এনামুল হক রাশেদী, চট্টগ্রামঃ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনে বানিজ্য মন্ত্রনালয় দেশের নিম্ম আয়ের উপকারভোগীদের মধ্যে অনুমোদিত ডিলারদের মাধ্যমে ‘এক কোটি পরিবার’-এর কাছে কম দামে পণ্য বিক্রি করে থাকে ট্রেডিং করপোরশেন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। সরকারের ভর্তূকি মূল্যের কমদামী এসব পণ্যের নয় ছয় করে অনেক ডিলার রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে, আবার অনেকে বিভিন্ন অনিয়ম দূর্নীতির শাস্তিও ভোগ করেছে। এবার চট্টগ্রাম নগরীর ১৭ নং বাকলিয়া ওয়ার্ডের টিসিবি ডিলার সরোয়ার টিটু’র বিরোদ্ধে প্রমান মিলেছে নিয়ম বহির্ভূত বেআইনী নানান অভিযোগের।
স্থানীয় সুশীল সমাজের অনেকেই সরোয়ার টিটু’র টিসিবি ডিলার হিসাবে নিয়োগ পাওয়া নিয়েও প্রশ্ন তোলেছে। টিসিবি ডিলার হিসাবে অনুমোদন পাওয়ার জন্য একজন ডিলারকে প্রতিষ্ঠিত মুদি ব্যবসায়ী হতে হয় এবং ৩-৪ মেঃ টঃ পণ্য স্টক রাখার মত চূক্তিবদ্ধ গোডাউন থাকতে হয়। সরোয়ার টিটুর বিসমিল্লাহ স্টোর নামে ছোট্ট একটি মুদি দোকান থাকলেও কোন গোডাউন না থাকার পরও রহস্যজনক ভাবে টিসিবি ডিলারশীপ অনুমোদন পেয়ে গেছেন। উপকারভোগী ‘ফ্যামিলী কার্ডের’ গ্রহকদের পণ্য বিক্রির সময় বাধ্যতামুলকভাবে তার চা পাতা ব্যবসার নিম্ম মানের একটি চা পাতার প্যাকেট উচ্চ মূল্যে ধরিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। কোন গ্রাহক চা পাতা নিতে না চাইলে তাকে কার্ডের পণ্য দেওয়া হয়না বলেও অভিযোগ করেছে অনেক গ্রাহক।
উপকারভোগী অনেক গ্রাহককে কৌশলে পণ্য না দিয়ে সে পণ্য অধিক মূল্যে বাইরে বিক্রি সহ কার্ডের গ্রাহক নয় কিন্ত ডিলারের আত্মিয়-স্বজন ও পরিচিতদের পণ্য দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে, এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সরোয়ার টিটুর ভাই পরিচয়দানকারী একজন কার্ড হোল্ডার ছাড়াও কিছু কিছু ব্যক্তিকে পণ্য দেওয়ার কথা স্বিকার করে সেলফোনে জানান, ন্যায্যমুল্যের টিসিবি’র সরকারী পণ্য বিতরন করতে গিয়ে অনেকের অন্যায় অবদার বেআইনী হলেও রক্ষা করতে হয়।
অভিযোগের সত্যতা নিরুপন করতে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ৪৭০ টাকার সরকারী টিসিবি পণ্যের প্যাকেজে নেওয়া হচ্ছে ৫৪০ টাকা, যেখানে আছে ৫ কেজি চাল, ২ কেজি মশুর ডাল ও ২ লিটার সয়াবিন তেলের সঙ্গে আছে ৭০ টাকা দামের মানহীন ব্র্যান্ডহীন চা পাতা। অনেক গ্রাহক তাদের অভিযোগে জানান, কেউ যদি এই চা পাতা নিতে না চায়, তাহলে তাদেরকে কার্ডের মালামাল দেয়না বিক্রয়কর্মীরা।
দিনের যেকোন সময় টিসিবি পণ্য বিক্রির নিয়ম থাকলেও বিসমিল্লাহ স্টোরের স্বত্তাধিকারী টিসিবি ডিলার সরোয়ার টিটুর লোকজন স্থানীয় কমিশনারের এক ছেলের তত্তাবধানে শুধুমাত্র বিকাল ৫ টার পর থেকেই কিছু সংখ্যক লোকজনকে এই পণ্য বিক্রি করা হয় বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়।
বিভিন্ন অভিযোগ সম্পর্কে জানতে সরোয়ার টিটুর সেলফোনে কল করা হলে তিনি কল রিসিভ করে নিজে কোন কথা না বলে তার বড় ভাইয়ের সাথে কথা বলতে মোবাইল বড় ভাইকে দিয়ে দেন। বারবার জিজ্ঞেস করার পরও বড় তার নাম গোপন রেখে বলেন, টিসিবি ডিলারশীপের শর্তানুযায়ী আমাদের দোকান ও গোডাউন আছে, গ্রাহকদের চাহিদানুযায়ী আমরা একদিনে একিই এলাকার সকল গ্রাহককে পণ্য দিতে পারিনা, তাই অসন্তোষ্ঠ হয়ে গ্রাহকরা এই অভিযোগ করেছেন বলে জানান। চা পাতা বাধ্যতামুলক ভাবে দেওয়ার বিষয়টি তিনি অস্বিকার করেন।
১৭ নম্বর পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ শহিদুল আলমের কাঁছে টিসিবি ডিলার সরোয়ার টিটুর বিভিন্ন অনিয়ম অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাঁর ওয়ার্ডের টিসিবি ডিলারদের বিভিন্ন অভিযোগ শুনতে শুনতে তাঁর বিরক্তির কথা জানিয়ে ডিলারদের পরিবর্তন করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করবে বলে জানান।
টিসিবি চট্টগ্রামের আঞ্চলিক পরিচালক শপিকুল ইসলাম সুমন জানান, সরকারী বিধি অনুযায়ী টিসিবি নির্ধারিত পণ্যের বাইরে অন্য কোন পণ্য সংযোজন সম্পুর্ন বেআইনী ও অপরাধযোগ্য। সরোয়ার টিটু সহ যেকোন ডিলারের ব্যাপারে অভিযোগের আলোকে তদন্ত করে যথোপযুক্ত প্রমান পাওয়া গেলে তড়িৎ আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।