ঘুষের ১০ লাখ টাকাসহ হাতেনাতে গ্রেপ্তার রাজশাহীর উপ-কর কমিশনার মহিবুল ইসলাম ভূঁইয়াকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের কর-১ শাখার জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব নুসরাত জাহান নিসুর সই করা এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) জারিকৃত এই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সরকারি চাকরি বিধি ২০১৮ এর ৩৯ (২) ধারা অনুযায়ি ৪ এপ্রিল নিজ কার্যালয় থেকে দুর্নীতি দমন কমিশনের কাছে গ্রেপ্তারের তারিখ থেকে মুহিবুল ইসলাম ভূঁইয়াকে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
এর আগে গত মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) দুপুরে অভিযান চালিয়ে রাজশাহী কর অঞ্চলের সার্কেল-১৩-এর (বৈতনিক) উপ-কর কমিশনার মুহিবুল ইসলাম ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তার করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের সমন্বিত রাজশাহী জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান জানান, রাজশাহী নগরীর মাদারল্যান্ড ইনফার্টিলিটি সেন্টার ও হাসপাতালের মালিক ডা. ফাতেমা সিদ্দিকার পাঁচ বছরের ব্যাংকে লেনদেনের বিষয়ে কর কর্মকর্তা মুহিবুল ইসলাম ভূঁইয়া আপত্তি তোলেন। বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে গেলে তিনি ডা. ফাতেমার কাছে ৬০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। পরে তা ৫০ লাখ টাকায় রফা হয়। বিষয়টি জানিয়ে ফাতেমা সিদ্দিকা গত ২৯ মার্চ দুদকের প্রধান কার্যালয়ে একটি অভিযোগ করেন। এই অভিযোগ নিয়ে দুদকের রাজশাহী জেলা ও বিভাগীয় কার্যালয়ে যৌথভাবে কাজ করছিল। তারা উপ-কর কমিশনার মহিবুল ইসলাম ভূঁইয়ার ওপর নজরদারি করছিলেন। গত মঙ্গলবার ঘুষের প্রথম কিস্তির ১০ লাখ টাকা নিয়ে ডা. ফাতেমা সিদ্দিকা করভবনে গিয়ে উপ-কর কমিশনার মহিবুল ইসলাম ভূঁইয়ার দপ্তরে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। কর কর্মকর্তা টাকা নিয়ে তাঁর ড্রয়ারে রেখেছিলেন। এ সময় দুদকের পক্ষ থেকে ওই কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে ঘুষের ১০ লাখ টাকাসহ মহিবুল ইসলাম ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ঘটনার দিন গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ার সময় উপ-কর কমিশনার মহিবুল ইসলাম ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘নগরীর মাদারল্যান্ড ইনফার্টিলিটি সেন্টার ও হাসপাতালের মালিক ডা. ফাতেমা সিদ্দিকার ব্যাংক বিবরণীতে ২৬ কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে, যা তাঁর কর নথিতে উল্লেখ করেননি। এ বিষয় নিয়ে তিনি কাজ করছিলেন। ডা. ফাতেমা সিদ্দিকা ঘটনা ধামাচাপা দিতে পরিকল্পিতভাবে তাঁর অফিস কক্ষে দুদক কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে ঢুকে টেবিলের ওপরে টাকা রেখেছিলেন। ওই টাকা আমি ছুঁয়েও দেখিনি।’
দুদকের সমন্বিত রাজশাহী জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘উপ কর কমিশনার মহিবুল ইসলাম যে ডা. ফাতেমা সিদ্দিকার কাছে ঘুষ চেয়েছিলেন, তার প্রমাণ তাদের কাছে রয়েছে। গ্রেপ্তারের পর রাজশাহী মহানগর জজ আদালতে মহিবুল ইসলাম ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে দুদক মামলা করেছে। গত বুধবার সেই মামলার শুনানি শেষে বিচারক উপ-কর কমিশনারের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠিয়েছেন।