তিমির বনিক, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের শহরের উপকন্ঠে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে জগন্নাথপুর এলাকায় শীঘ্রই নির্মাণ কাজ শুরু হতে যাচ্ছে সরকারের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সংস্কৃতি কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের অধিনে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে চার তলাবিশিষ্ট আইকনিক জেলা মডেল মসজিদ। ইতিমধ্যে মসজিদের নকশা চুড়ান্ত করা ছাড়াও প্রকল্প বাস্তবায়নের সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারও বুঝে নিয়েছেন কাজের দ্বায়িত্ব। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে চলতি মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে এর নির্মাণ কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মার্ক বিল্ডার্স লিমিটেড। এতে মসজিদটির নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে মোট ১৭৪৩.৬৮ লক্ষ টাকা।
গণপূর্ত বিভাগের অধীনে মসজিদ নির্মাণ প্রকল্পের দ্বায়িত্ব প্রাপ্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঢাকার মার্ক বিল্ডার্স এর প্রকৌশলী জাকির হোসেন জানান, মসজিদটির নির্মাণ কাজ চলতি মাসে শুরু হয়ে ২০২৪ সালের জুনে শেষ হবার কথা রয়েছে। সেই অনুযায়ী আমাদের প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করবে। প্রায় ৪৫ শতাংশ জমির উপর ১১০ ফুট প্রশস্ত ও ১৭০ ফুট দৈর্ঘ্য মসজিদটির নির্মাণ কাজের শুরুতে মাটি ভরাট, শ্রমিকদের আবাসন, বিদ্যুৎ সংযোগসহ আনুষঙ্গিক কাজ শুরু করা হবে। এসব কাজ সম্পন্ন হলেই শুরু হবে মসজিদ নির্মাণের মূল কাজ।
নির্মাণাধীন মসজিদটির একদিকে বিশাল হাওর আর অন্যদিকে উঁচু-নিচু পাহাড়ি টিলা ও সবুজ বন। বর্ষায় হাওরের থৈ থৈ পানিতে ওই এলাকার প্রকৃতিতে নতুন এক আবহ তৈরি হবে। ফলে পাল্টে যাবে পুরো এলাকার দৃশ্য। দূরপাল্লার গাড়ি থেকে উপভোগ করা যাবে মসজিদটির শৈল্পীক কারুকাজ সম্বলিত অপার সৌন্দর্য। এক কথায় প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বদলে যাবে পুরো এলাকার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক চিত্র। এতো দিন ভাড়ায় থাকা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নিজস্ব কার্যালয়ও থাকবে এখানে। জেলা জুড়ে ইফার সব কার্যক্রমও পরিচালিত হবে এখান থেকে। মসজিদ ভিত্তিক গণশিক্ষা ও ইমাম প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে সব কার্যক্রমেও আসবে গতিশীলতা।
গণপূর্ত বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, চারতলা বিশিষ্ট জেলা মডেল মসজিদটিতে থাকবে বিশাল কার পার্কিং, মৃতদেহ গোসল কক্ষ, লাইব্রেরী গবেষনা ও দীনি দাওয়া কার্যক্রম, পবিত্র কুরআন হেফজ, শিশু শিক্ষা, অতিথিশালা, বিদেশী পর্যটকদের আবাসন, হজ্জযাত্রীদের নিবন্ধন, প্রশিক্ষণ, ইমামদের প্রশিক্ষণ ইত্যাদি ব্যবস্থা রয়েছে।
ইমাম-মুয়াজ্জিনের আবাসনসহ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্যও অফিসের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়া জেনারেটর কক্ষ, শারীরিক প্রতিবন্ধীদের নামাজের আলাদা কক্ষ, রান্না ঘর, পুরুষ-মহিলাদের পৃথক নামাজের স্থান, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অফিস, অজুখানা। থাকবে দৃষ্টিনন্দন সীমানা প্রাচীর ও একটি বিশাল সুউচ্চ মিনার।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার জন্য শহরের টিবি হাসপাতাল সড়কের সার্কিট হাউজের আশপাশে সদর মডেল মসজিদ নির্মাণের জন্য জমি নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মৌলভীবাজার গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহমুদুল হাসান। এছাড়াও মসজিদ নির্মাণ প্রকল্প চলমান রয়েছে জেলার রাজনগর, কমলগঞ্জ ও বড়লেখা উপজেলায়। এর বাহিরে কুলাউড়া, জুড়ি ও শ্রীমঙ্গল উপজেলায় একটি করে মডেল মসজিদ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পটিও প্রক্রিয়াধীন।
এসব মসজিদের নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় বহন করবে বাংলাদেশ সরকার। সরকারের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধিনে দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। এসব মসজিদ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপনে বাংলাদেশ সরকার ৮ হাজার ৭২২ কোটি টাকা খরচ করবে বলে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন মৌলভীবাজার জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. আনোয়ারুল কাদের জানান, জেলা মডেল মসজিদ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সেখানে নানা সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতের ফলে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের চলমান কার্যক্রমেও আসবে ব্যাপক পরিবর্তন। তিনি জানান, মসজিদ প্রকল্প বাস্তবায়নের দ্বায়িত্ব যেহেতু গণপূর্ত বিভাগের তাই নিমার্ণ কাজের অগ্রগতি দেখবালের দ্বায়িত্বও তাদের।