আহাম্মদ সগীর চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি: অত্যন্ত দক্ষ ও বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়ে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা থানাধীন মোহাম্মদপুর এলাকায় চাঞ্চল্যকর মিম আক্তার মঞ্জুরা হত্যা মামলার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। বোনকে হত্যার পর নিজেই অপহরণের নাটক সাজান বড় ভাই আলমগীর কবীর। স্থানীয়দের সহযোগিতায় ভর্তি হন হাসপাতালে।
পুলিশের হাতে গ্রেফতারের পর তিনি বিজ্ঞ আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি প্রদান করেছেন। উদ্ধার করা হয়েছে হত্যার কাজে ব্যবহৃত ধারালো দা এবং রক্তমাখা জামাকাপড়। গ্রেফতারকৃত আলমগীর কবীর (৩২) দর্শনা পৌরশহরের মোহাম্মদপুর এলাকার মৃত আরমান আলীর ছেলে। গত রবিবার ভোরে দর্শনা পৌরশহরের মোহাম্মদপুর এলাকায় বাড়ির অদূরে একটি বেগুনক্ষেত থেকে মিম আক্তার মঞ্জুরা (২৮) নামের এক নারীর মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। এর আগে শনিবার রাতে বাড়ির পাশ্ববর্তী মাঠের মধ্য থেকে আলমগীরকে হাত-পা বাঁধা ও মাথায় সামান্য আঘাতপ্রাপ্ত অবস্থায় উদ্ধার করেন স্থানীয় লোকজন। ভর্তি করা হয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। স্থানীয়দের মাধ্যমে জানা যায়, শনিবার রাত ৮টার দিকে তাদের ভাই-বোন উভয়কেই জোরপূর্বক বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। হত্যার কথা শুনে রবিবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন চুয়াডাঙ্গা জেলার পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল-মামুন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) নাজিম উদ্দীন আল আজাদ, সহকারী পুলিশ সুপার (দামুড়হুদা সার্কেল) জাকিয়া সুলতানাসহ জেলা পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ। এছাড়া ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন সিআইডি, পিবিআই ও ডিবির সদস্যরা। পরবর্তীতে নিহতের স্বামী সুরুজ বাদী হয়ে দর্শনা থানায় দায়ের করেন মামলা। ঘটনার পরপরই হত্যার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন ও আসামি গ্রেফতার করতে জেলা গোয়েন্দা শাখা ও দর্শনা থানাকে নির্দেশ প্রদান করেন পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল-মামুন। নির্দেশ পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) নাজিম উদ্দীন আল আজাদ, সহকারী পুলিশ সুপার (দামুড়হুদা সার্কেল) জাকিয়া সুলতানার সহযোগিতায় জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) অফিসার ইনচার্জ ফেরদৌস ওয়াহিদের নেতৃত্বে ডিবির এসআই শহিদুল বাশার, সাজ্জাদ হেসেন মুহিদ হাসান ও এএসআই রজিুবল হক সঙ্গীয় ফোর্সসহ মামলার বাদী ও আশপাশের লোকজনের বক্তব্য পর্যালোচনা করে নিহত মিম আক্তার মঞ্জুরার বড় ভাই আলমগীর কবীরকে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে আলমগীর স্বীকার করেন যে, ভিকটিম মিম আক্তার মঞ্জুরা তার আপন ছোট বোন। ভিকটিমের বিবাহের পর থেকেই তার স্বামীসহ একত্রে তাদের বাড়িতে বসবাস করতেন। ভিকটিম তার আপন খালাতো বোনের স্বামীর সাথে পরকিয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। আলমগীর তাকে পরকিয়া থেকে ফিরে আসতে বারবার সর্তক করেন। কিন্তু ভিকটিম প্রেমের সম্পর্ক থেকে ফিরে আসতে নারাজ এবং প্রতিনিয়ত মোবাইল ফোনে কথা বলতে থাকেন। আলমগীর রাগের বশবর্তী হয়ে ভিকটিম মিম আক্তার মঞ্জুরাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেন।
পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক গত শনিবার (২১শে অক্টোবর ২০২৩ খ্রি.) রাত আনুমানিক সাড়ে ৭টার সময় ভিকটিমকে কৌশলে বাড়ির পাশের আমবাগানে ডেকে নিয়ে যান এবং কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে ভিকটিমের নিজের ওড়না গলায় পেচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন এবং লাশ বেগুন ক্ষেতে নিয়ে গিয়ে ধারালো দা দিয়ে গলাকেটে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। পরবর্তীতে ঘটনা অন্যদিক প্রবাহিত করার জন্য আলমগীর উক্ত দা দিয়ে নিজের মাথায় তিনটি পোচ দেন এবং আমগাছে থাকা রশি দিয়ে নিজে নিজেই হাত-পা বেঁধে চিৎকার করতে থাকেন। স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করলে উক্ত অপহরণের নাটক সাজিয়ে বিভ্রান্ত করেন। বর্ণিত ঘটনার বিষয়ে আসামি বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছেন।