কোটা সংস্কার আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে আরব আমিরাতের কয়েকটি সড়কে বিক্ষোভ করায় বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি হয়েছে ৫৭ বাংলাদেশি শ্রমিকের। আইন অনুসারে অনুমতি ছাড়া দেশটিতে বিক্ষোভ করার সুযোগ নেই। এর ফলে বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য ভিসা নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে বলে গুঞ্জন উঠেছে। তবে আরব আমিরাত থেকে ভিসা বন্ধের কোনো তথ্য পায়নি প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
আরব আমিরাতে প্রবাসী শ্রমিক আটকের খবরে দেশটির শ্রমবাজারে বাংলাদেশি শ্রমিকদের ভিসা বন্ধের গুঞ্জন তৈরি হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ বুধবার প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী। তিনি বলেন, আরব আমিরাতের ভিসা বন্ধের কোনো তথ্য নেই। মৌখিক বা আনুষ্ঠানিক; কোনোভাবেই ভিসা নিষেধাজ্ঞার কথা জানায়নি আরব আমিরাত।
আরব আমিরাতের বাংলাদেশ দূতাবাস ও ঢাকায় আরব আমিরাতের দূতাবাসে খোঁজ নিয়েও ভিসা নিষেধাজ্ঞার তথ্য পাওয়া যায়নি বলে জানান প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে, তারা এমন কিছু জানে না। বাংলাদেশে নিযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গেও কথা বলেছেন, তিনিও কিছু জানাননি।
তবে আরব আমিরাতের ভিসা বন্ধের খবরটি কি ভিত্তিহীন—এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের কাছে এমন কোনো খবর আসেনি, কোনো চিঠিও আসেনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘দেশে যেভাবে মেট্রোরেলসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে, বিদেশেও তারাই বাংলাদেশের শ্রমবাজার ধ্বংস করার জন্য একই কাজ করেছে। ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধী জামায়াত ও বিএনপির প্রেতাত্মারা দুবাইয়ে আন্দোলন করে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে।’
আরব আমিরাতে আটক বাংলাদেশের নাগরিকদের আইনি সহায়তা দেওয়া হবে কি না, জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশটির আইন ভঙ্গ করায় তাদের বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি হয়েছে। এখানে সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করবে না। এটি তাদের রাষ্ট্রীয় বিষয়।
গত সোমবার বিবিসির অনলাইনে প্রকাশিত এক সংবাদ বলছে, জননিরাপত্তায় হুমকি, আইনশৃঙ্খলায় প্রতিবন্ধকতা এবং রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিগত সম্পদ ক্ষতির শঙ্কা তৈরি করায় তাদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দেশটির পুলিশ তাদের সতর্ক করলেও বিক্ষোভকারীরা থামেনি। এ কারণে তাদের আটক করে আদালতে সোপর্দ করা হয়। আরব আমিরাতের আদালত ৫৩ জনকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে। তিনজনের যাবজ্জীবন ও একজনের ১১ বছরের শাস্তি হয়েছে। শাস্তির মেয়াদ শেষ হলে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হবে।
প্রবাসী আয়ের বিচারে দেশটির শ্রমবাজার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ বছর শীর্ষ স্থানে উঠে এসেছে আরব আমিরাত। গত অর্থবছরে (২০২৩-২৪) দেশটি থেকে এসেছে ৪৬৪ কোটি ডলারের বেশি। আগের বছরের চেয়ে দেশটি থেকে প্রবাসী আয় বেড়েছে ৫৩ শতাংশ।
সৌদি আরবের পর বৈদেশিক কর্মসংস্থানে বাংলাদেশের বৃহত্তম শ্রমবাজার হচ্ছে আরব আমিরাত। মধ্যপ্রাচ্যের এ দেশটিতে কর্মী পাঠানো বারবার হোঁচট খেয়েছে গত এক যুগে। মাঝখানে টানা কয়েক বছর বন্ধ ছিল দেশটিতে নতুন কর্মী পাঠানো। ২০২১ সাল থেকে এটি আবার বাড়তে শুরু করে। এখন আবার কমে আসছে কর্মী পাঠানোর সংখ্যা। যদিও কর্মী পাঠানোর সংখ্যা বাড়াতে চেষ্টা করছে সরকার। আগামী বছর থেকে বছরে অন্তত দুই হাজার ট্যাক্সি ও মোটরসাইকেলের চালক নেওয়ার কথা রয়েছে আরব আমিরাতের।
বাংলাদেশ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য বলছে, এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১৬৮টি দেশে কর্মসংস্থান হয়েছে বাংলাদেশের কর্মীদের। যদিও বেশি গেছে হাতেগোনা কয়েকটি দেশে। এর মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার আরব আমিরাতে কর্মসংস্থান হয়েছে ১৭ শতাংশের বেশি কর্মীর। ১৯৭৬ সাল থেকে গত জুন পর্যন্ত দেশটিতে গেছেন ২৬ লাখ ৩৫ হাজার ৪৯১ বাংলাদেশি কর্মী।
বিদেশে কর্মী পাঠানোর সঙ্গে যুক্ত রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকদের সংগঠন বায়রার মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ভিসা বন্ধের কোনো তথ্য আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁরা পাননি। যাঁরা বিক্ষোভ করেছে, তাদের শাস্তি হয়েছে। তবে ভিসা বন্ধ হলে গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজারটি নিয়ে নতুন শঙ্কা তৈরি হবে।
সূত্র: প্রথম আলো