জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জনবন্ধু গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি বলেছেন, সংবিধান ও তত্বাবধায়ক সরকার বুঝিনা, সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন ব্যবস্থা সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিতে চাই। যাতে নির্বাচনে সরকার কোন প্রভাব বিস্তার করতে না পারে। আমরা ফর্মুলা দিতে পারি, সকল দল থেকে ফর্মুলা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। নির্বাচন ব্যবস্থা অবশ্যই সরকারের প্রভাবমুক্ত করতে হবে। বর্তমান সরকারের অধীনে ইলেকশন নয় সিলেকশন হতে পারে। বর্তমান সরকার দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা তছনছ করে রাজনৈতিক সংস্কৃতি ধংস করেছে। বর্তমান সরকার একদলীয় সরকার ব্যবস্থা কায়েম করতে চাচ্ছে। পেশাদার ও ব্যবসায়ী সংগঠন গুলোতে এখন আর নির্বাচন হয় না, সিলেকশন করে দেয়া হচ্ছে। গণতান্ত্রিক ধারা ধংস করে কর্তৃত্ববাদী এক নায়কতন্ত্র চালু করেছে। আগামী নির্বাচনেও যদি এভাবে চলতে থাকে তাহলে আর রাজনীতি বা রাজনৈতিক দল থাকবে না। দেশ এক নেতার অধিনে চলে যাবে, এদলীয় শাসন ব্যবস্থা চিরস্থায়ী করা হবে। দেশের মানুষ তাদের অধিকার হারিয়ে ফেলেছে, এভাবে চলতে থাকলে দেশের মানুষের অধিকার বলতে কিছুই থাকবে না।
আজ দুপুরে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এর বনানীস্থ কার্যালয় মিলনায়তে ইঞ্জিনিয়ার লিয়াকত আলীর নেতৃত্বে শতাধিক নেতা-কর্মী জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এর হাতে ফুল দিয়ে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। তাদের স্বাগত জানিয়ে দেয়া বক্তৃতায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এ কথা বলেন।
এসময় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের আরো বলেন, সরকার বলেছে সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। সরকার বলছে তাদের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব। কিন্তু সরকার ছাড়া সকল রাজনৈতিক শক্তি ও সাধারণ মানুষ বলছে দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে বিশ্ববাসী দেখেছে দলীয় সরকারের অধীনে কেমন নির্বাচন হয়। এই নির্বাচনে জনগণের কোন সম্পৃক্ততা ছিলো না। সরকার বলছে ১১ শতাংশ ভোট পড়েছে, সাধারণ মানুষের ধারণা শতকারা ৫ ভাগ ভোটও সাধারণ মানুষ দেয়নি। ভোট যা পড়েছে তার প্রায় সবই তারা নিজেরাই দিয়েছে। জনগণ এই ভোটের ্ওপর আস্থা রাখেনি তাই তারা ভোটেও অংশ নেয়নি। নির্লজ্জভাবে এক প্রার্থীকে মেরে, এজেন্টদের বের করে দিয়ে নির্বাচনকে কলুষিত করেছে। সারাবিশে^র কাছে প্রমাণ হয়েছে বর্তমান সরকারের অধীনে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কেমন হবে। ঢাকা-১৭ আসনের নির্বাচনের পর নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বলার মুখ সরকারের নেই। তিনি বলেন, আন্দোলনে রাস্তায় নামলে নির্যাতন করা হচ্ছে। সরকার বিরোধীদের দমন করতে সব কিছুই করছে। মানুষকে মানুষ মনে করে না, বিরোধীদের ওপর পাখির মত গুলি করা হয়। বর্তমান সরকারের দমন নীতিতে স্বাভাবিক রাজনৈতিক শক্তির টিকে থাকা সম্ভব নয়। তাই অর্থ ও জনবল না থাকলে মাঠে টিকে থাকা দূরুহ হয়ে পড়েছে। জাতীয় পার্টিকে সব চেয়ে বেশি দুর্বল করেছে আওয়ামী লীগ। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসাতে সমর্থন দিয়েছিলো জাতীয় পার্টি। তারপর থেকে আওয়ামী লীগ সব সময় জাতীয় পার্টিতে বিভক্তি সৃষ্টি করে রেখেছে। ২০১৪ সালের পর থেকে জাতীয় পার্টির মধ্যে একটি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে। জাতীয় পার্টির স্বাভাবিক কর্মকান্ড বিঘ্নিত করেছে আওয়ামী লীগ। এ কারণে, জাতীয় পার্টি অনেকটা দুর্বল হয়েছে। আমরা এই অবস্থা থেকে বের হতে চাই।
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের আরো বলেন, নিজেদের একটি দেশের জন্য স্বাধীনতা সংগ্রাম হয়েছিলো। বীর শহীদরা জীবন দিয়ে একটি দেশ সৃষ্টি করেছে, যে দেশের মালিক হবে সাধারণ জনগণ। তারা প্রতিনিধি নির্বাচন করে দেশ পরিচালনা করবে। যদি প্রতিনিধিরা জনগণের ইচ্ছে মত দেশ চালাতে ব্যর্থ হয় তাহলে ভোটের মাধ্যমে আবারো প্রতিনিধি পরির্বতন করবে সাধারণ মানুষ। এই হচ্ছে দেশের মালিকানা। দেশের মালিকরা প্রতিনিধিদের সমালোচনা করবে, এটা অধিকার নয়, এটি জনগণের কর্তব্য। মানুষ যদি সরকারের ভয়ে কথা বলতে না পারে, সেই সরকার জনগণের সরকার নয়। আমরা জনগণের ভোটে জনগনের সরকার চাই। একটি সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থা চাই আমরা। জনগণের পাশে আমাদের থাকতে হবে। সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে আমরা সাধারণ মানুষের পক্ষে থাকবো। জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান আরো বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনীতি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। দেশের সামনে অমানিশার অন্ধকার। কী হবে তা কেউ জানে না। সবার জিজ্ঞেসা কী হচ্ছে? কী হবে? আমেরিকাসহ প্রায় সকল বিদেশী বন্ধুরা জানতে চায় দেশে কী হতে যাচ্ছে? তিনি উল্লেখ করে বলেন, ১৯৯১ সালে সরকারের অধীনে নির্বাচন না করার অন্দোলনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াতসহ সবাই ছিলো। তখন আন্দোলন হয়েছিলো জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে। জনগণের প্রত্যাশার কথা বিবেচনা করে সংবিধান অনুযায়ী বৈধ সরকার হিসেবে জাতীয় পার্টি তখন ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিলো। যদিও সেই নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী হয়নি। আবার, ১৯৯৬ সালে তত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত সহ সবাই আন্দোলন করেছিলো। তখন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন নির্বাচনের জন্য তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চিরস্থায়ী করতে হবে। তখন তিনি বলেছিলেন কোন সরকারের অধীনেই নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না। ২০০৭ সালে তত্বাবধায়ক সরকার সংবিধান অনুযায়ী ছিলো কিন্তু বিএনপি নির্বাচনকে কলুষিত করতে চেয়েছিলো। তখন আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত একত্রিত হয়ে আন্দোলন করেছিলো। এরপর ওয়ান-ইলেভেন এসে যে সরকার গঠন হয়েছিলো তাও সংবিধান অনুযায়ী হয়নি। তখন দুই বছর পর নির্বাচন হয়েছিলো তাতেও সংবিধান লংঘন করা হয়েছিলো। পরবর্তীতে সংসদে এগুলোর বৈধতা দেয়া হয়েছে। কিন্তু দুই বছর পর যে নির্বাচন হলো তা এখনো বৈধতা পায়নি। আমরা মনে করি, জনগণ যেটি গ্রহণ করে সেটি অবশ্যই বৈধ, সেখানে সংবিধানের দোহাই দিয়ে লাভ নেই। যেটি জনগণের স্বার্থে এবং জনগণ মেনে নেয় তাতে অবজেকশন দেয়ার কিছু নেই। আমরা সংবিধানের বিরোধী নই, কিন্তু জনগণের ভোটের নির্বাচন চাই।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, পার্টির মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুল হক চুন্নু এমপি। টাঙ্গাইল জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আব্দুস সালাম চাকলাদার এর সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন টাঙ্গাইল জেলা সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মোজাম্মেল হক, যোগদানকারীদের মধ্যে সৈয়দ শামসুদ্দোহা জুবায়ের, আব্দুল আজিজ। উপস্থিত ছিলেন, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ইঞ্জিনিয়ার সিরাজুল হক, গোলাম রাব্বানী, মোঃ খলিলুর রহমান খলিল, ভাইস চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আহমেদ, জসীম উদ্দিন ভূঁইয়া, সম্পাদকমন্ডলীর হেলাল উদ্দিন, এমএ রাজ্জাক খান, ইঞ্জিনিয়ার এলাহান উদ্দিন, যুগ্ম সম্পাদকমন্ডলীর মাহমুদ আলম, সমরেশ মন্ডল মানিক, কেন্দ্রীয় সদস্য শেখ আজহার, আব্দুল কাদের কদর, রাশেদ নিজাম, আবু মুসা সরকার, শফিকুল ইসলাম তপন, সোহেল রহমান। রেজাউল করিমের সঞ্চালনায় এই অনুষ্ঠানে লিয়াকত আলীর নেতৃত্বে কালীহাতি উপজেলার শরীফ সিদ্দিকী, আব্দুর রহিম বাদশাহ, ইকবাল হোসেন রিপন, মোঃ রমজান আলী, স্বপন সিদ্দিকী সহ শতাধিক নেতাকর্মী জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেন।