করোনাকালীন এই দু:সময়ে মুমূর্ষু করোনা রোগীদের সেবায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মচিমহা), সিভিল সার্জন অফিস, সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সিটি কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনায় কোনো অ্যাম্বুলেন্স বরাদ্দ নেই।
করোনা আক্রান্ত রোগী ও তাদের সংস্পর্শে আসা স্বজনরা তথ্য গোপন করে সিএনজি-রিকশা ও অটোরিকশায় হাসপাতালে যাচ্ছে ভর্তি হতে। কেউ কেউ নমুনা দিতে যাতায়াত করছে এসব বাহনে। ফলে সংক্রমণ ছড়িয়ে হু-হু করে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। এনিয়ে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে নগরবাসী, করোনা আক্রান্ত রোগী ও স্বজনদের মাঝে।
এছাড়া নগরীর বাজার, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট ও মানুষের চলাফেরায় মাস্ক না পড়াসহ স্বাস্থ্যবিধি না মানায় শঙ্কার মধ্যে সচেতন নগরবাসী। করোনা রোগদের জন্য অবিলম্বে একটি অ্যাম্বুলেন্স বরাদ্দের পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে আইন প্রয়োগের দাবি নগরবাসী।
এদিকে ময়মনসিংহ মেডিকেলের পিসিআর ল্যাবে যান্ত্রিক ত্রুটি ও কিট সংকটে বিগত ১৭-১৮ জুন দুদিন নমুনা পরীক্ষা বন্ধ থাকার পর আবার চালু হলেও জট লেগেছে পরীক্ষায়। ফলে নমুনা সংগ্রহে একদিকে হিমশিম খাচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা, অন্যদিকে যথাসময়ে নমুনা পরীক্ষা করতে না পারায় চরম আতঙ্কে আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে আসা স্বজনরা। পাশাপাশি শঙ্কায় পড়েছে সুস্থ থাকা সচেতন নগরবাসী।
তাদের দাবি, অন্যান্য বিভাগীয় নগরীর মতো সিটি কর্পোরেশন এলাকায় নমুনা সংগ্রহে একাধিক বুথ থাকলে এতো বিড়ম্বনার স্বীকার হতে হতো না।
সর্বসাধারণ মাস্ক না পড়াসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলায় হু-হু করে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। গত এক সপ্তাহে আশাতীতভাবে করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪০০ জনে। এর মধ্যে সিটি কর্পোরেশন এবং সদর উপজেলায়ই এর সংখ্যা ৮০০ জন। ইতিমধ্যেই মারা গেছে ১৬ জন।
এমন পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত নগরবাসী। কিন্তু উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি। বাড়ছে সামাজিক দূরত্ব না মানার প্রতিযোগিতা। চলার পথ, দোকানপাট, পাড়া-মহল্লার মানুষের মধ্যে বালাই নেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার। যাদের প্রয়োজনে বের হতে হচ্ছে, তারা নিজেকে ছেড়ে দিয়েছেন ভাগ্যের হাতে। রাস্তায় মানুষের ভিড় এড়িয়ে চলতে পারছেন না তারা।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি অ্যাডভোকেট এমদাদুল হক মিল্লাত জানান, স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণেই প্রতিদিন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ ও আক্রান্তের সংখ্যা।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, একটি বিভাগীয় শহর, যেখানে সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ রয়েছে, সদর উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ, সিভিল সার্জন অফিসসহ বিভাগীয় স্বাস্থ্য বিভাগ রয়েছে। সেই শহরে করোনায় আক্রান্তদের জন্য একটি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস নেই। এটা ভাবা যায় না। তিনি দ্রুততম সময়ের মধ্যে করোনা রোগীদের জন্য একটি অ্যাম্বুলেন্স ও নমুনা সংগ্রহের জন্য সিটি কর্পোরেশনসহ একাধিক বুথ স্থাপনের দাবি জানান।
একই সুরে কথা বলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল। তিনি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে মানুষকে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সহযোগিতা কামনা করেন।
চেম্বার অব কমার্সের সিনিয়র সহ-সভাপতি শংকর সাহা জানান, জেলায় চিহ্নিত এলাকাগুলোকে রেড জোন হিসেবে ঘোষণার মাধ্যমে চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করার পাশাপাশি সংক্রমিত রোগীর সংস্পর্শে আসা স্বজনদেরও দ্রুততম সময়ে নমুনা পরীক্ষা করার দাবি জানান। তিনি বলেন, দিনে এবং গভীর রাত পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় চায়ের দোকানে বসে আড্ডা চলছে। সামাজিক দূরত্ব তো দূরে থাক, মুখে মাস্কটি পর্যন্ত নেই।
করোনা রোগীদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে একটি অ্যাম্বুলেন্সের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে সিভিল সার্জন ডা. এবিএম মসিউল আলম যুগান্তরকে জানান, খুব শিগগিরই ব্যবস্থা করা হবে।
জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান জানান, জেলায় অধিক সংক্রমিত এলাকাগুলো ইতিমধ্যেই চিহ্নিত করা হয়েছে। জোন ম্যাপিং নিয়ে গঠিত কমিটি কাজ করছে। সিটি কর্পোরেশন থেকে সিদ্ধান্ত পেলে খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যে এলাকাভিত্তিক রেড বা ইয়োলো জোন নির্ধারণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উৎসঃ যুগান্তর