ফরিদপুর প্রতিনিধি: ফরিদপুরে সিজারিয়ান অপারেশন করতে গিয়ে সুমি আক্তার (৩০) নামে এক গৃহবধূর প্রসবকৃত বাচ্চার মৃত্যু হয়। এর একদিন পর প্রাণ যায় মায়েরও।
এমনই এক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
মারা যাওয়া গৃহবধূ গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার গেরাখালা দিঘীরপাড় এলাকার মো. বিল্লাল হোসেনের স্ত্রী বলে জানা যায়।
হাসপাতাল সূত্রে ও গৃহবধূর পরিবার জানায়, গৃহবধূ সুমি আক্তারের প্রসব বেদনা উঠলে তার স্বজনরা ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তাকে সিজার করার জন্য গতকাল বৃহস্পতিবার (৪ মে) রাতে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়।
সে সময় বলা হয় ওই গৃহবধূর গর্ভে বাচ্চা উল্টো অবস্থায় আছে এবং তার পেটে টিউমার ছিল বলে ডাক্তাররা দাবি করেন। পরে সিজার করার সময় গৃহবধূর অবস্থা সংকটপূর্ণ হলে বাচ্চা কয়েক টুকরো করে কেটে বের করা হয়।
এ সময় ওই গৃহবধূকে সংকটপূর্ণ অবস্থায় হাসপাতালটির আইসিইউতে রাখা হয়। সেখানে কয়েক ব্যাগ রক্তও দেওয়া হয়। কিন্তু, শুক্রবার (০৫ মে) বিকেল ৫টার দিকে ওই গৃহবধূর মৃত্যু হলে সন্ধ্যায় মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে রাতেই দাফন করা হয় বলে জানান গৃহবধূর স্বজনরা। তবে, স্বজনদের কোনো অভিযোগ নেই বলে সাংবাদিকদের জানান।
জানা যায়, মারা যাওয়া গৃহবধূ সুমি আক্তারের ৯ বছর বয়সী একটি শিশু সন্তান রয়েছে। তার স্বামী বিল্লাল হোসেন টাঙ্গাইলে একটি পোশাক কারখানায় শ্রমিকের কাজ করেন।
এ ব্যাপারে মারা যাওয়া গৃহবধূর স্বামী মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, তার স্ত্রীর আগে-পরে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে কিন্তু কোনো পরীক্ষার রিপোর্টে পেটে টিউমারের কথা বলা হয়নি। এমনকি ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সিজার করার আগের পরীক্ষায়ও টিউমারের কোনো কথা বলা হয়নি। যখন অপারেশন থিয়েটারে ঢুকিয়ে সিজার করা হয় তখন বলা হয় পেটে টিউমার! সঙ্গে জানানো হয় বাচ্চা গর্ভে উল্টো অবস্থায় রয়েছে। বাচ্চা বাঁচালে মা বাঁচানো যাবে না বলে জানানো হয়। পরে মা বাঁচানোর কথা বলা হলেও। বাচ্চা ও মা দু’জনেই হারিয়ে গেল! তবে এ ব্যাপারে তাদের কোনো অভিযোগ নেই বলে জানান স্বামী বিল্লাল হোসেন।
ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এনামুল হক বলেন, এ ব্যাপারে শনিবার (৬ মে) সকাল থেকে ডাক্তারদের নিয়ে আমি আমার অফিসে বসে মিটিং করেছি। জানতে চেষ্টা করছি আমাদের ডাক্তারদের কোনো অবহেলা ছিল কি না। যদি কারও কোনো অবহেলা পাওয়া যায় সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, রোগীর যেদিন সিজারিয়ান অপারেশন করা হয়, সেদিন অপারেশন শেষে হাসপাতাল থেকে পুলিশের সহযোগিতা চাওয়া হয়। তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়ে বিষয়টি জানতে চেষ্টা করি। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায় মায়ের জটিল অবস্থার কারণে বাচ্চাটি মারা গেছে। এছাড়া মা’কে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। একদিন পর ওই রোগী মারা গেলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আর পুলিশকে অবহিত করেনি। তবে নবজাতক ও মায়ের মৃত্যুর ব্যাপারে রোগীর পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো লিখিত অভিযোগ পাই, তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।