্ষক সহজ করে বলে দেন- আশপাশে মাদ্রাসা আছে। তাই তাদের ছাত্র-ছাত্রী সংকট! মূলত প্রধান শিক্ষকের অনিয়মের কারনেই শিক্ষার্থী সংকট।
অভিযোগ অস্বীকার করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মমতাজ বেগম বলেন,। দীর্ঘদিন ধরে একটি চক্র স্কুল ও তার সুনামকে বিনষ্ট করতে অহেতুক মিথ্যা অভিযোগ করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় নতুন করে আবার অভিযোগ করা হয়েছে, যার কোনোটিরই ভিত্তি নেই।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে বারবার মুটোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তা সম্ভব হয়নি।
অভিযোগ প্রসঙ্গে সদরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মামুন বলেন, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ এর সত্যতা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।