শাহ সুমন, বানিয়াচং(হবিগঞ্জ)প্রতিনিধিঃ হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে অবৈধ দখলদারদের দখল আর পরিবেশ বিধ্বংসী কার্যক্রমে ঐতিহাসিক সাগরদিঘী সৌন্দর্য্য হারাচ্ছে প্রতিনিয়ত।সুপ্রীম কোর্টের রিভিউ শুনানী শেষে সরকারের পক্ষে রায় আসলেই আলোর মুখ দেখতে পারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পর্যটন স্পট ঘোষনার বাস্তবায়ন।স্থানীয় জনসাধারণ ও ঐতিহাসিকদের মতে,দ্বাদশ শতাব্দীতে রাজা পদ্মনাভ প্রজাদের জলের কষ্ট দূর করতে দিঘীটি খনন করেছিলেন।
রাজা পদ্মনাভের স্ত্রী রাণী কমলাবতীর নামানুসারে স্থানীয়দের নিকট কমলাবতীর দিঘী নামে পরিচিত এই দিঘীটি দেখতে প্রতিদিনই দেশী-বিদেশী পর্যটক ভিড় করেন।৬৬ একর আয়তনের বিশাল এই দিঘীটিকে কেন্দ্র করে ১৯৯৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি পর্যটন স্পট করার ঘোষনা দিয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনার পরপর দিঘীর চারপারের কতিপয় অবৈধ দখলবাজদের দায়ের করা স্বত্ত¡ মামলার কারনে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনার বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় নাই।শুধূ তাই নয়, সাগরদিঘীটি এই দখলবাজ চক্র দীর্ঘদিন অবৈধভাবে লীজ দিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাত করেছে। যদিও বর্তমানে সরকার লীজ দিয়েছে।
সাগরদিঘীর পাড়ের জমি অবৈধভাবে দখল করতে গোটা কয়েকটি পরিবার একতাবদ্ধ হয়ে পাকা সীমানা প্রাচীর তুলে, পাকা ঘর নির্মাণ করে বসবাস করছে।
এক সময় সাগরদিঘীর চারপাড়ে কোন গাছপালা ও স্থাপনা না থাকায় দিঘীটির প্রকৃত আয়তন,অবস্থান ও সৌন্দর্য দৃশ্যমান ছিল।
বর্তমানে পশ্চিম পাড়ের কিছু জায়গা খোলা থাকায় কেবলমাত্র ওই স্থান দিয়ে দিঘী দেখতে হয়। এতে করে পুরো সৌন্দর্য্য উপভোগ করা যায়না।এছাড়া দখলবাজদের গৃহস্থালী কাজের বর্জ্য ও পয়োবর্জ্য সরাসরি ড্রেন দিয়ে ওই দিঘীর পানিতে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয় পোল্ট্রি খামারিদের গাড়ির বিষ্টা ও নানান রকম ক্ষতিকর বস্তুর ধোয়ামোছার ময়লা-আবর্জনা এই দিঘীর টলটলে জলে মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে যখন-তখন। একদিকে দখলদারদের অবৈধ বসবাস করা সহ তাদের দৌরাত্ম্য বাড়ছে। অন্যদিকে তাদেরই কারণে পরিবেশের ক্ষতি সহ দিঘীর সৌন্দর্য্যহানি হচ্ছে।
সূত্রে জানা যায়,২০০০ সালে সাগরদিঘীর চারপাড়ের বাসিন্দাদের পক্ষে জাহাঙ্গীর আলম গং বাদী হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে স্বত্ত¡ মামলা দায়ের করেন। মামলার শুনানী শেষে চারপাড়ের বাসিন্দাদের পক্ষে রায় প্রদান করা হয়। পরে এই রায়ের বিরুদ্ধে সরকার পক্ষ ২০০৬ সালে আপীল করে। আপীলের রায় সরকারের পক্ষে আসে।
২০০৭ সালের ১১ অক্টোবর তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা জজ সফিউল্লা এ রায় প্রদান করেন। বাদীপক্ষ এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট চেম্বার জজ আদালতে রিভিশন দাখিল করেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক বাদী পক্ষকে দিঘীর আলো-বাতাস ও পানি ব্যাবহারের অনুমতি দেন। পরে এই আদেশের বিরুদ্ধে সরকার পক্ষ আপীল করলে ২০২২ সালের ২৬ জুলাই মহামান্য হাইকোর্ট ওই আদেশটি বাতিল করে দিঘীটি সরকার পক্ষের ইজারা দিতে বাধা নেই বলে আদেশ প্রদান করেন।সেই আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রীম কোর্টের আপীল ডিভিশনে রিভিউ করেন এলাকাবাসীর পক্ষে জাহাঙ্গীর আলম গং।
বর্তমানে দিঘীটি সরকার লীজ প্রদান করেছে। মামলার সাথে জড়িত সরকারের পক্ষের লোকজন মনে করছেন সুপ্রীম কোর্টের চূড়ান্ত রায় সরকার পক্ষের অনুকূলেই থাকবে।
তখন প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস বাস্তবায়নে আর কোন বাধা থাকবেনা।ইতিমধ্যে দিঘীর পশ্চিমপাড়ে উপজেলা পরিষদ থেকে একটি দৃষ্টিনন্দন ঘাটলা নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে বানিয়াচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদ্মাসন সিংহ‘র সাথে আলাপকালে তিনি জানান,সাগরদিঘীর চারপাড়ের বাসিন্দারা নিজেদের মালিকানার দাবিতে মামলা করেছিলেন। যে কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস বাস্তবায়ন করা যাচ্ছিলনা। এখন যেহেতু মহামান্য সুপ্রীম কোর্টে রিভিউ আবেদন শুনানীর অপেক্ষায় রয়েছে সেহেতু,রায় ঘোষনা হলে এবং সরকারের পক্ষে রায় আসলে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস বাস্তবায়ন কাজ করতে পারবো।
হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ ব্যাপারে বলেন,সরকারের পক্ষ থেকে বর্তমানে বানিয়াচংয়ের সাগরদিঘীটি লীজ দেওয়া হয়েছে।প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বর্তমান সরকারের সময়েই যাতে বাস্তবায়ন করা যায় সেই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।