মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অপরাধ বিষয়ক তালিকায় যাদের নাম ওঠে তারা কার্যত সারাবিশ্বের কাছে ‘অপরাধ জগতের ট্রেডমার্ক’ হয়ে যান। তাদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধসহ নানা বিধি-নিষেধে পড়তে হয়। মূলত তাদের নামের সঙ্গে আন্তর্জাতিক অপরাধীচক্রের হোতা হিসেবে ট্রেডমার্ক তকমা দেয়া হয়।
আন্তজাতিক পর্যায়ে মানবপাচারের মতো গুরুত্বর অপরাধে মার্কিনীদের সেই রেড তালিকায় ল²ীপুর-২ আসনের এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের নাম উঠেছে। বাংলাদেশ থেকে কুয়েতে এমপি পাপুলের মানবপাচারের অপকান্ডকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাফিকিং ইন পার্সন রিপোর্ট। বাংলাদেশ সময় গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপদেষ্টা ইভাঙ্কা ট্রাম্প রিপোর্টটি প্রকাশ করেন। সেই রিপোর্টে মানবপাচারের অভিযোগে কুয়েতে আটক বাংলাদেশের এমপি পাপুলের মানবপাচারকে গুরুতর অপরাধ হিসেবে অভিহিত করা হয়।
এদিকে পাপুলের মামলার তালিকায় থাকা কুয়েতি নারী ব্যবসায়ীকে দুই হাজার কুয়েতি দিনার মুচলেকায় জামিন দেয়া হয়েছে। কুয়েতের এক সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তার বোন ওই নারীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।
পাপুলের সম্পর্কে মার্কিন ওই রিপোর্টে বলা হয়, শহিদ ইসলাম পাপুলসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন সংসদ সদস্য ও সরকারের কর্মকর্তারা বিদেশে চাকরি দেয়ার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। যা অভিবাসনবান্ধব পরিবেশ তৈরির ক্ষেত্রে সাংঘর্ষিক। এর ফলে রিক্রুটমেন্ট এজেন্সিগুলো অভিবাসী শ্রমিকদের ঠকায় এবং তাদেরকে সুরক্ষার বিষয়টি বাধাগ্রস্থ করে।
রিপোর্টে আরো বলা হয়, কুয়েতি কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়ে ২০ হাজার বাংলাদেশিকে চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে কুয়েতে নিয়ে যায় পাপুল। তাদের যে চাকরি দেয়ার কথা বলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তার বেশিরভাগই ওই চাকরি পায়নি। যে বেতন নির্ধারণ করা হয়েছিল তার থেকে কম বেতন পেয়েছে অথবা একদম পায়নি। মিডিয়া এ বিষয়ে ২০১৫ থেকে বিভিন্ন রিপোর্ট করেছিল বলে উল্লেখ করা হয়।
অন্যদিকে মানবপাচারের বিষয়ে আরো বলা হয়, মালয়েশিয়ার এমপ্লয়মেন্ট এজেন্সিগুলো এবং বাংলাদেশের ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সি উভয় দেশের কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদদের ঘুষ দিয়ে গোটা প্রক্রিয়াটি নিজেদের কাছে কুক্ষিগত করে রেখেছিল। মালয়েশিয়ায় পাঠানো প্রতিটি ব্যক্তির কাছ থেকে চার লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়েছে। যদিও মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য সরকারের নির্ধারিত ফি ছিল ৩৭ হাজার টাকা। এর ফলে অভিবাসীরা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে। দুইবার সতর্কবার্তা পাওয়ার পরে নভেম্বরে সরকার তাদের তদন্ত রিপোর্ট হাইকোর্টে জমা দেয় এবং এর শুনানি এখনও বাকি আছে।
কুয়েতি নারীর জামিন : কুয়েতি সংবাদমাধ্যম আল সিয়াসাহ ডেইলির বরাত দিয়ে দেশটির আরেক সংবাদমাধ্যম আরব টাইমসের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে মানব ও অর্থপাচারে পাপুলের সহযোগী সে দেশে গ্রেফতার কুয়েতি নারী ব্যবসায়ীকে জামিন দেয়া হয়েছে। কুয়েতের সিনিয়র কর্মকর্তার বোন ওই নারীকে বিদেশ যাওয়ার ওপর বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
উৎসঃ মানবজমিন