ভারত যদি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে তাহলে তাদের পরিণতি আরো ভয়াবহ হবে বলে সর্তক করে দিয়েছে চীন।
চীন বলছে, ভারতের ভেতরে চীনা বিরোধী উত্তাপ যত ছড়িয়ে পড়ুক না কেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী চাইবেন চীনের সঙ্গে কোনো ধরণের সংঘাতে না জড়াতে।
চীন সরকারের মুখপত্র হিসেবে পরিচিত দেশটির সরকারি সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমস এ ধরণের একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যার হেডলাইন হচ্ছে ‘ভারত জানে চীনের সঙ্গে যুদ্ধে পারা যাবে না।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, গালওয়ান উপত্যকায় সংঘর্ষের পরে, ভারতের অভ্যন্তরে চীন বিরোধী মনোভাব ও জাতীয়তাবাদ তীব্রভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে চীনা বিশ্লেষক ও ভারতের কিছু মানুষ যৌক্তিকভাবে সতর্ক করেছে যে, নয়াদিল্লীকে নিজেদের ঘরের জাতীয়তাবাদকে শীতল করতে হবে।
১৯৬২ সালে প্রথম ভারত-চীন যুদ্ধ হয়। সীমানা নিয়ে বিরোধ থেকে এই যুদ্ধের সূত্রপাত। যুদ্ধে চীনের কাছে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয় ভারত। সেই কথা প্রতিবেদনে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়।
বিশ্লেষকদের বরাতে বলা হয়, চীনের সঙ্গে ১৯৬২ সালে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে ভারত। বর্তমানে নতুন করে আবার সংকট তৈরি হচ্ছে। ভারত যদি এটি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে, আর এতে নতুন করে যদি যুদ্ধ শুরু হয়, তাহলে তার চেয়ে বেশি লাঞ্ছিত হবে ভারত।
এদিকে গত শুক্রবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, ‘দেশ রক্ষায় তার সরকার সেনাবাহিনীকে যে কোনও পদক্ষেপ নিতে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছে।’
শুধু তাই নয়, চীনের প্রতি যে মোদীর নমনীয়ভাব রয়েছে তা প্রতিবেদনে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়।
রয়টার্সের বরাতে বলা হয়, গালওয়ান উপত্যকার কথা উল্লেখ করে মোদী বলেছিলেন, ‘কেউ আমাদের সীমান্তে প্রবেশ করেনি। আমাদের সীমান্তে কেউই নেই।’
অথচ ১৫ জুন রাতে লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় চীনের সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ভারতের ২০ জন সৈন্য নিহত হয়। এছাড়া এতে আহত হয় আরো ৭০ জনের বেশি। তবে চীন ওই সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত নিজেদের কোনও সৈন্য হতাহত হয়েছে কিনা তা পরিষ্কার করেনি।
চীনা পর্যবেক্ষকরা বলেছেন, মোদী আসলে চাইছেন জাতীয়তাবাদী ও কট্টরপন্থীদের বোঝাতে। কারণ তিনি বুঝতে পেরেছেন যে, তার দেশ চীনের সঙ্গে আর বিরোধ করে উঠতে পারবে না। তাই তিনিও নিজে উত্তেজনা প্রশমিত করার চেষ্টা করছেন।
সাংহাইয়ের ফুদান বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের অধ্যাপক লিন মিনবাং বলেছেন, ‘মোদীর এই মন্তব্যগুলো উত্তেজনা লাঘব করতে সহায়ক হবে।’
বেইজিংভিত্তিক সামরিক বিশেষজ্ঞ ওয়েই দোংক্সু বলেছেন, ‘ভারতীয় সেনাবাহিনীকে পদক্ষেপ নিতে মোদী যে কথা বলেছেন, সেটা আসলে তার দেশের জনগণকে সন্তুষ্ট করা ও সৈন্যদের মনোবল বাড়ানোর কৌশল।’
এই সামরিক বিশেষজ্ঞ আরো বলেন, ‘কেবল সামরিক দিক দিয়ে নয়, সামগ্রিক এবং আন্তর্জাতিক প্রভাবের ক্ষেত্রেও চীনের ক্ষমতা ভারতের চেয়ে অনেক বেশি।’
এখানেই শেষ নয়, পাকিস্তানকে জড়িয়ে ভারতের প্রতি হুঁশিয়ারিও দিয়েছে বেইজিং। চীন সরকারের মুখপত্র গ্লোবাল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তান এবং অন্যান্য প্রতিবেশীদের সঙ্গে যা করে ভারত, চীনের সঙ্গে তা করা উচিত হবে না।
এখানে আসলে পাকিস্তানে ভারতের সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের কথা উল্লেখ করা হয়।
গ্লোবাল টাইমসে ভারতকে সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়েছে, বেইজিংয়ের সঙ্গে একই ধরনের কোনও কিছু করা হলে তা ধ্বংসাত্মক ফল ডেকে আনবে।
সাংহাইয়ের অধ্যাপক লিন মিনবাং বলেন, ‘চীন কতটা শক্তিশালী, তা ভারত সরকার ও তাদের সামরিক নেতারা বোঝেন। সুতরাং তারা কিছু কঠোর কথা বলতে পারেন। তবে আমাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার কোনো সাহস নেই।