‘বাবাকে দেখি না ১০ বছর হলো। আমি আমার বাবাকে দেখতে চাই। বাবা দিবসে আমি আমার বাবাকে নিয়ে ঘুরতে যেতে পারি না। বাবাকে ফেরত চাই।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী নিখোঁজ কাওসার হোসেনের মেয়ে লামিয়া।
সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘ভয়েস অব ভিকটিম ফ্যামিলি’ উদ্যোগে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। এখানে কথা বলে লামিয়া। ‘পুলিশ হেফাজতে’ মারা যাওয়া এবং বিএনপির নিখোঁজ নেতাকর্মীদের স্বজনরা মানববন্ধনে অংশ নেন।
এই কর্মসূচিতে বরিশালের মো. ইউনূস বলেন, ‘আমার কোল যারা খালি করেছে, বিশ্বের কাছে তাদের বিচার চাই। তারা না করলেও আল্লাহ বিচার করবে।’ তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে রেজাউল করিম ছিলেন শিক্ষানবিশ আইনজীবী। পুলিশ আমার ছেলেকে মিথ্যা মামলা দিয়ে অত্যাচার করে মেরে ফেলেছে।
এমনভাবে মারা হয়েছে যে, অসুস্থ হয়ে গেলে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের বিছানা রক্তে ভেসে যায়। সেখানে মারা যায় ছেলে। এরপর মামলা করি। কিন্তু বিচার পাইনি।’
হাফিজা আক্তার নামে আরেকজন বলেন, ‘আমার স্বামী পিরোজপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান পুলিশি নির্যাতনে মারা গেছেন। অপরাধ-তিনি বিএনপি করতেন। যদি বিএনপি করা অপরাধ হয়, তাহলে দেশে কেন দুই দল? এক দল থাকাই তো দরকার।’
ছাত্রদল নেতা মাহবুবুর রহমান বাপ্পির বোন ঝুমুর বলেন, ‘রাজনীতি করার অপরাধে আমার ভাইকে মেরে ফেলা হয়েছে। রাজনীতি করা ছাড়া আমার ভাইয়ের কোনো দোষ ছিল না?’
ছাত্রদলের নেতা নুরুল আলম নুরুর স্ত্রী বলেন, ‘আমার স্বামী নুরুল আলম চট্টগ্রাম জেলা ছাত্রদলের নেতা ছিলেন। ২০১৭ সালের মার্চ মাসে তাকে তুলে নেওয়া হয়। একদিন পর লাশ কর্ণফুলী নদীতে পাওয়া যায়। আমরা এর বিচার না দেখে যেতে পারলেও সন্তানরা যেন বিচার দেখে যেতে পারে। আমি আমার স্বামীর হত্যার বিচার চাই।’
রাজধানীর লালবাগের বিএনপি নেতা আনোয়ার হোসেনের ছেলে আনান হোসেন বলেন, ‘আমার বাবাকে ধরে নিয়ে নির্যাতন করে হাসপাতালে ভর্তি করে। নির্যাতনের কারণে চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তিনি ভালো চিকিৎসাও পাননি। বাবা ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। আমি বাবা হত্যার বিচার চাই।’
নারায়ণগঞ্জের জাহিদ খন্দকার অভিযোগ করেন, ‘গত বছরের ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ করে আমার ভাই ওয়াদুদ খন্দকারকে ধরে নিয়ে নির্যাতন করে মেরে ফেলা হয়। ভাই একটি দোকান চালাতেন। তিনি বিএনপির সমর্থক ছিলেন। আমার মা আজ সন্তানহারা, বোন আজ ভাইহারা, ভাবী আজ স্বামীহারা। আমি আমার ভাইয়ের হত্যার বিচার চাই।’